প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০১ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৪:৪৭ পিএম
আপডেট : ০১ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৫:১৩ পিএম
ঢাকার কেরানীগঞ্জের মালোপাড়ায় বাবা-ছেলেকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি আরিফ ওরফে সরিফুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
বৃহস্পতিবার (৩০ নভেম্বর) মধ্যরাতে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থেকে ৩০ বছর পলাতক থাকা আরিফকে গ্রেপ্তার করা হয়।
র্যাব বলছে, ১৯৯৩ সালের ১৩ জুলাই কেরানীগঞ্জের মালোপাড়া বারিশুর বাজারে একটি মুদি দোকানে বাবা ও ছেলেকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। মামলার বিচারপ্রক্রিয়া শেষে ২০০৪ সালের ২১ জুলাই আদালত আরিফসহ পাঁচজনকে ডাবল মৃত্যুদণ্ডের রায় প্রদান করেন। ২০০৮ সালে হাইকোর্ট কর্তৃক পুনর্বিচারের জন্য মামলাটি নিম্ন আদালতে পাঠানো হয়।
নিম্ন আদালত সব বিচারিক কার্যক্রম শেষে ২০১৮ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর আরিফসহ পাঁচজনের ডাবল মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রাখেন। রায় ঘোষণার সময় আরিফ ও মাসুদ পলাতক থাকায় তাদের বিরুদ্ধে আদালত সাজা ও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।
পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তারে গোয়েন্দা নজরদারির ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার রাতে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থেকে আরিফকে গ্রেপ্তার করা হয়।
শুক্রবার (১ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
ঘটনার বর্ণনায় তিনি বলেন, ভিকটিম শরিফুল কেরানীগঞ্জের মালোপাড়া বারিশুর বাজারে মুদি দোকানের ব্যবসা করতেন। গুদারাঘাটসংলগ্ন দোকান হওয়ায় শরিফকে প্রায় সময়ই মধ্যরাত পর্যন্ত বেচাকেনা করতে হতো। তার দুই ছেলে খোকন (সে সময় বয়স ৯) ও শাহজাহান (সে সময় বয়স ১২) নিয়মিত শরিফের রাতের খাবার বাসা থেকে নিয়ে আসত এবং তারা বাবার সঙ্গে রাতের খাবার খেয়ে দোকানে পড়াশোনা করে দোকানেই ঘুমাত।
ঘটনার দিন শরিফ প্রতিদিনের মতো রাতে দোকানের বেচাকেনা শেষ করে দোকান বন্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন এবং দোকানের পেছনের অংশে তার দুই ছেলে ঘুমাচ্ছিল। তখন দোকানে আরিফ ও তার অন্য সহযোগীরা এসে সিগারেট ও অন্যান্য মালামাল জোরপূর্বক ছিনিয়ে নিলে বাগ্বিতণ্ডা হয়।
পরে তারা দোকানের ক্যাশ বাক্স থেকে নগদ টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করলে শরিফ বাধা দেন। এ সময় আরিফ ও তার সহযোগীরা ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে দেশি অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে আহত করে। চিৎকার শুনে দোকানের পেছনের অংশে ঘুমিয়ে থাকা তার দুই ছেলে বাবাকে বাঁচাতে আরিফ ও তার সহযোগীদের হাতে-পায়ে ধরে আকুতিমিনতি করতে থাকে।
কিন্তু তারা ভিকটিমের দুই সন্তানকেও দেশি অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে এবং তিনজনই মারা গেছে ভেবে ঘটনাস্থল থেকে চলে যায়।
পরদিন ভোরে স্থানীয়রা ভিকটিমের দোকান খোলা দেখে সেখানে আসে এবং দোকানের ভেতরে তিনটি নিথর দেহ পড়ে থাকতে দেখে ভিকটিমের বড়ছেলেকে খবর দেয়। বড়ছেলে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে দেখতে পায় তার বাবা শরিফ ও ছোটভাই খোকন মারা গেছেন। অন্য ভাই শাহজাহান গুরুতর জখম অবস্থায় পড়ে আছে। শাহজাহানকে দ্রুত স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, ঘটনার পর আরিফ বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় আত্মগোপনে ছিল। সে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে এসে নাম-পরিচয় গোপন করে শরিফুল ইসলাম নামে একটি ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করে ঢেউটিন ফ্যাক্টরিতে কাজ করত।
তার ধারণা ছিল ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করলে সে গ্রেপ্তার এড়াতে পারবে। পরে ঢেউটিন ফ্যাক্টরিটি বন্ধ হয়ে গেলে আরিফ সিদ্ধিরগঞ্জে সরিফুল পরিচয়ে মুদি ও লন্ড্রি দোকানের ব্যবসা করে আসছিল।
গ্রেপ্তার আরিফের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন বলেও জানান তিনি।