× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

পদ্মা ব্যাংকে টাকা রেখে ফেঁসে গেছে তিতাস

মামুন-অর-রশিদ

প্রকাশ : ২০ জুলাই ২০২৩ ১০:০৬ এএম

আপডেট : ২০ জুলাই ২০২৩ ১০:০৭ এএম

ফাইল ফটো

ফাইল ফটো

পদ্মা ব্যাংকে ৫৩ কোটি টাকা রেখে ফেঁসে গেছে তিতাস গ্যাস বিতরণ কোম্পানি। নিজেরা তো বটেই পেট্রোবাংলা এমনকি জ্বালানি বিভাগের মাধ্যমে চাপ দিয়েও এই টাকা উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।

তিতাস বলছে ২০১৫-১৬ অর্থবছর থেকে ২০১৭-১৮ পর্যন্ত তিন বছর মেয়াদে তারা পদ্মা ব্যাংকে ৫৩ কোটি টাকা ফিক্সড ডিপোজিট হিসাবে রাখে। সেই টাকা বেড়ে ৫৮ কোটি ৬১ লাখ টাকা হয়। কিন্তু বিনিয়োগকৃত টাকা তুলতে গেলেই বাধে গোল। প্রাপ্য টাকা পরিশোধে গড়িমসি করছে পদ্মা ব্যাংক। তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ গত প্রায় পাঁচ বছর ধরে টাকা উদ্ধারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। 

সূত্র বলছে, পদ্মা ব্যাংকের এমন আচরণে অন্য বেসরকারি ব্যাংকের ওপর থেকেও আস্থা হারিয়ে ফেলেছে রাষ্ট্রীয় এই কোম্পানিটি। যার ফলে বিভিন্ন বেসরকারি ব্যাংকে গচ্ছিত টাকা তুলে নিয়েছে তারা। কোম্পানি সূত্রে আরও জানা যায়, ২০১৫-১৭ থেকে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে পদ্মা ব্যাংকের পাঁচটি শাখায় স্থায়ী আমানত হিসেবে ৫৩ কোটি টাকা রাখা হয়। ২০২০ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত সময়ে সুদে-আসলে যার পরিমাণ দাঁড়ায় ৫৮ কোটি ৬১ লাখ টাকা। 

২০১৩ সালে ফারমার্স ব্যাংক হিসেবে যাত্রা শুরু করলেও শুরু থেকে ঋণ কেলেঙ্কারিসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে বিতর্কিত হয়ে পড়ে ব্যাংকটি। যার পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৯ সালে ২৯ জানুয়ারি নাম পরিবর্তন করে এটি পদ্মা ব্যাংক নামে নতুনভাবে আত্মপ্রকাশ করে। একই সঙ্গে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদেও পরিবর্তন আসে। তিতাস কর্তৃপক্ষ ওই সময়ই নিজেদের অর্থ তুলে আনার চেষ্টা করলেও পদ্মা ব্যাংকের কাছ থেকে কোনো ইতিবাচক সাড়া পায়নি।

বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধানে নেমে দুই ধরনের তথ্য পাওয়া যায়। তিতাসের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, এভাবে বিনিয়োগকৃত অর্থ কোনো ব্যাংক আটকে রাখতে পারে, এটি চিন্তাই করা যায় না। কিছু কিছু কর্মকর্তা অতিরিক্ত মুনাফার আশায় নতুন ব্যাংকে টাকা রেখেছিল। এক্ষেত্রে ঝুঁকি বিবেচনা করা হয়নি।

এ বিষয়ে তিতাসেরই অন্য একজন কর্মকর্তা বলেন, এ ধরনের বড় বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কিছু সুবিধা দিয়ে থাকে। সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে বড় বিনিয়োগ সংগ্রহের জন্য কর্মকর্তাদের প্রণোদনাও দেয় ব্যাংকগুলো। ফলে অনেক সময় ঝুঁকি বিবেচনা না করেই ওইসব ব্যাংকে আমানত রাখা হয়। অনেক ক্ষেত্রে দীর্ঘদিন এসব আমানত ব্যাংকেই পড়ে থাকে। যখন এই টাকা পাওয়া যায় না, তখনই বিষয়টি জানাজানি হয়।

তিতাসের আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী প্রতি বছর কোম্পানিটি ১৮ হাজার কোটি টাকার বেশি রাজস্ব আদায় করে। তিতাস কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠান নয়। ফলে এই অর্থ কোনো না কোনো ব্যাংকে জমা রাখা হয়। বছরে তিতাস যে লাভ করে তার একটি অংশ ব্যাংকে ফিক্সড ডিপোজিট হিসাব খুলে রাখা হয়। সেই ধারাবাহিকতায় পদ্মা ব্যাংকেও তারা টাকা রেখেছিল।

এ বিষয়ে পদ্মা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তারেক রিয়াজ খান প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, এর আগে ফারমার্স ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের কিছু ভুল সিদ্ধান্তের কারণে এ ধরনের সংকট সৃষ্টি হয়েছে। আমরা পদ্মা ব্যাংকের দায়িত্ব নেওয়ার পর এ ধরনের ঘটনা ঘটেনি।

তিনি বলেন, সরকারি ৫০ প্রতিষ্ঠানের ১ হাজার ৯৫০ কোটি টাকা আমাদের কাছে ছিল। তারা চাইলেই সে অর্থ আমরা ফেরত দিতে পারছি না। এরপরও আমরা ২০২২ সাল পর্যন্ত ২২৫ কোটি টাকা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে দিয়েছি। তিনি স্বীকার করেন, এভাবে গ্রাহকের অর্থ আটকে রাখার এখতিয়ার ব্যাংকের নেই।

সম্প্রতি জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ডের কিছু অর্থ নিয়ে বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের সচিবের সঙ্গে তাদের একটি বৈঠকের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা তাদেরকে ১৫ বছরের মধ্যে অর্থ ফেরত দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলাম। তারা সেটি মানেনি। এখন অন্য পথ বের করার চেষ্টা চলছে। 

পদ্মা ব্যাংকের এমডি আরও বলেন, সব অর্থ ফেরত দিয়ে দিলে আমরা আমাদের ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের অর্থ যথাসময়ে পরিশোধ করতে পারব না। তিনি বলেন, আমরা পদ্মা ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের দায়িত্ব নেওয়ার পর যারা এখানে টাকা রেখেছেন তাদের অর্থ ফেরত পেতে কোনো বিলম্ব হচ্ছে না।

জানতে চাইলে তিতাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী হারুনুর রশিদ মোল্ল্যা প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, পদ্মা ব্যাংকের কাছ থেকে এফডিআরের টাকা ফেরত না পাওয়ার বিষয়টি পেট্রোবাংলা এবং জ্বালানি বিভাগকে জানানো হয়েছে। সেখান থেকেও চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু এখনও টাকা পাওয়া যায়নি।

পদ্মা ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এ বিষয়ে কথা বলতে তার কাছে এসেছিলেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তারা আমাকে আশ্বস্ত করেছিলেন, অল্প-অল্প করে এই অর্থ দিয়ে দেওয়া হবে। আমরা তাদের বলেছি ৫-১০ কোটি টাকা করে হলেও দিয়ে দিন। কিন্তু সেই আলোচনাও অনেক আগের। এখনও তারা একটি টাকাও দেয়নি।’

টাকা আদায় করতে না পারার বিষয়টি ২০২১ সালের ২৮ জানুয়ারি তিতাসের ৭৯০তম বোর্ড সভায় উপস্থাপন করা হয়। ওই সভায় পদ্মা ব্যাংকে রাখা অর্থ সুদে-আসলে আদায় করার জন্য পেট্রোবাংলার মাধ্যমে জ্বালানি বিভাগের দিকনির্দেশনা চাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এরপর ওই বছরের ১৬ মার্চ, ২৪ মে এবং ২৫ অক্টোবর এ বিষয়ে তিনটি চিঠি দেওয়া হয়।

তিতাস সূত্র বলছে, বিষয়টি নিয়ে পেট্রোবাংলা এবং জ্বালানি বিভাগের পক্ষ থেকেও পদ্মা ব্যাংকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু তাতেও আশাব্যঞ্জক ফল পাওয়া যায়নি। যোগাযোগ করা হলে পদ্মা ব্যাংকের পক্ষ থেকে সবসময় বলা হয়, তারা অর্থ পরিশোধ করে দেবে। কিন্তু বাস্তবে সেটি আর হয় না। 

জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, এক্ষেত্রে তিতাস কর্তৃপক্ষ পদ্মা ব্যাংকের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে অভিযোগ করতে পারে। এর বেশি কিছু আমি এ বিষয়ে বলতে চাই না।

তিতাসের পরিচালক (অর্থ) অপর্ণা ইসলাম গত সোমবার বলেন, পদ্মা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমাদের কাছে এসেছিলেন। কিন্তু এখনও তারা আমাদের কোনো অর্থ ফেরত দেয়নি। আমরা বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংককেও জানিয়েছি। 

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা