× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

নির্বাচনের আগে ফিরছেন দাগি ও শীর্ষ সন্ত্রাসীরা

আলাউদ্দিন আরিফ

প্রকাশ : ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১২:০৫ পিএম

আপডেট : ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৩:০৫ পিএম

নির্বাচনের আগে ফিরছেন দাগি ও শীর্ষ সন্ত্রাসীরা

জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে পুলিশের তালিকাভুক্ত দাগি ও শীর্ষ সন্ত্রাসীরা ফিরে আসতে শুরু করেছেন। তাদের কেউ কেউ জামিনে বা সাজার মেয়াদ শেষে কারাগার থেকে বেরিয়ে এসেছেন; দীর্ঘদিন দেশে-বিদেশে গা-ঢাকা দেওয়া সন্ত্রাসীরাও ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় প্রকাশ্যে বেরিয়ে এসে অপরাধ ও চাঁদাবাজি করছেন এবং অপরাধ সাম্রাজ্যের ওপর আধিপত্য বিস্তার করে নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার চেষ্টা করছেন। এতে প্রতিপক্ষের সঙ্গে তাদের বিরোধ ঘটছে এবং সারা দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসীরা দেশের ফেরায় কিংবা আদালত থেকে ছাড়া পাওয়ায় আতঙ্ক দেখা দিয়েছে সাধারণ মানুষের মধ্যে।

বিষয়টি নিয়ে পুলিশের উচ্চপর্যায়েও আলোচনা চলছে। পুলিশ সদর দপ্তরের সংশ্লিষ্ট একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা সন্ত্রাসীদের ফিরে আসার বিষয়টি স্বীকার করে বলছেন, গোয়েন্দা নজরদারি বাড়িয়ে এবং জেল প্যারেড কার্যক্রম জোরদার করে এ ধরনের আসামি শীর্ষ ও দাগি সন্ত্রাসীদের নজরদারির আওতায় আনা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘কিছু তালিকাভুক্ত দাগি ও শীর্ষ সন্ত্রাসী সাজার মেয়াদ শেষে কারাগার থেকে বের হয়েছেন। কিছু সন্ত্রাসী বিদেশে থেকে ফেরত এসেছেন, আমরা এমন তথ্যও পেয়েছি। গোয়েন্দা কার্যক্রম বাড়িয়ে আমরা তাদের বিষয়ে খোঁজখবর রাখছি। এ ব্যাপারে গোয়েন্দা পুলিশসহ পুলিশের সব ইউনিট তৎপর আছে। কেউ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোর চেষ্টা করলে আমরা তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেব। আমরা কাউকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে দেব না।’

আবারও দেখা যাচ্ছে মামুন, রাসুকে

সম্প্রতি জামিনে মুক্তি পেয়েছেন মগবাজারের আতঙ্ক হিসেবে পরিচিত শীর্ষ সন্ত্রাসী রাসু। ইতোমধ্যে ২০ বছর জেল খেটে জামিনে বেরিয়ে এসেছেন ঝিগাতলা, ধানমন্ডি ও কামরাঙ্গীরচরের কথিত ‘ক্যাপ্টেন’ তারেক সাঈদ ওরফে মামুন। তিনি চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী, সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদের ভাই সাঈদ আহমেদ টিপু, আদালত চত্বরে আইনজীবী মোর্শেদ হত্যা মামলা, বহুল আলোচিত হিমেল ও রহিম হত্যা মামলাসহ বেশ কয়েকটি হত্যা মামলার চার্জশিট এবং সাজাভুক্ত আসামি। গত সোমবার রাতে তেজগাঁওয়ে তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে ফিল্মি স্টাইলে হামলা হয়। ইতোমধ্যেই পুলিশ জানতে পেরেছে, একাধিক শীর্ষ সন্ত্রাসী এই হামলার সঙ্গে জড়িত। 

দেশে ফিরেছেন নাসির ও সোহেলরা

অনুসন্ধানে জানা গেছে, রাজধানী ছাড়াও চট্টগ্রাম, খুলনা, কক্সবাজার, যশোর ও রাজশাহীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপনে থাকা দাগি সন্ত্রাসীরা দেশে ফিরছেন। গোপীবাগ-মতিঝিলের আতঙ্ক হিসেবে পরিচিত নাসির উদ্দিন ২৩ বছর পর ইতালি থেকে ফেরত এসেছেন। আন্ডারগ্রাউন্ড সন্ত্রাসীদের কাছে তিনি ‘গোপীবাগের বস’ হিসেবে পরিচিত। দেশে ফিরেছেন শাহজাহানপুরের সন্ত্রাসী সোহেল শাহরিয়ার ওরফে শটগান সোহেল। অভিযোগ, দেশে ফেরার পর তার পরিকল্পনাতেই মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহিদুর রহমান টিপু খুন হয়েছেন। এই হত্যা মামলার পরিকল্পনাকারী ও বাস্তবায়নকারী হিসেবে চার্জশিটে তার নাম রয়েছে। এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে এখন তিনি কারাগারে আছেন।

এ ছাড়া মিরপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদাতের সহযোগী লাক্কু, মিরপুরের তালিকাভুক্ত দাগি সন্ত্রাসী খোরশেদের সহযোগী হেলাল, দুলুসহ একাধিকজন, ফার্মগেট তেজগাঁওয়ের আশিক বাহিনীর কয়েকজন সদস্য, যাত্রাবাড়ীর রোজেন গ্রুপের চুই উজ্জ্বলসহ কয়েকজন সদস্য, যাত্রাবাড়ীর ইয়াসিন উদ্দিন লিটন ওরফে লিটন আকন্দ ওরফে শুটার লিটন, কামরাঙ্গীরচরের নূরুজ্জামান বাবু, মোহাম্মদপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসানের সহযোগী মাজহারুল ইসলাম শাকিলসহ অনেকেই বিদেশ থেকে দেশে ফিরেছেন। এদের মধ্যে কেউ কেউ আবার র‌্যাব-পুলিশের অভিযানে গ্রেপ্তার হয়ে জেলে রয়েছেন।

মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানান, সরকার ঘোষিত ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীসহ বেশ কিছু সন্ত্রাসীর নাম ব্যবহার করে এখনও ঢাকা এবং আশপাশের এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে চাঁদাবাজি, দখল ও টেন্ডারবাজি চলছে। এদের মধ্যে অনেকে ক্রসফায়ারে বা অন্য কোনোভাবে মারা গেছেন। অনেকে কারাগারে এবং কয়েকজন বিদেশে। তারা কারাগার ও বিদেশে বসেই অপরাধ সাম্রাজ্য নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন। শীর্ষ সন্ত্রাসীর বাইরেও কিছু দাগি সন্ত্রাসী র‌্যাব-পুলিশের অভিযানের কারণে অবৈধ পথে বিদেশে চলে যান। নির্বাচনকে সামনে রেখে বিভিন্ন মহলের গ্রিন সিগন্যাল পেয়ে তারা দেশে ফিরে আসার তথ্য পাওয়া গেছে।

জোট বেঁধেছে নাসির ও ঈদুল বাহিনী 

অনুসন্ধানে জানা গেছে, মতিঝিল-গোপীবাগের আতঙ্ক, একসময় বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় ও সাদেক হোসেন খোকার অনুসারী হিসেবে পরিচিত নাসির উদ্দিন ওরফে ফেন্সি নাসির দীর্ঘ ২৩ বছর ইতালিতে আত্মগোপনে থাকার পর সম্প্রতি পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সনদ নিয়ে দেশে এসেছেন। দেশে ফেরার আগে নাসির ইতালির ব্রাসিলিয়া শহরে যুবলীগের কেন্দ্রীয় এক নেতার হাতে ফুল দিয়ে আলোচনায় আসেন এবং সেখানকার যুবলীগের আহ্বায়ক মনোনীত হন। এ ঘটনার পরপরই বিশেষ ব্যবস্থায় তিনি ঢাকায় ফিরে আসেন। বিদেশে থেকে তিনি প্রায়ই পুলিশ কর্মকর্তাসহ প্রশাসনের লোকজনদের দামি মোবাইল ফোন সেটসহ নানা উপহার পাঠাতেন বলে অভিযোগ রয়েছে। টিটিপাড়া এলাকায় রয়েছে তার ‘এনএস সিএনজি রিফুয়েলিং পাম্প’। সেখানে নিয়মিত সন্ত্রাসীদের আড্ডা বসে।

পুলিশের প্রবীণ এক কর্মকর্তা বলেন, একসময় নাসির ও ঈদুল বাহিনী পরস্পরবিরোধী অবস্থানে থাকলেও বর্তমানে তারা একজোট হয়ে চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছে। স্থানীয় যুবলীগ, শ্রমিক লীগ ও কমলাপুর কন্টেইনার ডিপোর শ্রমিক ইউনিয়নের নেতাকর্মীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক রেখে সেখানেও চাঁদাবাজি করছে নাসির বাহিনী।

টিপু হত্যা মিশনে শটগান সোহেল 

যুবলীগ নেতা ইসমাইল হোসেন সম্রাট ও খালিদ মাহমুদ ভূঁইয়া গ্রেপ্তার হওয়ার পর দেশে ফিরে আসেন শাহজাহানপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী জাফর আহম্মেদ মানিকের সেকেন্ড ইন কমান্ড হিসেবে পরিচিত শটগান সোহেল। এসেই মতিঝিল, কমলাপুর ও শাহজাহানপুরসহ আশপাশের এলাকায় চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি ও দখল বাণিজ্য শুরু করেন তিনি ও তার সহযোগীরা। তবে কমলাপুর রেলওয়েতে টেন্ডারবাজি করতে গিয়ে গ্রেপ্তার হন সোহেলের কয়েক সহযোগী। জাফর আহম্মেদ ওরফে মানিকের নির্দেশে জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যা মিশন বাস্তবায়ন করেন শটগান সোহেল। এভাবে আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীরা এলাকায় ফিরে আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটাচ্ছেন।

যা বলছেন পুলিশের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা 

এ বিষয়ে পুলিশ সদর দপ্তরের অতিরিক্ত আইজিপি (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘সাজাভোগ শেষে বা জামিন পেয়ে যেসব সন্ত্রাসী কারাগার থেকে ছাড়া পাচ্ছেন, তারা পুনরায় অপরাধে জড়াচ্ছেন কি না, সেটার জন্য পুলিশ ‘জেল প্যারেড’ করে থাকে। তারা কখন ছাড়া পাচ্ছেন, কোথায় অবস্থান করছেন, জেল প্যারেডের মাধ্যমে এসব খোঁজখবর রাখা হয়। স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে এদের সহায়তা করা হয়। প্রয়োজন হলে তার বিষয়ে এলাকার লোকজনকে সতর্ক করা হয়। চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে পুলিশের ১ হাজার ৫২৮ জন সদস্য জেল প্যারেডে অংশ নিয়েছেন। পুলিশ এ কাজটি নিয়মিতই করছে।’ 

র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘কারাগার থেকে বের হওয়া সন্ত্রাসীরা এলাকায় ফিরে পুনরায় আধিপত্য বিস্তার ও অপরাধ সাম্রাজ্য নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন। এতে প্রতিপক্ষের সঙ্গে তাদের বিরোধ তৈরি হয়। এর ফলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়। র‌্যাব এ বিষয়ে গোয়েন্দা নজরদারি রাখছে।’ 

তিনি বলেন, ‘অনেক মামলার আসামি বা শীর্ষ সন্ত্রাসীর বৈধভাবে দেশে আসা বা যাওয়ার সুযোগ থাকে না। তারা অবৈধভাবে বিদেশে যায়, ফেরেও একইভাবে। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সঙ্গে সমন্বয় করে সীমান্ত দিয়ে সন্ত্রাসীরা যাতে অবৈধভাবে আসতে না পারেন, আমরা সেটা পর্যবেক্ষণ করছি। অনেক মামলার আসামি বা তালিকাভুক্ত কোনো সন্ত্রাসী আত্মগোপন থেকে প্রকাশ্যে আসার তথ্য পাওয়া গেলেই তাদের গ্রেপ্তারে অভিযান চালানো হচ্ছে। দেশের অভ্যন্তরে আমরা গোয়েন্দা তথ্য নেওয়ার মাধ্যমে কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়া সন্ত্রাসীদের নজরদারিতে রাখছি। তাদের কেউ যদি আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটানোর চেষ্টা করেন, তাহলে তাদেরও আইনের আওতায় আনা হবে।’

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা