শরীয়তপুর প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৪ জুন ২০২৩ ২০:০২ পিএম
আপডেট : ০৪ জুন ২০২৩ ২০:৫১ পিএম
জাজিরার নাওডোবায় আমজাদিয়া একাডেমির অফিস সহকারীর বিরুদ্ধে ছাত্রীকে শ্লীলতাহানির অভিযোগের পর শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন ও বিক্ষোভ। ছবি : প্রবা
শরীয়তপুরের জাজিরার নাওডোবায় আমজাদিয়া একাডেমির অফিস সহকারী মাসুদুর রহমানের বিরুদ্ধে অষ্টম শ্রেণির এক ছাত্রীকে শ্লীলতাহানির অভিযোগে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছেন বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা।
রবিবার (৪ জুন) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ওই বিদ্যালয় থেকে মিছিল নিয়ে পদ্মা দক্ষিণ থানায় যান শিক্ষার্থীরা। পরে দুপুরের দিকে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর বাবা মাসুদুর রহমানের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করেন।
আমজাদিয়া একাডেমি ও পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানা সূত্রে জানা গেছে, শরীয়তপুরের জাজিরার নাওডোবা ইউনিয়নে অবস্থিত আমজাদিয়া একাডেমি। অভিযোগ উঠেছে গত মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অষ্টম শ্রেণির এক ছাত্রীকে ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অফিস সহকারী মাসুদুর রহমান তার অফিস কক্ষে ডেকে নেন। এরপর ওই শিক্ষার্থীর শরীরে হাত দেওয়া ছাড়াও আপত্তিকর আচরণ করেন। তখন শিক্ষার্থীর চিৎকারে অন্য শিক্ষার্থীরা এগিয়ে গেলে ওই ছাত্রীকে ছেড়ে দেন।
পরের দিন ওই ছাত্রী প্রধান শিক্ষকের কাছে এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ করে। বৃহস্পতিবার প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীরা ওই প্রতিষ্ঠানের সভাপতি ও নাওডোবা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে গিয়ে বিক্ষোভ করে। পরে বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটি অভিযুক্ত মাসুদুর রহমানকে এক মাসের জন্য সাময়িক বরখাস্ত করেছে। আর ঘটনাটি তদন্ত করার জন্য ছয় সদস্যর তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।
রবিবার প্রতিষ্ঠানটির সকল শিক্ষার্থীরা শ্রেণিকক্ষ থেকে বের হয়ে সকাল সাড়ে ১০টায় মাঠে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করে। পরে তারা নাওডোবা বাজারে বিক্ষোভ মিছিল করে। এরপরে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানায় যায়। বেলা ১১টা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানা ঘিরে রাখে।
এ সময় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শেখ মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান শিক্ষার্থীদের লিখিত অভিযোগ দেওয়ার পরামর্শ দেন। এরপর শিক্ষার্থীরা থানা ছেড়ে চলে যান। পরে ওই ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর বাবা থানায় গিয়ে লিখিত অভিযোগ করেন।
দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী মাসুম বলেন, 'শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার আলো নিতে এসে যদি আমাদের বোনের সাথে এরকম ঘটনা হয় তাহলে আমরা কীভাবে নিরাপদে থাকি। এই শ্লীলতাহানি যিনি ঘটিয়েছেন তিনি মানুষরূপী পশু। এই পশুর স্থায়ী বরখাস্ত ও আইনের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি। তা না হলে আমাদের আন্দোলন আমরা চালিয়ে যাব।'
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর বাবা বলেন, 'আমি ব্যবসা করি বাড়ির কাছাকাছি স্কুল সবসময় মেয়ের খবর নেওয়া হয় না। গত মঙ্গলবার সকালে আমার মেয়ে স্কুলে আসলে অফিস সহকারী মাসুদ আমার মেয়েকে কক্ষের ভেতরে ডেকে নিয়ে বাজে ঘটনা ঘটায় যা আমি বলতে পারব না। একজন বাবা হিসেবে কীভাবে সহ্য করি। মাসুদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জন্য থানায় অভিযোগ করেছি। ওর কঠোর শাস্তি দাবী করছি, যেন কেউ আর এমন পশুর মতো আচরণ কোনো শিক্ষার্থীর সাথে না করে।'
আমজাদিয়া একাডেমির প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ জিয়া বলেন, এক শিক্ষার্থীর শ্লীলতাহানির লিখিত অভিযোগে মাসুদকে বরখাস্ত করা হয়েছে। এ ঘটনায় ছয় সদস্যর তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাকে স্থায়ীভাবে বরখাস্ত করা হবে। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের বিষয়টি বুঝিয়ে শ্রেণিকক্ষে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছি।
জানতে চাইলে আমজাদিয়া একাডেমির ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও নাওডোবা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলমগীর হোসেন বলেন, এক ছাত্রী শ্লীলতাহানির অভিযোগ এনেছে আমাদের অফিস সহকারী মাসুদের বিরুদ্ধে। আমরা তাৎক্ষণিকভাবে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করেছি। সাথে সাথেই ৬ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। পরবর্তীতে তদন্ত কমিটির রিপোর্ট অনুযায়ী তিনি দোষী হলে তার বিরুদ্ধে স্থায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ ব্যাপারে পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, একটি বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী মাসুদের বিরুদ্ধে এক শিক্ষার্থী শ্লীলতাহানির বিষয়ে ওই শিক্ষার্থীর বাবা একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন। এখন অবশ্যই পরবর্তী আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।