ভূমিদস্যু বসুন্ধরার মানিকজোড়
প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২০ ডিসেম্বর ২০২৩ ১২:২২ পিএম
আপডেট : ২০ ডিসেম্বর ২০২৩ ১২:৩০ পিএম
(বামে) মাহবুবুর রহমান তুহিন এবং (ডানে) নাজমুল আলম ভূঁইয়া।
ভূমিদস্যু বসুন্ধরার মালিক আহমেদ আকবর সোবহান ওরফে শাহ আলমের দখল আর জাল-জালিয়াতিতে ‘মানিকজোড়’ হিসেবে পরিচিত নাজমুল ও তুহিন। দুজনই বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান শাহ আলমের স্ত্রী আফরোজা বেগম ওরফে চাতকি বেগমের নিকটাত্মীয়। সরকারি খাস জমি, ভাওয়াল এস্টেটের সম্পত্তিসহ সাধারণ মানুষের ভিটেমাটি ও চাষাবাদের জমি জবরদখল করে নেওয়ার অন্যতম কারিগরও এই দুই ভূমিখেকো ‘দানব’। ভুক্তভোগী অসহায় মানুষজনকে ধরেবেঁধে এনে নির্যাতন করা, প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া, মারধর করা, জাল দলিল-দস্তাবেজ তৈরি করাই তাদের অন্যতম কাজ।
নাজমুল, যার পুরো নাম নাজমুল আলম ভূঁইয়া। তিনি মাফিয়া গডফাদার শাহ আলমের মালিকানাধীন বসুন্ধরা গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক (ইডি-ল্যান্ড)। মাহবুবুর রহমান তুহিনও বসুন্ধরা গ্রুপের আরেক নির্বাহী পরিচালক (ইডি-ল্যান্ড), যিনি ল্যান্ড ডেভেলপমেন্ট শাখার ‘প্রধান সমন্বয়ক’ হিসেবে কাজ করেন। বসুন্ধরার চেয়ারম্যান, এমডি ও চেয়ারম্যানের স্ত্রী আফরোজা বেগম ওরফে চাতকি বেগমকে নানা কুমন্ত্রণা ও কুবুদ্ধি দিয়ে এ দুজন হাজার কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। বসুন্ধরার বহু অপকর্ম, বহু অপরাধের নাটের গুরু এ দুজন। সরকারের একাধিক সংস্থাও তাদের বিষয়ে খোঁজ-খবর নিতে গিয়ে অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য খুঁজে পেয়েছে বলে জানা গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) বসুন্ধরা গ্রুপের জাল-জালিয়াতি ও অবৈধ দখল নিয়ে পৃথক দুটি অনুসন্ধান চলমান রয়েছে। ওইসব অনুসন্ধানেও বসুন্ধরা হাউজিংয়ের খাস জমি দখল, ভাওয়াল এস্টেটের জমি দখল, জাল-জালিয়াতির সঙ্গে নাজমুল ও তুহিনের বড় ধরনের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। প্রকৃত তথ্য গোপন করে ও ভুয়া অডিট রিপোর্ট তৈরি করে ব্যাংকসহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে জমা দিয়ে বসুন্ধরার শত শত কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি দেওয়া ও আত্মসাতের বিষয়ে অনুসন্ধান চালাচ্ছে দুদক। এ সংক্রান্ত দুদকের ৪ সদস্যের অনুসন্ধান দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন বিশেষ অনুসন্ধান ও তদন্ত-১-এর পরিচালক মো. ফিরোজ মাহমুদ। তার সঙ্গে টিমের সদস্য হিসেবে রয়েছেন সহকারী পরিচালক মো. সহিদুর রহমান, মো. মাহমুদুল হাসান ভূঁইয়া ও উপসহকারী পরিচালক সাজ্জাতুল হক।
এ ছাড়া বসুন্ধরা হাউজিংয়ের বিরুদ্ধে ‘জাল-জালিয়াতি ও প্রতারণার মাধ্যমে ৫০ হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি হাতিয়ে নেওয়া’ সংক্রান্ত আরেকটি অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুদকের অপর একটি টিম। এই দলের টিম লিডার হলেন দুদকের উপপরিচালক মো. মোনায়েম হোসেন। তার সঙ্গে সদস্য হিসেবে রয়েছেন সহকারী পরিচালক মো. খলিলুর রহমান সিকদার ও উপসহকারী পরিচালক আফনান জান্নাত। এই অভিযোগ অনুযায়ী ৫০ হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি হাতিয়ে নিতে বসুন্ধরা গ্রুপ নানা জালিয়াতি ও দুর্নীতির আশ্রয় নিয়েছে। তারা জালিয়াতির মাধ্যমে বসুন্ধরা আবাসিক প্রকল্পের (ইস্টওয়েস্ট প্রপার্টিজ প্রা. লিমিটেড) ‘ই’ ব্লক থেকে ‘কে’ ব্লক পর্যন্ত ৪ হাজার ৩০২ বিঘা (প্রায় ৮৬ হাজার ৪০ কাঠা) জমি দখল করে নিয়েছে। যার মূল্য প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা। একই সঙ্গে ‘এম’ ব্লক থেকে ‘পি’ ব্লক পর্যন্ত বর্ধিত এলাকায় আরও ৫০ হাজার কোটি টাকার বেশি মূল্যের জমি জাল-জালিয়াতি ও প্রতারণার মাধ্যমে অবৈধ দখল করেছে। বসুন্ধরা আবাসিক প্রকল্পে সরকারের খাস, নালা, ডোবা ও নদীসহ জমি রয়েছে ৮০০ একর (২ হাজার ৪০০ বিঘা) এবং ভাওয়াল এস্টেটের জমির পরিমাণ ২১৬ একর (৬৪৮ বিঘা)। খাস ও ভাওয়াল এস্টেটের দখল করা জমির পরিমাণ ১ হাজার ১৬ একর। এসব জমি জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে দখল করার পেছনে বড় ভূমিকা রাখেন নাজমুল ও তুহিন।
রূপগঞ্জের বড়ালু মৌজার একজন বাসিন্দা জানান, ভূমিদস্যু বসুন্ধরার ইডি নাজমুল ও তুহিনের রয়েছে বিশাল ক্যাডার বাহিনী। ল্যান্ড শাখায় তাদের কথাই আইন। সাধারণ মানুষের জমি কেড়ে নিতে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জনকে ধরে নিয়ে নির্যাতন করা, প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া, মারধর করা, জাল দলিল-দস্তাবেজ তৈরি করাসহ যাবতীয় নীলনকশার নেপথ্য কারিগর তারাই।
বসুন্ধরা গ্রুপের ভূমিদস্যুতা নিয়ে আগামীকালের পত্রিকাতেও থাকছে অনেক অজানা তথ্য সংবলিত বিশেষ প্রতিবেদন।