প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৭ আগস্ট ২০২৩ ১৫:৩৩ পিএম
আপডেট : ১৭ আগস্ট ২০২৩ ১৫:৩৪ পিএম
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের লালবাগ বিভাগ একটি চক্রের চার সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে। ডিবি বলছে, চক্রটি দুদকের ওয়েবসাইট থেকে তথ্য চুরি করে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি এবং সরকারি কর্মচারীদের কাছ থেকে দুদকের নামে বিভিন্ন সময় কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
গতকাল বুধবার মধ্যরাতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে চক্রের সদস্যদের গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তাররা হলেন মো. সেলিম ওরফে তানভীর ইসলাম ওরফে শফিকুর রহমান, সোহাগ পাটোয়ারী, আব্দুল হাই সোহাগ ও মো. আজমীর হোসেন। তাদের কাছ থেকে প্রতারণায় ব্যবহৃত মোবাইল ফোন, সিম কার্ড, পত্রিকা, মানবাধিকার কমিশন ও দুদকের ভুয়া আইডি কার্ড, দুদকের নামে বিভিন্ন ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ অনুসন্ধানের ভুয়া প্রতিবেদন এবং বিভিন্ন ব্যক্তির ফোন নম্বর লেখা নোটবুক জব্দ করা হয়।
আজ বৃহস্পতিবার (১৭ আগস্ট) ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করা হয়। এতে ডিএমপির যুগ্ম পুলিশ কমিশনার (সাইবার আ্যন্ড স্পেশাল ক্রাইম ও ডিবি-উত্তর) খোন্দকার নুরুন্নবী চক্রটির অপরাধ কার্যক্রমের বিস্তারিত তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, দুদকের নামে ঘুষ গ্রহণ ও চাঁদাবাজির অভিযোগে দুদকের উপপরিচালক সৈয়দ নজরুল ইসলাম গত ১৩ আগস্ট রমনা থানায় একটি মামলা করেন। মামলার পরদিন যাত্রাবাড়ী, মুগদা ও এয়ারপোর্ট এলাকায় ধারাবাহিক অভিযান চালিয়ে দুদকের বিভিন্ন পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের নামে অভিযোগ নিষ্পত্তির আশ্বাসে ঘুষ হিসেবে টাকা হাতিয়ে নেওয়া চক্রের চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তারদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে পুলিশের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, কোনো ব্যক্তি হঠাৎ করে সম্পদশালী হলে তাদের সম্পর্কে খোঁজ-খবর নিয়ে মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে চক্রের সদস্যরা। এরপর তাদের বিরুদ্ধে দুদকের নামে ভুয়া অভিযোগ তৈরি করে সেগুলো বিভিন্ন ডিজিটাল ডিভাইসের মাধ্যমে তাদের কাছে পাঠিয়ে মোটা অঙ্কের অর্থ দাবি ও আদায় করত। পরে তদন্ত রিপোর্ট তৈরি করে তাদেরকে ডিজিটাল ডিভাইসের মাধ্যমে পাঠাত।
গ্রেপ্তারদের মধ্যে শফিকুর একসময় রড মিস্ত্রির কাজ করে পরবর্তীতে নির্মাণ কাজের ঠিকাদার ছিলেন জানান ডিএমপির যুগ্ম পুলিশ কমিশনার। বলেন, দুদকের প্রধান কার্যালয়, বিভিন্ন সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের নামে বিভিন্ন পৌরসভার মেয়র, ওয়ার্ড কাউন্সিলর, চেয়ারম্যান, বিভিন্ন সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা/কর্মচারী, হিসাবরক্ষক, সার্ভেয়ারদেরকে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে ভয় দেখিয়ে টাকা হাতিয়ে নেওয়াই ছিল তার কাজ।
আরেক গ্রেপ্তার সোহাগ পাটোয়ারী একসময় ম্যানেজমেন্ট এবং ডিজে পার্টিতে কাজ করতেন জানিয়ে খোন্দকার নুরুন্নবী বলেন, সেই থেকে বিভিন্ন ছেলে-মেয়ে এবং দালালের সঙ্গে তার সখ্যতা গড়ে ওঠে।
দুদকের ওয়েবসাইট থেকে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার ব্যক্তির নামে গঠন করা অভিযোগ, অভিযোগ থেকে দায়মুক্তি সংক্রান্ত চিঠি ডাউনলোড করে তা সেলিমের কাছে পাঠাতেন সোহাগ। এছাড়া টার্গেট করা ব্যক্তিদের নামে দুর্নীতির অভিযোগের চিঠি বানিয়েও পাঠাতেন। সেলিম এভাবে প্রাপ্ত ব্যক্তিদের মোবাইল নম্বার
সেলিম এভাবে ওই ব্যক্তিদের মোবাইল নম্বর আব্দুল হাই ও আজমির হোসেনকে দিয়ে সংগ্রহ করাতেন। তারপর দুদকের কমিশনার, মহাপরিচালক, পরিচালক ও উপ-পরিচালকদের নাম ব্যবহার করে টাকা হাতিয়ে নিতেন। প্রাথমিক পর্যায়ের কাজ করতো বলে তারা ৮০ হাজার থেকে তিন লাখ টাকা করে বিভিন্ন জনের কাছ থেকে হাতিয়ে নিতেন। এক্ষেত্রে তারা দুদক কার্যালয়ের সামনে অথবা সেগুনবাগিচাস্থ নাট্য মঞ্চ এলাকার আশপাশে টার্গেট ব্যক্তিদের আসতে বলে ক্যাশ অথবা নগদ ফাইন্যান্সিয়াল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নিতো।
ডিএমপি কর্মকর্তা বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা লাখ লাখ টাকা ঘুষ হিসেবে গ্রহণ করেছে বলে স্বীকার করেছেন। এভাবে তারা এক বছরে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। মাদকাসক্ত এবং অসামাজিক কাজে অভ্যস্ত আসামিরা মুহূর্তেই টাকা খরচ করে নতুন প্রতারণায় হাত দিতো।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত এই চক্রের সঙ্গে দুদকের কোনো কর্মকর্তা কর্মচারীর সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি।