× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

কাঁটাতারের বেড়া কেটে বের হচ্ছে রোহিঙ্গারা

কক্সবাজার অফিস

প্রকাশ : ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৫:০০ পিএম

কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফ ক্যাম্পের কাঁটাতারের বেড়া কেটে রোহিঙ্গারা দুই শতাধিক গেট করেছে। এগুলো দিযে চলে নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড। সম্প্রতি কুতুপালংয়ের আমগাছতলা এলাকা থেকে তোলা। প্রবা ফটো

কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফ ক্যাম্পের কাঁটাতারের বেড়া কেটে রোহিঙ্গারা দুই শতাধিক গেট করেছে। এগুলো দিযে চলে নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড। সম্প্রতি কুতুপালংয়ের আমগাছতলা এলাকা থেকে তোলা। প্রবা ফটো

কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের ৩৩টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নিরাপত্তার জন্য তৈরি করা হয়েছে কাঁটাতারের বেড়া। ২০২০ সালে ক্যাম্প থেকে পালিয়ে অন্যত্র চলে যাওয়া, অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়া এবং বিদেশ পাচার রোধকল্পে কাঁটাতারের এ বেড়া তৈরি করা হয়। কিন্তু তাতেও আটকানো যাচ্ছে না রোহিঙ্গাদের। প্রতিদিনই বেড়া কেটে ক্যাম্প ছেড়ে অন্যত্রে যাচ্ছে তারা।

ক্যাম্পের আশপাশের বাসিন্দা ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের তথ্য মতে, কাঁটাতারের বেড়া কেটে নিজেদের মতো রোহিঙ্গারা দুশর বেশি গেট করেছে। এসব গেট দিয়ে ক্যাম্প ছেড়ে তারা দেশের বিভিন্ন স্থানে চলে যাওয়ার পাশাপাশি লোকালয়ে গিয়ে একের পর এক অপরাধে জড়াচ্ছে।

এদিকে গত মঙ্গলবার জেলা পুলিশ ও এপিবিএন চেকপোস্ট বসিয়ে যানবাহনে তল্লাশি চালিয়ে ২৬১ রোহিঙ্গাকে আটক করেছে। যাদের অধিকাংশেরই গন্তব্য ছিল কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম। 

কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কের পাশেই উখিয়ার কুতুপালং ক্যাম্পের অবস্থান। এই ক্যাম্পের চারপাশে রয়েছে কাঁটাতারের বেড়া। দেখা গেছে, ক্যাম্পের এক কিলোমিটার এলাকায় ১০টি অংশে বেড়া কেটে তৈরি করা হয়েছে গেট। আর এসব গেট দিয়ে অবাধে যাতায়াত করছে রোহিঙ্গারা।

আর কুতুপালংয়ের আমগাছতলা এলাকায় দেখা যায়, কাঁটাতারের বেড়ার সঙ্গে রয়েছে একটি গ্রিলের গেট। এ দিয়ে সহজে ক্যাম্প থেকে বের হচ্ছে রোহিঙ্গা নারী, পুরুষ ও শিশু। ওই গেটের পাশে রয়েছে একটি ছিদ্র। তা দিয়েও ক্যাম্প ছাড়তে দেখা যায় অনেককে।

ক্যাম্পের কাঁটাতারের বেড়া কেটে তৈরি করা গেট দিয়ে বের হওয়া রোহিঙ্গাদের রয়েছে নানা অজুহাতও। ক্যাম্প-২ ইস্টের ব্লক এ/৭-এর বাসিন্দা ওমর ফয়সাল (৩১) বলেন, ‘ক্যাম্প থেকে বের হয়েছি কাজে যাওয়ার জন্য। রাস্তায় দাঁড়িয়েছি গাড়িতে উঠতে।’ ক্যাম্প-২ ব্লক-বি-এর বাসিন্দা মো. রফিক বলেন, ‘ক্যাম্পের ভেতর থাকি। কিন্তু কাঁটাতারের বেড়ার কারণে ক্যাম্প থেকে বের হতে পারি না। তাই কাঁটাতারের বেড়া কেটে যে স্থানে ছিদ্র করা হয়েছে, সেদিক থেকে বের হয়ে বাজারে যাচ্ছি।’

কুতুপালং রেজিস্টার্ড ক্যাম্পের বাসিন্দা মোহাম্মদ ইছহাক বলেন, ‘কাঁটাতারের বেড়ার কারণে ক্যাম্প থেকে সহজে যাতায়াত করা যায় না। এজন্য অনেকেই কাঁটাতার কেটে ছিদ্র করেছে বের হওয়ার জন্য। এখন ওই ছিদ্র দিয়ে বের হয়েছি। অটোরিকশা চালাব আর কাজকর্ম করব।’

বালুখালী ক্যাম্প-৮-এর বাসিন্দা ইউসুফ বলেন, ‘এপিবিএনের চেকপোস্ট আছে তাই কাঁটাতারের বেড়া যেদিকে কাটা ছিল ওই দিক থেকে পার হয়ে ক্যাম্প থেকে বের হয়েছি। সারা দিন উখিয়ার একটি গ্রামে কৃষিকাজ করেছি। এখন কাজ শেষে ক্যাম্পে ফিরে যাচ্ছি।’

টিভি টাওয়ার এলাকার ক্যাম্প-২-এর বাসিন্দা খায়রুল আমিন বলেন, ‘কে বা কারা কাঁটাতারের বেড়া কেটেছে জানি না। শুধু এখানে নয়, কিছুদূর পরপর কাঁটাতার কেটে যাতায়াতের অনেক পথ রয়েছে। এসব পথ দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে বের হচ্ছে। শুধু রোহিঙ্গা নয়; ক্যাম্পে যারা এনজিও সংস্থায় চাকরি করেন, তারাও এসব পথ ব্যবহার করেন।’

উখিয়ার রাজাপালং ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘গত ছয় বছরে একজন রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন করা হয়নি। প্রত্যাবাসনের কোনো আশাও দেখছি না। এর কারণে রোহিঙ্গারা ক্যাম্প ছেড়ে লোকালয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ার প্রবণতা লক্ষ করা যাচ্ছে। রোহিঙ্গারা ক্যাম্প ছেড়ে যেভাবে বের হচ্ছে এটা খুবই আতঙ্ক ও উদ্বেগের বিষয়। এটা দেশের নিরাপত্তার জন্য হুমকি।’

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংগ্রাম পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা মাহমুদুল হক চৌধুরী বলেন, ‘রোহিঙ্গারা ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির দিন দিন অবনতি হচ্ছে। এভাবে তারা ছড়িয়ে পড়লে পরিস্থিতির আরও অবনতি হবে। তাই সরকার, প্রশাসন, সব আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সমন্বয়ে রোহিঙ্গাদের ক্যাম্প ছেড়ে বের হয়ে যাওয়া বন্ধে উদ্যোগ নিতে হবে। পাশাপাশি কক্সবাজার-টেকনাফ সড়ক ও মেরিন ড্রাইভে চেকপোস্টগুলো সচল করে নজরদারি বাড়াতে হবে।’

কক্সবাজার জেলা পুলিশ ও এপিবিএনের যৌথ চেকপোস্ট মঙ্গলবার যানবাহনে তল্লাশি চালিয়ে ২৬১ রোহিঙ্গাকে আটক করেছে। কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কের উখিয়া ডিগ্রি কলেজের সামনে এ চেকপোস্ট বসানো হয়। এ সময় রহিম নামে এক রোহিঙ্গা বলেন, ‘চট্টগ্রামের দোহাজারী যাচ্ছি। ওইখানে ক্ষেত-খামারে কাজ করি। এর আগেও দোহাজারী কয়েকবার গিয়েছি কাজ করতে। কিন্তু এবার ক্যাম্প থেকে দোহাজারী যাওয়ার পথে প্রশাসন ধরে ফেলেছে।’

উখিয়া থানার পরিদর্শক শেখ মোহাম্মদ আলী বলেন, উখিয়া থানা যানবাহনে তল্লাশি করে ৬১ রোহিঙ্গাকে আটক করেছে। পরে তাদের নাম ও ঠিকানা লিপিবদ্ধ করে পুনরায় স্ব-স্ব ক্যাম্পের ইনচার্জদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

উখিয়ার-৮ এপিবিএনের অধিনায়ক আমির জাফর বলেন, উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি আশ্রয়শিবির থেকে রোহিঙ্গাদের বাইরে যাওয়ার প্রবণতা বেড়েছে। কাঁটাতারের দুশ অংশে কেটে গেট তৈরি করে বাইরে চলে যাচ্ছে। তাদের ছড়িয়ে পড়া রোধে চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। এসব চেকপোস্টে মঙ্গলবার অভিযান চালিয়ে ২০০ রোহিঙ্গাকে আটক করা হয়েছে। পরে স্ব-স্ব ক্যাম্পের ইনচার্জদের কাছে তাদের হস্তান্তর করা হয়েছে। চেষ্টা করছি, রোহিঙ্গারা যাতে ক্যাম্প ছাড়তে না পারে।

তিনি আরও বলেন, কাঁটাতারের বেড়া কাটা স্থানগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে। এখন এই স্থানগুলো দ্রুত মেরামত করা প্রয়োজন। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে জানানো হয়েছে।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা