ব্রিফিংয়ে এটিইউ
প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৪:২৫ পিএম
আপডেট : ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৬:১৫ পিএম
নতুন জঙ্গি সংগঠন তাওহীদুল উলূহিয়্যাহর (আল-জিহাদী) প্রধানসহ গ্রেপ্তার তিন। প্রবা ফটো
তাওহীদুল উলূহিয়্যাহ (আল-জিহাদী)। নতুন জঙ্গি সংগঠন। গত দুই/তিন মাস ধরে সংগঠনটি তাদের কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। ২০২৪ সালে দেশে বড় হামলার পরিকল্পনা ছিল তাদের। জঙ্গি সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতাসহ শীর্ষ দুই নেতাকে গ্রেপ্তারের পর পুলিশের অ্যান্টি টেরোরিজম ইউনিট (এটিইউ) এমনটি জানিয়েছে।
গ্রেপ্তাররা হলেন সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা মো. জুয়েল মোল্লা, দুই শীর্ষ নেতা মো. রাহুল হোসেন ও মো. গাজিউল ইসলাম। বাগেরহাটের রামপাল, জয়পুরহাট ও রাজধানীর ভাসানটেক এলাকা থেকে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
আজ শনিবার দুপুরের এ বিষয়ে এটিইউ—এর হেডকোয়ার্টারে ডিআইজি (অপারেশন্স) মোহা. আলীম মাহমুদ এক সংবাদ সম্মেলন করেন।
তিনি বলেন, ‘গত ১৩ সেপ্টেম্বর থেকে অভিযান চালিয়ে জুয়েলকে বাগেরহাট থেকে, জয়পুরহাট থেকে রাহুলকে ও রাজধানীর ভাসানটেক এলাকা থেকে গাজীউল ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়। জুয়েল এই সংগঠনের প্রধান, বাকি দুই জন শীর্ষ পর্যায়ের নেতা। সংগঠনটি ২/৩ মাস ধরে তাদের কার্যক্রম শুরু করেছে। তাদের পরিকল্পনা ছিল ২০২৪ সালে দেশে বড় ধরনের জঙ্গি হামলা চালানো।’
এটিইউ ডিআইজি বলেন, ‘আমরা গত কয়েক মাস ধরে গোয়েন্দা তথ্যের মাধ্যমে খবর পাচ্ছিলাম কিছু উগ্রবাদী মানুষ একত্রিত হচ্ছেন; যারা কিনা দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে বিশ্বাস করে না। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে বানচাল করে উগ্রবাদী ব্যবস্থা কায়েমের জন্য তারা একত্রিত হচ্ছিলেন। গ্রেপ্তাররা সবাই আগে কোনো না কোনো জঙ্গি সংগঠনের সদস্য ছিলেন। কিন্তু তারা নতুন লক্ষ্য নিয়ে একটি ব্যানারের নিচে সবাই নতুন করে একত্রিত হচ্ছিলেন। তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের ভিডিও ও পোস্টের মাধ্যমে নতুন সদস্য সংগ্রহ করে আসছিলেন। এই দলের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নেতা হলেন জুয়েল।’
‘তারা প্রাথমিকভাবে সদস্য সংগ্রহের পাশাপাশি অর্থও সংগ্রহ করছিলেন। এই অর্থ দিয়ে তারা অস্ত্র কেনাসহ বোমা তৈরি সরঞ্জাম সংগ্রহের পরিকল্পনা ছিল তাদের। এই অস্ত্র ও বোমা দিয়ে তারা বড় ধরনের জঙ্গি হামলার পরিকল্পনা করছিলেন,’ যোগ করেন তিনি।
আলীম মাহমুদ আরও বলেন, ‘আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্য জসীম উদ্দিন রহমানি; যিনি বর্তমানে কারাগারে সাজা ভোগ করছেন। মূলত তার বক্তব্যে উদ্বুদ্ধ হয়ে নতুন এ জঙ্গি সংগঠনটি তৈরি করেন জুয়েল। তিনি নিজেও আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্য ছিলেন। রহমানিকেও কারাগার থেকে মুক্ত করার পরিকল্পনা ছিল জুয়েলের।’
সংগঠনটির অর্থের যোগানদাতা কারা এবং সংগঠনটির সদস্য সংখ্যা কতো- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সংগঠনটিতে এখন পর্যন্ত ৮০ থেকে ৯০ জন সদস্য আছে বলে আমরা জানতে পেরেছি। তাদের অর্থদাতা কে এখনো জানা যায়নি। তবে সংগঠনটির অর্থ সংগ্রহের কাজ করছিলেন রাহুল। এছাড়া রাহুল বোমা তৈরির দায়িত্বেও ছিলেন।’
আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে হামলার পরিকল্পনা ছিল কিনা- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সে সম্পর্কে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করব। তবে ২০২৪ সালে বড় একটি জঙ্গি হামলার পরিকল্পনা ছিল। সেজন্য তারা অর্থ ও অস্ত্র সংগ্রহসহ বোমা বানানোর চেষ্টা করছিলেন। তবে তাদের হামলার টার্গেট কি- তা এখনো জানা যায়নি। সে বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানার চেষ্টা করব।’
সংবাদ সম্মেলনে এটিইউ-এর পুলিশ সুপার (অপারেশন্স) ছানোয়ার হোসেন বলেন, ‘নতুন জঙ্গি সংগঠনটির মূল পরিকল্পনাকারী জুয়েল মোল্লা নিষিদ্ধ ঘোষিত আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্য ছিলেন। পরবর্তীতে র্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হন। নয় মাস কারাগারে ছিলেন। মূলত এই সময়ে কারাগারে বসেই নিজের একটি সংগঠন করার পরিকল্পনা করেন। মাত্র ক্লাস সেভেন পাস জুয়েল মোল্লা পেশায় একটি বেকারির কর্মী ছিলেন। আর গ্রেপ্তার অপর দুইজন হিজবুত তওহিদের সদস্য ছিলেন। রাহুল হোসেন পেশায় একটি আইটি প্রতিষ্ঠানের কর্মী ছিলেন। প্রযুক্তির বিষয়ে জ্ঞান থাকায় রাহুল বোমা তৈরির বিষয়ে খোঁজ-খবর নিচ্ছিলেন। এছাড়া বোমা হামলার অর্থ জোগাতে নিজের জমি বিক্রির প্রস্তুতি নিচ্ছেলন তিনি। অনলাইনে সদস্য সংগ্রহের কাজও করছিলেন।’