× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

জুয়ার টাকা জোগাতে নানা অপরাধে জড়াচ্ছে তরুণরা

প্রবা প্রতিবেদক

প্রকাশ : ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৪:৩৬ পিএম

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার নানা অভিযানের পরও অনলাইন জুয়া বন্ধ করা বা এর বেপরোয়া গতিতে লাগাম টানা যাচ্ছে না। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানান চটকদার বিজ্ঞাপন প্রচার করে তরুণদের অনলাইন জুয়ায় আকৃষ্ট করা হচ্ছে। হাজার হাজার মানুষ নিঃস্ব হওয়ার পরও জুয়ার প্রতারক চক্রের দৌরাত্ম্য কমছে না। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ভাষ্য হচ্ছেÑ অনলাইন জুয়া অপরাধজগতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। জুয়ার টাকা জোগাড় করতে গিয়ে অনেক তরুণ অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। 

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, কিছুদিন আগে পুলিশের অপরাধ পর্যালোচনা সভায় অনলাইন জুয়ার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। সেখানে পুলিশের অতিরিক্ত আইজি মো. আতিকুল ইসলাম বলেন, অনলাইন জুয়া খেলে অনেকে অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। সিলেটে একটি বাসার কেয়ারটেকার অনলাইনে জুয়ায় সব খুইয়ে নিজেই খুন হওয়ার কথা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার করে।

ওই সভায় ঝিনাইদহ জেলার পুলিশ সুপার বলেন, অনলাইন জুয়ার ক্ষেত্রে বিশেষ আইন পাস হওয়ার আগপর্যন্ত সাইবার নিরাপত্তা আইনে (ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন) মামলা করলে অপরাধীর সাত-আট বছর সাজা হয়ে থাকে। যতদিন পর্যন্ত বিশেষ আইন পাস না হয় সাইবার নিরাপত্তা আইনে মামলা করতে হবে। 

এদিকে কিছু পুলিশ সদস্যও অনলাইন জুয়ায় জড়িয়ে পড়ছেন এবং এ অপরাধে তাদের সাময়িক বরখাস্ত করাসহ নানা শাস্তি দেওয়ার কথা বলা হয়েছে বিভিন্ন সভায়। আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল-মামুন পুলিশের সব ইউনিটকে নির্দেশনা দিয়েছেন, অনলাইন জুয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত সবার বিরুদ্ধেই কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে। 

সম্প্রতি পুলিশের পর্যবেক্ষণ থেকে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, বিভিন্ন নামের জুয়ার অ্যাপসগুলোর বিজ্ঞাপনে বাংলাদেশের কয়েকটি ব্যাংক এবং মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে পেমেন্টের সুযোগ থাকার টোপ দিয়ে তরুণদের আকৃষ্ট করছে। জুয়ার বিভিন্ন কোম্পানি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক, ইউটিউবে অবাধে তাদের বিজ্ঞাপন প্রচার করছে। ফলে অনলাইন জুয়া শহরের পাড়া-মহল্লা থেকে শুরু করে গ্রামগঞ্জেও ছড়িয়ে পড়েছে।

আইনগতভাবে জুয়া নিষিদ্ধ হলেও জুয়ার বিজ্ঞাপন প্রচারের ক্ষেত্রে কোনো নিয়ম-শৃঙ্খলা মানা হচ্ছে না। বিশেষ করে বিভিন্ন দেশের ক্রিকেট-ফুটবল লিগের খেলা টিভি চ্যানেলে খেলা দেখানোর সময় জুয়ার বিজ্ঞাপন প্রচার হয়। 

সিআইডি ও গোয়েন্দা পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা জানান, দেশজুড়ে বেকারত্বের কারণে অনেকেই পথভ্রষ্ট হয়ে জুয়ায় মত্ত হচ্ছে। বিদেশি ওয়েবসাইটগুলোর মাধ্যমে জুয়ায় অংশ নেওয়া সহজ হওয়ায় ঘরে বসেই অর্থ লেনদেনের মাধ্যমে জুয়া খেলছে তরুণরা। মোবাইল ফোনে বিভিন্ন অ্যাপসে যারা জুয়া খেলে তাদের শনাক্ত করা বেশ কঠিন। এ ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চেয়ে পরিবারকে বেশি দায়িত্ব নিতে হবে বলে মনে করেন তারা। 

কিছুদিন আগে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) কুমিল্লা থেকে অনলাইন জুয়া খেলার সাইট ‘বেটউইনার’ পরিচালনাকারী তিন বাংলাদেশি এজেন্টকে গ্রেপ্তার করে। সংস্থাটির বিশেষ পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রেজাউল মাসুদ বলেন, ‘ব্যাটউইনারের এজেন্টরা সাইটটির মাধ্যমে পরিচালনা করে বাংলাদেশে অনলাইন গ্যাম্বলিংকে প্রমোট করে। এই সাইটটি রাশিয়া থেকে পরিচালিত হয়। ব্যাটইউনার চার মাসে চার কোটি টাকারও বেশি পাচার করেছে। 

সিআইডির একটি সূত্র জানায়, একজন অনলাইন জুয়াড়ি মোবাইল ফোন নম্বর বা ই-মেইলের মাধ্যমে এই ব্যাটিং সাইটে বা অ্যাপসে অ্যাকাউন্ট খুলতে পারেন। পরে অ্যাকাউন্টের বিপরীতে একটি ই-ওয়ালেট তৈরি হয়, যাকে জুয়াড়িরা ইউএসডিটি বলে থাকে। শুরুতে এই ব্যালান্স শূন্য থাকে। ওয়ালেটে ব্যালান্স যোগ করার জন্য বিভিন্ন মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্সির সহায়তা নেওয়া হয়। আবার মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের এজেন্টরা জমা করা টাকা তুলে ওই টাকা বাইন্যান্স নামের মানি এক্সচেঞ্জ অ্যাপের মাধ্যমে ডলারে কনভার্ট করে। পরে বাইন্যান্সের মাধ্যমে এই টাকা বিভিন্ন দেশে পাচার হয়ে যায়। 

এ ছাড়া কিছুদিন আগে সিআইডি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে অনলাইন জুয়ার মাধ্যমে প্রতি মাসে কোটি কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে ছয়জনকে গ্রেপ্তার করে। তারা মেল বেট, ওয়ানএক্সবেট এবং ব্যাটউইনার নামের অনলাইন বেটিং সাইট পরিচালনা করত। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে রাজধানীর পল্টন থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়। সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আজাদ রহমান জানান, সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টার মেল বেট, ওয়ানএক্সবেট এবং ব্যাটউইনার সাইটগুলো পর্যবেক্ষণ করে। এতে দেখা যায়, বাংলাদেশের প্রচুর মানুষ বেটিং বা জুয়া খেলায় অংশ নিচ্ছে। সিআইডির সাইবার ইন্টিলিজেন্স অ্যান্ড রিস্ক ম্যানেজমেন্ট টিমের পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, রাশিয়ার মস্কো থেকে কয়েকটি অনলাইন জুয়ার ওয়েবসাইট নিয়ন্ত্রণ করা হয়। বিভিন্ন দেশে স্থানীয়ভাবে জুয়াড়িদের নিয়ন্ত্রণের জন্য ‘ম্যানেজার’ নিয়োগ করা হয়। গ্রেপ্তার হওয়া একজনের বাসায় জুয়া পরিচালনার বিশেষ ল্যাব বসানো হয়েছিল। এই চক্রটির প্রধান শরীয়তপুরের মতিউর রহমান। তিনি রাশিয়ার মস্কোতে অবস্থান করে অনলাইন জুয়ার তিনটি সাইট পরিচালনা করেন। তার পক্ষে স্থানীয় প্রতিনিধিরা অনলাইন জুয়া থেকে সংগৃহীত টাকা হুন্ডির মাধ্যমে এবং ক্রিপ্টোকারেন্সিতে কনভার্ট করে রাশিয়ায় পাঠাত। 

পুলিশের অ্যান্টি টেররিজম ইউনিট (এটিইউ) কিছুদিন আগে অনলাইন জুয়া পরিচালনার অভিযোগে তিনজনকে গ্রেপ্তার করে। সংস্থাটির মিডিয়া অ্যান্ড অ্যাওয়ারনেস উইংয়ের পুলিশ সুপার (অপারেশনস) মোহাম্মদ ছানোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমরা সাইবার প্যাট্রোলিংয়ের সময় দেখতে পাই এলকে প্লেজোন নামক অ্যাপের মাধ্যমে কয়েক হাজার ব্যক্তি একসঙ্গে অনলাইনে জুয়া খেলায় অংশ নিতে পারছে। একপর্যায়ে তথ্য পাওয়া যায়, রাজধানীর মোহাম্মদপুর কাটাসুর এলাকার শরিফুল ইসলাম এলকে প্লেজোনসহ একাধিক অনলাইন জুয়ার প্ল্যাটফর্মের অ্যাডমিন হিসেবে যুক্ত। কাটাসুর এলাকা থেকেই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।’ তিনি জানান, অনলাইন জুয়ার বিরুদ্ধে সাইবার প্যাট্রোলিং অব্যাহত আছে।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা