প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৭:১৮ পিএম
আপডেট : ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৮:২৬ পিএম
নিজেদের পরিচয় দেন বড় ব্যবসায়ী হিসেবে। কখনও ফার্নিচারের ব্যবসায়ী, কখনও বা কেমিক্যালের- যখন যাকে যেভাবে প্রলুদ্ধ করা যায় সেই ব্যবসার নাম বলেন। এভাবে বহুমাত্রিক ব্যবসার কথা বলে কোটি টাকার বেশি হাতিয়ে নেওয়া ‘রয়েল চিটিং ডিপার্টমেন্ট’ নামের এক প্রতারক চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। গতকাল শনিবার মধ্যরাতে রাজধানীর উত্তরা এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তাররা হলেন আব্দুল বারী ওরফে আফসার উদ্দিন খান ওরফে বজলুর রহমান, মো. রাশেদ ওরফে রাসেল ও মো. নাঈম।
রবিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পিবিআই ঢাকা মেট্রো উত্তরের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে প্রতারক চক্রটির নানা প্রতারণা তুলে ধরেন পিবিআই-এর বিশেষ পুলিশ সুপার মো. জাহাঙ্গীর আলম।
তিনি বলেন, সম্প্রতি সাইফুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি ২৬ শতক জমি বিক্রির জন্য অনলাইনে বিজ্ঞাপন দিলে ইঞ্জিনিয়ার শরীফের সঙ্গে পরিচয় হয়। শরীফের মালিক আফসার উদ্দিন ওই জমি কিনবেন বলে জমির কাগজপত্র নিয়ে মালিক সাইফুলকে উত্তরা ৬ নম্বর রোডে তাদের অফিসে আসতে বলেন। গত ১৭ জুলাই সাইফুল তার এক পরিচিতজনকে নিয়ে অফিসে যান। সেখানে জমির মূল্য নির্ধারিত হয়। ১৯ জুলাই জমি রেজিস্ট্রি করতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয় তাদের।
এদিন জমি নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে কথাবার্তা পাকা হওয়ার পর একপর্যায়ে আফসার উদ্দিনকে মোয়াজ্জেম বলেন, তার মালিক ভারতীয় নাগরিক। তিনি কিছু দামি ব্র্যান্ডের ঘড়ি কিনবেন। ঘড়ি দিতে পারলে প্রায় সাড়ে ছয় কোটি টাকার ব্যবসা হবে। তখন আফসার ও মোয়াজ্জেম ভারতীয় নাগরিক মালিককে আসতে বলেন। প্রায় আধা ঘণ্টা পর একজন লোক আসেন। তাকে ভারতীয় নাগরিক ও ঘড়ি কেনার জন্য আসছেন বলে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়।
ভারতীয় নাগরিক পরিচয় দিয়ে ঘড়ির ক্রয়মূল্য নির্ধারণ করে আফসারকে ঘড়ি কেনা বাবদ অগ্রিম প্রায় ৩৫ লাখ টাকা দেন এবং অবশিষ্ট টাকা পরদিন পরিশোধ করে ঘড়ি বুঝে নিয়ে যাবেন বলে চলে যান।
পিবিআই জানায়, পরবর্তীতে সাইফুলকেও এই ঘড়ির ব্যবসায় পার্টনার হওয়ার প্রস্তাব দেন আফসার। পার্টনার হতে ২০ লাখ টাকা দিতে হবে। তাহলে আমদানিকারক ঘড়ি সরবরাহ করবে এবং সবাই সমানভাবে ব্যবসায় লাভবান হবেন। পরদিন দুপুরে আফসারকে ২০ লাখ টাকা দেওয়ায় হয়।
১৯ জুলাই জমি রেজিস্ট্রেশন হওয়ার কথা। কিন্তু সাইফুল যাদের টাকা দেন তাদের ফোন দিলে তা বন্ধ পান। তখন ভুক্তভোগী প্রতারণার বিষয়টি বুঝতে পারেন।
এ ঘটনায় বিমানবন্দর থানায় মামলা হয়। মামলায় মোয়াজ্জেমকে গ্রেপ্তারের পর আদালতের নির্দেশে জেল হাজতে পাঠানো হয়।
পিবিআই কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘শনিবার রাজধানীর উত্তর এলাকা থেকে তিন প্রতারককে আমরা গ্রেপ্তার করেছি। এদের বিগত দিনেও আপনারা মিডিয়ার সামনে উপস্থাপন করতে দেখেছেন। এরা রয়েল চিটিং ডিপার্টমেন্ট নামে যে গ্রুপ আছে তাদের সক্রিয় সদস্য। এ গ্রুপের মূলহোতা আব্দুল বারী। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন নাম দিয়ে থাকে তার। আমরা এ পর্যন্ত তার তিনটি আইডি কার্ডের নাম পেয়েছি। একটিতে নাম আফসার উদ্দিন, অন্যটিতে বজলুর রহমান। তার বিরুদ্ধে ২০১১ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ঢাকার বিভিন্ন থানায় মোট ছয়টি মামলা পাওয়া গেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আব্দুল বারী বিদেশে থাকতেন। বিদেশ থেকে আসার পরই তিনি এ প্রতারণার কাজে জড়িয়ে পড়েন। চক্রের সদস্য সংখ্যা নির্দিষ্ট নয়। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন মানুষকে সম্পৃক্ত করে। এছাড়া একেক সময় একেক জায়গায় বাসা ভাড়া নিয়ে থাকে। নিজেদের পরিচয় দেন বড় ব্যবসায়ী তারা। কখনো ফার্নিচারের ব্যবসায়ী, কখনো কেমিক্যালের ব্যবসায়ী- যখন যাকে যেভাবে প্রলুদ্ধ করা যায় সে ব্যবসার নাম বলেন। এ প্রতারণার কাজ করতে গিয়ে এর আগে পাঁচ থেকে ছয়বার গ্রেপ্তার হয়েছেন বারী।’