বাউফল (পটুয়াখালী) প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৬ আগস্ট ২০২৩ ১৭:৪৬ পিএম
আপডেট : ২৬ আগস্ট ২০২৩ ১৮:৩৭ পিএম
অভিযুক্ত শিক্ষক মো. সেলিম গাজী। প্রবা ফটো
পটুয়াখালীর বাউফলে শিক্ষকের যৌন নির্যাতনে মো. আল রাফি নামে এক মাদ্রাসাছাত্রের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। শুক্রবার (২৫ আগস্ট) রাতে রাজধানীর জাতীয় ক্যান্সার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সে মারা যায়। রাফির স্বজনদের দাবি, উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের বড় ডালিমা মদিনাতুল উলুস করমিয়া হাফেজিয়া মাদ্রাসার শিক্ষক ও পরিচালক মো. সেলিম গাজী দীর্ঘ দিন ধরে তাকে যৌন নির্যাতন করে আসছিলেন।
রাফি বড় ডালিমা গ্রামের মো. রেজাউলের ছেলে। সে মদিনাতুল উলুস করমিয়া
হাফেজিয়া মাদ্রাসার হেফজ বিভাগের ছাত্র ছিল।
পুলিশ লাশ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠিয়েছে।
শিশুর পরিবার, স্থানীয় ও মাদ্রাসা সূত্রে জানা যায়, মাদ্রাসার শিক্ষক
ও পরিচালক মো. সেলিম গাজী এক বছর ধরে বিভিন্ন কৌশলে রাফিকে যৌন নির্যাতন করতেন। বিষয়টি
কাউকে বললে তাকে মেরে ফেলা হবে- এমন ভয়ভীতি দেখাতেন। ভয়ে সে বিষয়টি কাউকে বলেনি। ২০
দিন আগে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ে রাফি। প্রথমে তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া
হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে তাকে ঢাকার মহাখালীর একটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কয়েক
দিন পর চিকিৎসকরা জানান, রাফির মলদারে ক্যান্সার হয়েছে, যা রক্তে ছড়িয়ে পড়েছে। পরে
তাকে জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন
অবস্থায় শুক্রবার রাতে সে মারা যায়।
রাফির বাবা রেজাউল বলেন, যৌন নির্যাতনের পর ছেলেকে মরে ফেলার ভয় দেখাতেন
মাদ্রাসা শিক্ষক সেলিম। ভয়ে ছেলে আমাদের কিছু বলেনি। ঢাকার হাসপাতালে ভর্তি করানোর
পর সেখানকার চিকিৎসকরা জানান অসংখ্যবার নির্যাতনের কারণে তার মলদারে প্রথমে ঘা হয়।
পরে তা ক্যান্সারে রূপ নেয়। হাসপাতালের বেডে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে হেরে যায় আমার ছেলে।
তিনি আরও বলেন, আমার ছেলেকে একভাবে হত্যা করা হয়েছে। দিনের পর দিন ভণ্ড হুজুর আমার
ছেলেকে বিকৃত যৌন নির্যাতন করেছেন। যার কারণে আমার ছেলে ক্যান্সার হয়ে মারা গেছে। এ
হত্যার বিচার চাই।
এদিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় নিজের ওপর চালানো যৌন নির্যাতনের কথা জানিয়েছে
রাফি। তা মোবাইল ফোনে ভিডিও করে রাখা হয়। ওই ভিডিওতে রাফি জানায়, একবছর আগে মাদ্রাসার
সবাই কুয়াকাটা যায়। সেখানে হোটেলে প্রথমবার তাকে যৌন নির্যাতন করে শিক্ষক সেলিম। এরপর
প্রায় রাতেই তাকে নির্যাতন করা হতো। বিষয়টি কাউকে বললে তাকে ও তার বাবাকেও মেরে ফেলার
হুমকি দেওয়া হয়। এই ভয়ে সে কাউকে ঘটনাটি বলেনি।
ঘটনার পর থেকে অভিযুক্ত সেলিম গাজী পালতক। তবে তার ভাই ও স্থানীয়
ইউপি সদস্য মো. হাবিব গাজী বলেন, ‘ভাই হোক আর
যাই হোক, অপরাধ করলে শাস্তি পেতে হবে।’
এ বিষয়ে বাউফল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এটিএম আরিচুল হক
বলেন, ময়নাতদন্তের জন্য লাশ মর্গে পাঠানো হয়েছে। এখন পর্যন্ত কোনো লিখিত অভিযোগ পাইনি।
অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।