চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০২ এপ্রিল ২০২৩ ০১:২৬ এএম
শনিবার চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন ‘মধুমতি সমাজ উন্নয়ন সংস্থা’র প্রতারণার শিকার কয়েকজন গ্রাহক। প্রবা ফটো
চাঁপাইনবাবগঞ্জে ‘মধুমতি সমাজ উন্নয়ন সংস্থা’ নামে একটি বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) ৩৫ হাজার গ্রাহকের ১০৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ করে পালিয়ে গেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। শনিবার (১ এপ্রিল) দুপুরে চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন প্রতারণার শিকার কয়েকজন গ্রাহক।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে প্রতারণার শিকার মো. নাসিমুদ্দিন বলেন, মধুমতি সমাজ উন্নয়ন সংস্থা জেলাজুড়ে ৪৬টি শাখায় অবৈধ ক্ষুদ্র ঋণের কার্যক্রম পরিচালনা করে সাধারণ জনগণকে এক লাখ টাকা জমা রাখলে মাসে ১,২০০ টাকা লাভ দেওয়া হবে এবং জমাকৃত টাকা চাওয়া মাত্র ফেরত দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে আমানত সংগ্রহ করে। এভাবে জেলার পাঁচ উপজেলায় ৩৫ হাজার গ্রাহকের কাছ থেকে ১০৫ কোটি টাকা সংগ্রহ করে। তবে দফায় দফায় প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিভিন্ন কৌশলে সময় পার করে এবং টাকা না দিতে সংস্থাটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মাসুদ রানা স্বেচ্ছায় অস্ত্রসহ আটকের নাটক করেন।
মাসুদ রানা স্বেচ্ছায় জেলে থাকলেও জামিনে মুক্তি চান না দাবি করে নাসিমুদ্দিন বলেন, আটকের পর থেকে জেল থেকে প্রতারক চক্রের অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। তার আটকের পর থেকেই প্রতিষ্ঠানের পুরো লেনদেন এবং দৈনিক হিসাব-নিকাশের অনলাইন সার্ভার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
গত ৫ মাস থেকে লাভ প্রদানসহ আমানতের টাকা ফেরত দেওয়া বন্ধ রেখেছে তারা। অথচ জনগণের টাকা নিয়ে মাসুদ রানা ও তার স্বজনরা টাকার পাহাড় গড়েছে। তার আটকের পর থেকেই পরিবারের লোকজন পলাতক রয়েছে। জেলার বাইরে দেশের বিভিন্ন স্থানে ফ্ল্যাট-বাড়িসহ সম্পদ গড়েছে তারা। এদিকে মধুমতির কর্মকর্তা ও মাসুদের পরিবারের কয়েকজনসহ ১২ জনের নামে ওয়ারেন্ট জারি রয়েছে।
টাকা ফেরত না পাওয়া ৭ গ্রাহকের মৃত্যু হয়েছে দাবি করে নাসিমুদ্দিন বলেন, মাসুদ রানা আটকের পর মধুমতি গ্রুপের চেয়ারম্যান ও মাসুদ রানার স্ত্রী মাহমুদা খাতুন পলাতক রয়েছেন। সেই সঙ্গে চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ঢাকার বিভিন্ন স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে মধুমতির অর্থ, গাড়ী ও কলকারখানার মেশিন। এমডি আটকের পর সকল দায়-দায়িত্ব চেয়ারম্যান মাহমুদা খাতুন এবং মাসুদ রানার ভাই ও মধুমতির ফ্যাক্টরি পরিচালক ফারুক হোসেনের নেওয়ার কথা থাকলেও তারা গ্রাহকের অর্থ আত্মসাতে লিপ্ত হয়েছে।
এ নিয়ে জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ প্রদানসহ আদালতে গ্রাহকরা কয়েকটি মামলা দায়ের করলেও কোনো সুরাহা হয়নি। এ ছাড়া গত ৯ মার্চ শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনে একটি মানববন্ধন করে ইউএনও মহোদয়কে অভিযোগ দিলেও এর কোনো সমাধান হয়নি।
সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগীর মধ্যে উপস্থিত ছিলেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার রোকেয়া বেগম, দেলশাদ আলী, মজিবুর রহমান, পলাশ সাহা, রমেশ চন্দ্র দাসসহ অনান্যরা।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক দেলশাদ আলী নিজের ৩৬ লাখ এবং দুই ছেলের ১০ লাখ মিলে মোট জমা রেখেছিলেন ৪৬ লাখ টাকা। জমা টাকা ফেরত না পাওয়ায় এখন চরম অনিশ্চয়তায় পড়েছেন দুই ছেলেকে বিদেশ পাঠানো নিয়ে।
বীর মুক্তিযোদ্ধা রমেশ চন্দ্র দাস নিজের ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের মিলে মোট ২৪ লাখ ৫০ হাজার জমা রেখেছিলেন মধুমতি এনজিওতে। জমা রাখা টাকা ফেরত পেয়ে বাড়ি নির্মাণ করবেন বলে ইচ্ছা তার।
একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা রোকেয়া বেগম ১৩ লাখ টাকা রেখেছিলেন দুই মেয়ের বিয়ে দেবেন বলে। সেই টাকা না পেয়ে তাকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিচ্ছেন স্বামী। বিয়ে দিতে পারছেন না দুই মেয়ের।
এ ব্যাপারে মধুমতি গ্রুপের আত্মগোপনে থাকা বর্তমান চেয়ারম্যান মাহমুদা খাতুন ও পরিচালক ফারুক হোসেনের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাদের ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।