প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৯ ডিসেম্বর ২০২৩ ১১:১৬ এএম
আপডেট : ১৯ ডিসেম্বর ২০২৩ ১১:৪৯ এএম
রাজধানীর কালাচাঁদপুর এলাকার বাসিন্দা মনির হোসেনের মেয়ে মালিহা হোসেনের ২০০ কোটি টাকার প্লট দখল করে নিয়েছে বসুন্ধরা গ্রুপ। তিনি প্রায় দেড় একর জমি বসুন্ধরা গ্রুপের ইস্ট ওয়েস্ট প্রপার্টি ডেভেলপমেন্টের সঙ্গে এওয়াজ বদল করে ওই প্লটটির মালিকানা পান। রাজধানীর ভাটারা থানাধীন বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার আই ব্লকে গুরুত্বপূর্ণ প্লটটির অবস্থান। যার নম্বর ১১৩৬/টি। ১ একর ৭ শতাংশের প্লটটির বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় ২০০ কোটি টাকা। বসুন্ধরা গ্রুপ মালিহা হোসেনের চারটি জমি এওয়াজ বদলের মাধ্যমে দখলে নিয়ে বিক্রি করে দিলেও তার প্লটটির দখল বুঝিয়ে দিচ্ছে না। ওই জমিতে বাউন্ডারি দেয়াল দিয়ে দখল করে রেখেছেন ভূমিদস্যু বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান ওরফে শাহ আলম ও তার স্ত্রী আফরোজা বেগম ওরফে চাতকি। প্লটের দখল না পেয়ে মালিহা বিভিন্ন মহলে তদবির করলেও ভূমিদস্যুদের কবল থেকে ২০০ কোটি টাকার এই জমি উদ্ধার করতে পারছেন না।
মালিহা হোসেন প্রতিদিনের বাংলাদেশকে জানান, তিনি নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ থানাধীন বড়ালুপাড়াগাঁও, ছাতিয়ান, পশ্চিমগাঁও এবং পূর্বগাঁও মৌজায় মোট চারটি জমি বসুন্ধরা গ্রুপের সঙ্গে এওয়াজ বদল করেন। চারটি জমির মোট পরিমাণ ১ দশমিক ৪৬০৪ একর। এর বিপরীতে বসুন্ধরা গ্রুপ রাজধানীর ভাটারা মৌজায় ১ দশমিক ০৭০০ একর নাল সম্পত্তি দলিল করে দেয়। জমির এওয়াজ বদল দলিল সম্পন্ন করে নামজারি ও খাজনা পরিশোধসহ যাবতীয় দাপ্তরিক কাজ সম্পন্ন করা হয়। কিন্তু বাস্তবে তিনি জমির দখল বুঝে পাননি।
তিনি জানান, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান শাহ আলম ও তার স্ত্রী আফরোজা বেগম তার পালিত সন্ত্রাসী বাহিনীর প্রধান মাহবুবুর রহমান তুহিন ও নাজমুল আলম ভূঁইয়াকে দিয়ে ওই জমিটি দখল করে রেখেছেন। প্লটের মালিক মালিহা হোসেনকে সন্ত্রাসীরা সেখানে যেতে দিচ্ছে না। গেটে দুটি তালা ঝুলিয়ে রেখেছে। ভেতরে বাগান বানিয়ে রাখা হয়েছে। রাতদিন সন্ত্রাসীরা প্লটটির আশপাশে পাহারা দিচ্ছে। জমির দখল বুঝিয়ে দিতে বললে, সন্ত্রাসীদের পক্ষ থেকে প্রাণনাশের হুমকি পর্যন্ত দেওয়া হয়েছে।
মালিহা হোসেন বসুন্ধরা গ্রুপের সঙ্গে যে এওয়াজ বদল দলিল সম্পাদন করেন তার নম্বর ৩০৮১। নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের দলিলটি ২০২১ সালের ৩ মার্চ সম্পাদন করা হয়। দলিলের তথ্য অনুযায়ী মালিহা হোসেন রূপগঞ্জের বড়ালুপাড়াগাঁও মৌজায় শূন্য দশমিক ৪৪৬৭ একর নাল ও বোরো সম্পত্তি এওয়াজ বদল করেন। যার তৎকালীন দাম ধরা হয়েছিল ১ কোটি ৩০ লাখ টাকা। একই দলিলে রূপগঞ্জের ছাতিয়ান মৌজায় এওয়াজ বদল করা ভিটি, পুকুর ও বোরো সম্পত্তির পরিমাণ ছিল শূন্য দশমিক ৫৯২১ একর। যার তৎকালীন মূল্য ধরা হয়েছিল ১ কোটি ৭০ লাখ টাকা। একই দলিলের রূপগঞ্জের পশ্চিমগাঁও মৌজায় এওয়াজ বদল করা বোরো সম্পত্তির পরিমাণ ছিল শূন্য দশমিক ৩৪৬৬ একর। যার তৎকালীন মূল্য ধরা হয় ৯৫ লাখ টাকা। একই দলিলে রূপগঞ্জের পূর্বগাঁও মৌজার এওয়াজ বদল করা নাল সম্পত্তির পরিমাণ ছিল শূন্য দশমিক ০৭৫০ একর। যার তৎকালীন মূল্য দেখানো হয় ২৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা। চারটি মৌজায় মোট জমির পরিমাণ ছিল ১ দশমিক ৪৬০৪ একর। একইভাবে ইস্ট ওয়েস্ট প্রপার্টি সাবেক কেরানীগঞ্জ, পরবর্তী সময়ে তেজগাঁও, পরবর্তী সময়ে বাড্ডা হালে ভাটারা থানার ভাটারা মৌজায় ১ দশমিক ০৭০০ একর জমি এওয়াজ বদল করা হয়। যার মোট মূল্য ধরা হয় ৪ কোটি ১৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা।
ইস্ট ওয়েস্ট প্রপার্টি ডেভেলপমেন্ট (প্রাঃ) লিমিটেডের পক্ষে দায়িত্বপ্রাপ্ত হিসেবে মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম, মোহাম্মদ মাহবুবুল হায়দার খান, ময়নাল হোসেন চৌধুরী দলিল সম্পাদন করে দেন। এওয়াজ বদল দলিল অনুযায়ী বসুন্ধরা গ্রুপের মেসার্স ইস্ট ওয়েস্ট প্রপার্টি ডেভেলপমেন্ট (প্রাঃ) লিমিটেডের কাছ থেকে মালিহা হোসেন ভাটারা মৌজায় বসুন্ধরা আবাসিক প্রকল্পের ‘আই’ ব্লকের প্লট নং ‘১১৩৬/টি’ প্রাপ্ত হন। এই প্লটটি আবাসিক। আই ব্লকের ১১৩৬/টি প্লটের চৌহদ্দিতে বলা হয়েছে উত্তরে রাস্তা, দক্ষিণে লেক, পূর্বে রাস্তা ও পশ্চিমে লেক।
মালিহা হোসেন প্রতিদিনের বাংলাদেশকে আরও জানান, নিজের ও পরিবারের কষ্টার্জিত সম্পত্তি দিয়ে তিনি রূপগঞ্জের ওই চারটি জমি ক্রয় করেছিলেন। বসুন্ধরা গ্রুপ তাদেরকে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার আই ব্লকের ১১৩৬/টি প্লটটির সঙ্গে এওয়াজ বদল দলিলের প্রস্তাব করে। তারা সরল বিশ্বাসে এওয়াজ বদল দলিল সম্পাদন করে দেন। এরপর প্লটটির নামজারি করেন। কিন্তু বাস্তবে বসুন্ধরা গ্রুপের লোকজন তাদেরকে প্লটটির দখল বুঝিয়ে দেয়নি। প্লটে বাউন্ডারি দেয়াল দিয়ে সেটি দখল করে রেখেছে।
মালিহা বলেন, ‘বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান শাহ আলম ও তার স্ত্রী আফরোজা বেগম ওরফে চাতকির কারণে আমরা প্লটটির দখল বুঝে পাচ্ছি না। বিভিন্ন জায়গায় তাদের বিরুদ্ধে নালিশ করেও কোনো ফায়দা হয়নি। কারণ তারা বিভিন্ন দপ্তরে টাকাপয়সা দিয়ে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে রেখেছে।’ ফলে আর্থিক ও মানসিক প্রতারণার শিকার হলেও শাহ আলম ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেননি তিনি।
এলাকাবাসী অভিযোগ করেছেন, মাহবুবুর রহমান তুহিন ও নাজমুল আলম ভূঁইয়ার মাধ্যমে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার ভেতরে একটি সন্ত্রাসী বাহিনী গড়ে তুলেছে বসুন্ধরা গ্রুপ। বিভিন্ন মানুষের জমিজমা-প্লট দখলে নেওয়া, বাড়ি করতে গেলে মোটা অঙ্কের চাঁদা আদায় করা, প্রতিটি রিকশা থেকে চাঁদা ওঠানো, ময়লা ফেলার বিল তোলা, ইন্টারনেট-ডিশ বিল আদায়সহ এমন কোনো অপকর্ম নেই যে এই সন্ত্রাসী বাহিনী করে না।