প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৭ মার্চ ২০২৩ ২১:৩৫ পিএম
আপডেট : ২৭ মার্চ ২০২৩ ২১:৫০ পিএম
স্থপতি ইমতিয়াজ মোহাম্মদ ভূঁইয়া হত্যায় জড়িত অভিযোগে গ্রেপ্তার তিনজন। সংগৃহীত ছবি
রাজধানীর তেজগাঁওয়ের স্থপতি ইমতিয়াজ মোহাম্মদ ভূঁইয়া হত্যার রহস্য উদঘাটন করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। এ ঘটনায় পাঁচজনকে শনাক্ত করা হয়েছে। তৃতীয় লিঙ্গের নারীসহ গ্রেপ্তার করা হয়েছে তিনজনকে। তারা হলেন, মিল্লাত হোসেন মুন্না ওরফে মুন, এহসান ওরফে মেঘ ও আনোয়ার হোসেন।
ডিবি তেজগাঁও জোনাল টিমের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (এডিসি) এনামুল হক মিঠু বলেন, গ্রেপ্তাররা সমকামী ও তৃতীয় লিঙ্গের সদস্য। তারা একটি গে চ্যাটিং অ্যাপসের মাধ্যমে আগে থেকে সমকামী বিভিন্ন লোকজনকে টার্গেট করে রুম ডেটের কথা বলে বাসায় ডেকে নেয়। এভাবে বিভিন্ন কায়দায় ব্ল্যাকমেইল করে টাকা-পয়সা হাতিয়ে আসছিল। নিহত ইমতিয়াজ মোহাম্মদ ভূঁইয়ার সঙ্গে আসামি আলিফের গে চ্যাটিং অ্যাপসের মাধ্যমে সম্পর্ক তৈরি হয়। তারই সূত্র ধরে গত ৭ মার্চ দুপুরে আলিফকে ফোন করেন ইমতিয়াজ। আলিফ তাকে কলাবাগান থানার ক্রিসেন্ট রোডের আরাফাতের বাসায় যেতে বলে। ওই বাসার একটি রুমে ইমতিয়াজ ও আলিফ আপত্তিকর অবস্থায় থাকাকালীন পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী আলিফের সহযোগী আরাফাত, মেঘ, মুন্না ও আনোয়ার প্রবেশ করে। তারা ওই ইস্যুকে কেন্দ্র করে ইমতিয়াজকে মারধর শুরু করে। এরপর তার কাছে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করে।
তিনি বলেন, ইমতিয়াজ টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তার বুকে, পিঠে প্রচণ্ড মারধর করে আসামিরা। যার কারণে ইমতিয়াজের মৃত্যু হয়। ইমতিয়াজের মৃত্যু নিশ্চিত হলে আসামিরা পরিকল্পনা করে কৌশলে বাসা থেকে ইমতিয়াজের মরদেহ বের করে গ্রেপ্তার মেঘের প্রাইভেট কারে তোলে। মরদেহ মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান এলাকার কামারকান্দা গ্রামের নবাবগঞ্জ হাইওয়ে রোডের পাশে ঝোপে ফেলে দেয়। পরে আলিফকে বাসাবো, আনোয়ারকে গ্রিনরোড নামিয়ে দিয়ে আরাফাত, মেঘ ও মুন্না প্রথমে নারায়ণগঞ্জ পরে চাঁদপুর, মুন্সীগঞ্জ ও কুমিল্লা হয়ে ব্রাক্ষণবাড়িয়ার আখাউড়া সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে ভারতে পালিয়ে যায়।
ডিবি তেজগাঁও বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) গোলাম সবুর বলেন, ভারতে আসামিদের অবস্থান শনাক্ত করে অভিযান চালায় দেশটির আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পরে আসামিরা ওই স্থান থেকে পালিয়ে পুনরায় অবৈধভাবে একই পথে বাংলাদেশে ফিরে আসে। এরপর ডিবি পুলিশের অভিযানে ইমতিয়াজ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সরাসরি জড়িত মিল্লাত হোসেন মুন্না, আনোয়ার হোসেন ও এহসান ওরফে মেঘকে গ্রেপ্তার করা হয়।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, ডিবির তেজগাঁও বিভাগের নেতৃত্বে টানা অপারেশনে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে নারায়ণগঞ্জ বন্দর থানার একটি গ্যারেজ থেকে হত্যাকাণ্ডের সময় ব্যবহৃত একটি গাড়ি জব্দ করা হয়। তবে আরাফাত আর আলিফ পালিয়ে গেছে ভারতে। তাদের ফিরিয়ে আনতে কাজ চলছে। চক্রটি এভাবে সমকামী ডেটিং অ্যাপের ফাঁদে ফেলে বহু মানুষের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
এদিকে স্থপতি ইমতিয়াজ মোহাম্মদ ভূঁইয়া হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে গ্রেপ্তার এহসান ওরফে মেঘ। অপর দুই আসামি মুন্না ও আনোয়ারকে ৪ দিনের রিমান্ড দিয়েছেন আদালত।
সোমবার (২৭ মার্চ) বিকালে মুন্সীগঞ্জ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রহিমা আক্তার এই আদেশ দেন। দুপুর আড়াইটার দিকে আসামিদের আদালতে প্রেরণ করে মুন্সীগঞ্জ ডিবি পুলিশ। কোর্ট পুলিশের পরিদর্শক জামাল হোসেন এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
ইমতিয়াজ তেজগাঁওয়ে নিজ ফ্ল্যাটে সপরিবারে বসবাস করতেন। ৭ মার্চ বাড়ি থেকে বের হয়ে কলাবাগান এলাকা থেকে নিখোঁজ হন। পরদিন তার স্ত্রী ফাহমিদা আক্তার কলাবাগান থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। পরদিন সন্ধ্যায় মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানের চিত্রকোট কামারকান্দা সেতু এলাকা থেকে অজ্ঞাতপরিচয় এক ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। আইনি প্রক্রিয়া শেষে ৯ মার্চ পুলিশ মরদেহ আঞ্জুমান মুফিদুলে হস্তান্তর করে। এরপর বেওয়ারিশ হিসেবে মুন্সীগঞ্জ পৌর এলাকার কবরস্থানে দাফন করা হয়। পরে আইনি প্রক্রিয়া শেষে কবর থেকে তোলার পর তার স্ত্রী ফাহমিদা আক্তার ও স্বজনেরা মরদেহটি ইমতিয়াজের বলে শনাক্ত করেন।