প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১১ জুলাই ২০২৩ ১৬:৫৯ পিএম
আপডেট : ১১ জুলাই ২০২৩ ১৭:২৮ পিএম
সংবাদ সম্মেলনে ব্রিফ করছেন অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ। প্রবা ফটো
এক সময় ডিবির সোর্স হিসেবে কাজ করতেন শহিদুল ইসলাম মাঝি ওরফে শহিদ মাঝি। ২০১২ সালে তিনি গড়ে তোলেন ডাকাত দল। প্রায় একযুগ ধরে ডিবি পরিচয়ে ডাকাতি করে আসছিল তার দলের সদস্যরা।
এ পর্যন্ত সাতটি মামলা হয়েছে শহিদ মাঝির বিরুদ্ধে। সর্বশেষ ক্যান্টনমেন্ট থানার একটি মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করেছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) গুলশান বিভাগ। তার দলের মোট সাত জন এবং ডাকাতির প্রস্তুতিকালে ধরা পড়ে অপর একটি গ্রুপের ৯ জন। দুই দলই একে অপরের পরিচিত।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন-- মো. শহিদুল ইসলাম মাঝি ওরফে শহিদ মাঝি (৫৩), শ্রী সাগর চন্দ্র মালি (৩০), শাহ আলম হাওলাদার (৩৫), মো. কামরুল ইসলাম ওরফে রমিজ তালুকদার (৩০), মো. মাকসুদুল মোমিন ওরফে শামীম (৪৩), মো. হাসান (৩৮), মো. নুরুল ইসলাম (৩০), মো. খলিলুর রহমান ওরফে মাগার (৪৬), মো. আকরাম হোসেন (৩৮), মো. দ্বীন ইসলাম ওরফে কাউছার আহম্মেদ (৩৫), মো. ইলিয়াছ আহম্মেদ ওরফে নিরব (৩২), মো. ফরহাদ আলী (৬৬), মো. রিয়াজ হোসেন হাওলাদার ওরফে রিয়াজুল (৩১), মো. শফিকুল ইসলাম লিটন (৫০), মো. সেরাজুল ইসলাম (৪৪) ও মো. জহিরুল ইসলাম পিন্টু (৩৮)।
গ্রেপ্তারের সময় তাদের কাছ থেকে ৩০টি মোবাইল ফোন, একটি মাইক্রোবাস, ডিবি জ্যাকেট, হ্যান্ডকাফ ও ডাকাতি কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। গত সোমবার গাজীপুরের কালিয়াকৈর ও ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
মঙ্গলবার (১১ জুলাই) দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।
তিনি জানান, শহিদ মাঝি এক সময় ডিবির সোর্স হিসেবে কাজ করতেন। ২০১২ সালে শহিদুল মাঝি অন্যদের বুঝিয়ে ডাকাত দল তৈরি করেন। তার দলে ১০ জন সদস্য রয়েছে। আমরা ৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছি। অন্যদের নাম-পরিচয় পেয়েছি, তাদেরও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
হারুন অর রশীদ বলেন, গত ১৭ জুন মামলার বাদী আব্দুল আজিজ (৩১) ব্যবসায়িক প্রয়োজনে তার ভগ্নিপতির মাধ্যমে ভগ্নিপতির বন্ধুর কাছ থেকে ১৩ লাখ টাকা ধার নেন। ওইদিন বিকালে পল্টন থানার বায়তুল ভিউ মার্কেটসংলগ্ন কার্পেট মার্কেটের সামনে থেকে ১৩ লাখ টাকা নিয়ে ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেলযোগে তার খিলক্ষেতের বাসার উদ্দেশে রওনা হন। রাত ৭টা ৫৫ মিনিটে ক্যান্টনমেন্ট থানার জিয়া কলোনি এমপি চেকপোস্টের সামনে পৌঁছানো মাত্র অজ্ঞাতনামা ৩/৪ জন ব্যক্তি মাইক্রোবাসের মাধ্যমে মোটরসাইকেলটির গতিরোধ করেন। এর পর ডিবির পোশাক পরিহিত অজ্ঞাতনামা ৩/৪ জন তাকে জোর করে মাইক্রোবাসে উঠিয়ে হাত, পা ও চোখ বেঁধে এলোপাতাড়ি মারধর করে। এরপর ভয়ভীতি দেখিয়ে তার ১৩ লাখ টাকা, মানিব্যাগে থাকা ১৯ হাজার টাকা এবং তিনটি মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়। এ ছাড়া ভুক্তভোগীর বিকাশের এজেন্ট নম্বর পিন কোড জেনে ৩৭ হাজার টাকা তুলে নিয়ে নেয়। পরে বিভিন্ন স্থানে ঘোরাফেরা করে রাত ১১টার দিকে রূপগঞ্জ থানার কাঞ্চন পৌরসভার চরপাড়া সাকিন এলাকায় রাস্তার পাশে ফাঁকা জায়গায় ফেলে যায়।
একপর্যায়ে মামলাটির ছায়া তদন্তে নামে গোয়েন্দা পুলিশের গুলশান বিভাগের ক্যান্টনমেন্ট জোনাল টিম। ঘটনাস্থল পরিদর্শন, মামলার বাদীর বক্তব্য পর্যালোচনা ও তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় অপহরণ ও ছিনতাইয়ের সঙ্গে যুক্ত দলটিকে শনাক্ত করে ডিবি। গত ১০ জুলাই গাজীপুরের কালিয়াকৈর থানার মৌচাক এলাকায় অভিযান চালিয়ে আন্ডারগ্রাউন্ডে থাকা চক্রের মূলহোতা শহিদ মাঝিকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার দেওয়া তথ্যমতে, ডেমরার পাড়া ডগাইর ফার্মের মোড় এলাকা থেকে ডিবি লেখা কালো রঙের একটি হায়েস মাইক্রোবাস থেকে শ্রী সাগর চন্দ্র মালি, শাহ আলম হাওলাদার, মো. কামরুল ইসলাম ওরফে রমিজ তালুকদার ও মো. মাকসুদুল মোমিন ওরফে শামীমকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃতদের তথ্যমতে, পাড়া ডগাইরের একটি বাসা থেকে মো. হাসান, মো. নুরুল ইসলামকে হেফাজতে নেয় ডিবি। ধারাবাহিক অভিযান পরিচালনা করে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ডাকাতির প্রস্তুতিকালে খিলক্ষেত থানার ৩০০ ফিট রোডের অস্ট্রেলিয়ান স্কুলের সামনে থেকে আরও ৯ জনসহ ১৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃতরা জানিয়েছে, তারা পারস্পরিক যোগসাজশে মাইক্রোবাসযোগে মানি এক্সচেঞ্জ ও ব্যাংক এলাকায় বিশেষত মতিঝিল, পল্টন, ধানমন্ডি ও গুলশান থেকে কোনো ব্যক্তি টাকা নিয়ে বের হওয়ার সময় তাদের টার্গেটকে ফলো করে। ২/৩ জন মোটরসাইকেল নিয়ে টার্গেটের পিছু নেয়। পথিমধ্যে সুবিধাজনক স্থানে মাইক্রোবাস নিয়ে তাদের অগ্রগামী টিম প্রস্তুত থাকে। সুবিধাজনক জায়গায় মাইক্রোবাস এসে টার্গেটকে গতিরোধ করে ভুক্তভোগীকে মাইক্রোবাসে উঠিয়ে নেয় এবং ভুক্তভোগীর সর্বস্ব লুটে নিয়ে তাকে নির্জনস্থানে ফেলে যায়। ডাকাত দলের সদস্যদের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে।