প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৬ মে ২০২৩ ০০:২৮ এএম
আপডেট : ০৬ মে ২০২৩ ১০:৫৮ এএম
রবিউল ইসলাম ওরফে আরাভ খান। ছবি : সংগৃহীত
পুলিশ পরিদর্শক মামুন খান হত্যা মামলায় পলাতক আসামি রবিউল ইসলাম ওরফে আরাভ খানের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারির পরদিন তাকে গ্রেপ্তারের খবর আসে। তবে সংযুক্ত আরব আমিরাতে (ইউএই) বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কেউ এ ব্যাপারে কোনো কথা বলেনি।
বৃহস্পতিবার (৪ মে) রাতে আরাভ খান ফেসবুক লাইভে এসে দাবি করেন তিনি ইন্টারপোলের মাধ্যমে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। এক মাস ৭ দিন জেলও খেটেছেন।
এরপর সংযুক্ত আরব আমিরাতে (ইউএই) বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আবু জাফরের কাছে আরাভের গ্রেপ্তারের গ্রেপ্তারের বিষয়টি জানতে চাওয়া হলে প্রতিদিনের বাংলাদেশকে তিনি বলেন, আরাভ খান গ্রেপ্তার হয়েছিলেন এই তথ্য আমাদের কাছে ছিল। এরপর কি হয়েছে সে তথ্য নেই।
আরাভ খান গ্রেপ্তার হলেও সে তথ্য কেনো জানানো হলো না- এমন প্রশ্নে আবু জাফর বলেন, এটা বিদেশের মাটিতে হচ্ছে, যাদের জানানো দরকার তাদের জানানো হয়েছে।
বাংলাদেশের পুলিশ বা সংশ্লিষ্টদের জানানো হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, যখন যেখানে জানানো দরকার আমরা জানিয়েছে।
অন্য এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আরাভ খান ভারতীয় নাগরিক। আমরা বিদেশি নাগরিকদের ব্যাপারে কোনো কথা বলতে চাই না। যতোদিন পর্যন্ত তার ভারতীয় নাগরিকত্ব আছে ততোদিন আমরা কথা বলতে পারবো না।
আরও তথ্যের জন্য তিনি ভারতের দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দেন। তবে বাংলাদেশ দূতাবাস ভারতের কোনো অথরিটির সঙ্গে যোগাযোগ করেছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের যা দায়িত্ব তা যথাযথভাবে পালন করা হয়েছে।
ফেসবুক লাইভে এসে আরাভ খান বলেন, ‘যখন ইন্টারপোল রেড অ্যালার্ট জারি করে, আমাকে উনারা ফোন করেন। আমাকে বলে, আপনার নামে একটা ফাইল এসেছে, আপনি আসুন। আপনাকে অ্যারেস্ট করব। তো অ্যারেস্ট করার থেকে আপনার আসা সর্বোত্তম।’
তিনি বলেন, ‘আমি দেখলাম- আমি যদি পালিয়ে বেড়াই, তাহলে আমাকে তো অ্যারেস্ট করবে। আমাকে ইন্টারপোলে নিয়ে গেল। ইন্টারপোলে রাখলো, এক মাস ৭ দিন। আমার জীবন থেকে এক মাস ৭ দিন চলে গেছে ইন্টারপোলের জেলে। ইন্টারপোলে আমি বড় বড় আসামিদের সাথে জেল খেটেছি।’
এদিকে আরাভ খানকে দেশে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে কিনা জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, এটা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে, আশা করি জটিলতা কেটে যাবে।
গত ২৪ মার্চ ইন্টারপোলের রেড নোটিস তালিকায় নাম ওঠে আরাভের। এর দুই দিন আগে ২১ মার্চ তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে সক্রিয় ছিলেন।
আরাভ খানের ফেসবুক টাইমলাইনে দেখা যায়, সাময়িক বিরতির পর গত ২১ এপ্রিল তিনি ফেসবুকে সক্রিয় হন। এরপর কয়েক দিন নিষ্ক্রিয় থাকলেও গত দুই দিন ধরে তিনি ফেসবুকে সক্রিয় রয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (৪ মে) তিনি এক ঘণ্টার ব্যবধানে দুটি স্ট্যাটাস দেন। প্রথম স্ট্যাটাসে শেয়ার করা একটি ছবিতে দুবাইয়ে নিজের নামে করা আরাভ জুয়েলারি শপের সামনে তাকে দাঁড়ানো অবস্থায় দেখা যায়। ওই স্ট্যাটাসে তিনি মন্তব্য করেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ, আজ থেকে আরাভ জুয়েলারি ওপেন করলাম। আপনারা সকলে আমন্ত্রিত। আপনারা যে ভালোবাসা দিয়েছেন, দোয়া করেছেন। আপনাদের জন্য সর্বদা নামাজ পড়ে আমার অন্তর থেকে দোয়া করব। আমিন।’
এর এক ঘণ্টা পর দেওয়া অপর এক স্ট্যাটাসে আরাভ লিখেছেন, প্রতিদিনের প্রতিমুহূর্তর গোল্ড রেট জানতে ডাউনলোড করুন আরাভ জুয়েলার্সের ব্রোকার হাউস অ্যাপ। আরাভ জুয়েলারির লোগো শেয়ার করে তিনি লিখেছেন, ‘এই লোগোর ওপর টাচ করলে অ্যাপটি পাবেন।’
গত ২১ এপ্রিল ফেসবুকে সক্রিয় হয়ে আরাভ খান লেখেন, ‘সবাইকে ঈদ মোবারক! আপনাদের সকলের ঈদ সুখী ও শান্তিপূর্ণ হোক। নামাজ পড়ি এবং সবার জন্য দোয়া করি।’ গত মঙ্গলবার আবারও ফেসবুকে সক্রিয় পাওয়া যায় আরাভকে। ওইদিন এক স্ট্যাটাসে তিনি লিখেছেন, ‘রাখে আল্লাহ মারে কে, আলহামদুলিল্লাহ।’ গত বুধবার অপর এক স্ট্যাটাসে তিনি লিখেছেন, ‘৯৫% সাংবাদিক দুঃখিত সাংঘাতিক, যতই তুমি মানুষের পা ধরে নিচে নামাতে চাইবে ততই সে উপরে উঠবে ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ মহান।’ ওই স্ট্যাটাসে তিনি একটি নীল রঙের প্রাইভেট কারের পাশে সুটেট-বুটেট হয়ে সানগ্লাস পরিহিত ছবি পোস্ট করেন। ক্যাপশনে লেখেন, ‘বুগাটি উইথ আরাভ খান।’
এর আগে গত ২১ মার্চ সন্ধ্যা ৭টা ৪৭ মিনিটে ফেসবুকে একটি পোস্ট শেয়ার করা হয়। এতে লেখা হয়, ‘আসসালামু আলাইকুম। প্রিয় দেশবাসী আপনারা আমার জন্য দোয়া করবেন। আল্লাহ যেন সহায় হন।’ এরপর থেকে তাকে মাসখানেক ফেসবুকে নিষ্ক্রিয় দেখা গেছে। এমনকি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কোনো অনুষ্ঠানেও তার উপস্থিতি দেখা যায়নি। তবে ফেসবুকের মেসেঞ্জারে তিনি মাঝেমধ্যেই সক্রিয় থেকেছেন। যদিও কোনো স্ট্যাটাস দেননি।’
প্রসঙ্গত, প্রতিদিনের বাংলাদেশ ১৫ মার্চ আরাভ খানকে নিয়ে ‘কার ডাকে দুবাইয়ে সাকিব আল হাসান’ শীর্ষক সাড়াজাগানো প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ওই প্রতিবেদনে পুলিশ হত্যা মামলার আসামি রবিউল ইসলাম ওরফে আপন কীভাবে আরাভ খান হলেন, কীভাবে ভারতের নাগরিকত্ব নিয়ে বিয়ে, পাসপোর্ট এবং দুবাইয়ে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন, তা ওই প্রতিবেদনে সবিস্তারে প্রকাশ করা হয়। আরাভ খানের দুবাইয়ে জুয়েলারি শপ উদ্বোধন করতে যান ক্রিকেট অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানসহ কিছু তারকা। পুলিশের নজরে আসে বিষয়টি। দেশজুড়ে শুরু হয় আলোচনা-সমালোচনা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আরাভ খান তখন আলোচনার কেন্দ্রে চলে আসেন। এর মধ্যে তার দুবাই ত্যাগ ও গ্রেপ্তারের গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে। গত দুই দিন ফেসবুকে তার সক্রিয়তা প্রমাণ করে তিনি দুবাই ত্যাগ করেননি এবং গ্রেপ্তারও হননি।
এ প্রসঙ্গে দুবাই থেকে ফোনে আরাভ খান প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘আমি অপরাধী নই। আমি পুলিশ হত্যা মামলার আসামিও না। তারপরও আমার বিরুদ্ধে রেড নোটিস জারি হয়েছে। জীবন থেকে চল্লিশ দিন হারিয়ে গেছে। ব্যবসার ক্ষতি হয়েছে। সেসব সমস্যার সমাধান করেই আমি নতুন করে ব্যবসা শুরু করেছি।’
পুলিশ সদর দপ্তরের মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) মো. মনজুর রহমান প্রতিদিনের বাংলাদেশকে জানান, ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারির পর আরাভ খানের বিষয়ে নতুন করে কোনো তথ্য তাদের কাছে নেই। যারা এ বিষয়টি নিয়ে কাজ করছেন তারা বলতে পারবেন। এর বাইরে তাদের কোনো কিছু জানানোর নেই।’