× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

পুলিশ কর্মকর্তা খুন হয়েছিলেন অফিসে, মামলায় আমি গুমের আসামি : আরাভ খান

প্রবা প্রতিবেদন

প্রকাশ : ১৬ মার্চ ২০২৩ ১৯:০২ পিএম

আপডেট : ১৬ মার্চ ২০২৩ ২২:৫৯ পিএম

আলোচিত প্রবাসী আরাভ খান। ছবি: ফেসবুক

আলোচিত প্রবাসী আরাভ খান। ছবি: ফেসবুক

ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান দুবাইয়ে ফেরারি আসামির জুয়েলারি দোকান উদ্বোধন করা নিয়ে প্রতিদিনের বাংলাদেশে খবর প্রকাশিত হওয়ার পর তোলপাড় চলছে দেশজুড়ে। এরই মধ্যে আসামি রবিউল ইসলাম ওরফে আরাভ খান বৃহস্পতিবার (১৬ মার্চ) ফেসবুক লাইভে এসে নিজের পক্ষে সাফাই গেয়েছেন। তবে তিনি স্বীকার করেছেন, পুলিশের ওই কর্মকর্তার মরদেহ গুম করার সঙ্গে জড়িত থাকলেও খুনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না।

গত বুধবার সাকিব আল হাসান, হিরো আলমসহ বাংলাদেশের বেশ কয়েকজন তারকাকে দুবাই নিয়ে জুয়েলারি শপ উদ্বোধন করেন আসামি আরাভ।
২০১৮ সালে ঢাকায় পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) পরিদর্শক মামুন ইমরান খুন হন। এই মামলায় বাংলাদেশ পুলিশ আদালতে যে অভিযোগপত্র দিয়েছে সেখানে আসামির তালিকায় আরাভ নামে কেউ নেই। আসামির তালিকায় ‘মোঃ রবিউল ইসলাম @ আপন @ সোহাগ @ হৃদয় @ হৃদি’ নামে একজনকে দেখা যাচ্ছে। অভিযোগপত্রে পুলিশ তার নাম এভাবেই লিখেছে। পুলিশ বলছে, আসামি ভারতীয় পাসপোর্ট নিয়ে দুবাই গেছেন, যেখানে তার নাম লেখা রয়েছে ‘আরাভ খান’। তার গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জের কোটালিপাড়ার হিরন ইউনিয়নে। এলাকায় ‘সোহাগ মোল্লা’ নামে পরিচিত। পরিদর্শক মামুন খুনের পর পুলিশ তাকে খুঁজতে এলাকায় যায়। তখনই পুলিশ জানতে পারে, ‘সোহাগ ঢাকায়’ ‘রবিউল ইসলাম’, ‘আপন’ বিভিন্ন নাম নিয়ে লোকজনকে প্রতারণা করেন। বিভিন্ন পরিচয়ে এই আসামি ২০টির মতো বিয়ে করেছেন বলে তার এলাকার জনপ্রতিনিধি জানিয়েছেন। তার বিরুদ্ধে কয়েকটি মামলাও করেছেন তার স্ত্রীরা। দেশে ডজন খানেক মামলায় তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে। পরিদর্শক মামুন হত্যা মামলার এই আসামিকে বাংলাদেশ পুলিশ আদালতে দেওয়া অভিযোগপত্রে বলেছে ।

লাইভে এসে আরাভ প্রথমেই তার দুবাইয়ে জুয়েলারি শপ উদ্বোধনে সাকিবসহ অন্যরা অংশ নেওয়ায় কৃতজ্ঞতা জানান। তিনি বলেন, ‘এত ঝড়-তুফানের ভেতরেও আমার অনুষ্ঠান সাফল্যের মধ্য দিয়ে খুব সুন্দরভাবে শেষ হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘এসবি কর্মকর্তা খুনের যে মামলা হয়েছে সেখানে আমাকে লাশ গুম করার অভিযোগে আসামিক করা হয়েছে।’ বিষয়টি নিয়ে অনেকেই গুজব ছড়াচ্ছে দাবি করে আরাভ বলেন, ‘দেখবেন, মামলাতে আমাকে দিয়েছে আমি গুমের সাথে জড়িত। হ্যাঁ, সেটা যদি আমার অপরাধ হয়, আমি কথা বলেছি। গুমের সাথে আমি জড়িত, সেই শাস্তি আমি মাথা পেতে নেব। শুধু গুজব ছড়াবেন না এতটুকু রিকোয়েস্ট করব।’

আরাভ বলেন, ‘সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে দুবাইয়েরে গোল্ড বাজারে শত্রু সবারই থাকবে এটা স্বাভাবিক। আমার মূল সমস্যা হচ্ছে আমি গোল্ড বাজারে ব্যবসা শুরু করার সময়, আমি কথা দিয়েছিলাম আপনাদের ডিসকাউন্টে মাল দেব। আমি এত বড় করে শুরু করতেছিলাম। আমার কিছু ব্যবসায়িক বন্ধুরা, আশেপাশে যাদের গোল্ডের দোকান আছে, তারা তো আর সামনাসামনি করবে না, পেছনে অনেকেই আমার শত্রু হয়েছে। অনেকেই আমার জন্য অনেক ধরনের চেষ্টা চালিয়েছে, কিন্তু এত কিছু শোনার পরও সাকিব আল হাসান ভাই পিছু হটে নাই, তাকে ধন্যবাদ। কেউ হটেনি, আমার ওখানে যতগুলো আর্টিস্ট গিয়েছিল।’

সাকিব আল হাসানকে আবারো ধন্যবাদ জানিয়ে আরাভ বলেন, ‘দেখেন শত্রু মানুষের থাকে। আমাকে এখানে বিভিন্ন গণমাধ্যামে, বিভিন্ন পত্রিকা দিয়েছে, আমি হচ্ছি খুনি, মাডারার, সন্ত্রাসী। বাংলাদেশ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা এনে বিদেশে ব্যবসা শুরু করেছি। পাঁচ বছর আগের ঘটনা। আমি যদি খুনি হতাম, তাহলে আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে যেতাম। মানে, মানুষের সামনে আসতাম না।’ এই পাঁচ বছর সবসময় অনলাইনে সক্রিয় থেকেছেন জানিয়ে আরাভ বলেন, ‘আমি পাঁচ বছরে কোনো একটা দিন কিন্তু অফলাইন হইনি।’

নিজের ‘কিছু অপরাধও রয়েছে’ বলে স্বীকার করেছেন আরাভ বলেন, ‘কিছু রটে, কিছু বটে। আমি তো বলি নাই যে মামলা নাই। মামলা আছে। সেটা আজকে আপনাদের মাঝে বলতে চাই। ২০১৮ সালে আমার অফিস বনানীতে ছিল। আমি রিয়েল এস্টেটের ব্যবসা করতাম আপন বিল্ডার্স নামে। তখনো আমার শত্রু ছিল। আমার অফিসে একটা খুন হয়। আমি তখন বাসায় ভাত খাচ্ছিলাম। আমার অ্যাসিস্ট্যান্ট ও বডিগার্ড আমাকে ফোন করে। তারা আমাকে বিষয়টি জানায়।’ তখন এসবি পরিদর্শক ইমরান খুন হন। আরাভ বলেন, ‘তিনি ছিলেন একজন পুলিশ কর্তকর্তা। এসবি অফিসার। এটা সর্ম্পূণ একটা অ্যাকসিডেন্ট ছিল। আমার অপরাধ একটাই—আমি ওই অফিসের মালিক। ওইখানে একটা জম্মদিনের অনুষ্ঠানে কথা কাটাকাটি নিয়ে ঝগড়া হয়।’

ফেসবুক লাইভে আরাভ বলেন, ‘আমাকে অনেকেই বলেছে তুমি সরে আসো। আমার কথা হচ্ছে, আমার মনে একটুও দুর্বলতা নেই। আমি এই খুনের সাথে জড়িত না। আমার অফিসে খুন হয়েছে—এটার জন্য কোনো সাজা, এটার জন্য কোনো বিচার যদি হয়ে থাকে সেটা আদালত আমার বিচার করবে। আল্লাহ আছে উপরে, আমার বিচার করবে। আমি মাথা পেতে নেব। আমি যতটুকু অপরাধ করেছি, ততটুকু আমার সাজা হোক। আমি এটা চাই। কিন্তু আমি গণমাধ্যমে বলতে চাই, আমি এমন কাজ করিনি, আমার জীবনে কাউকে একটা চড় মেরেছি কিনা, সেটা জানি না।’

অনেক পরিশ্রম ও সংগ্রাম করতে করেছেন জানিয়ে আরাভ বলেন, ‘আমার বাবা ছিলেন দিনমজুর। পরিবার থেকে আরাভ খান উঠে এসে ঢাকায় কিছু করা চেষ্টা করেছে। আমার বাড়ি গোপালগঞ্জ।’ আরাভ বলেন, ‘গোপালগঞ্জের যারা বড় বড় অফিসার যেসব জায়গায় আছেন, তারা সবসময় আমার পাশে ছিলেন। গণমাধ্যামে যা বলা হচ্ছে, তা পুরোপুরি সত্যি নয়।’ আরাভ আরও বলেন, ‘আমি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভাইদের উদ্দেশ্যে বলব, আপনারা যদি এটার সুষ্ঠু বিচার চান, যদি বলেন এটার সুষ্ঠু বিচার করব, আমি বাংলাদেশে আসি। আপনারা যদি আমাকে আশ্বস্ত করেন যে, আরাভ তুমি আসো, এটার সুষ্ঠু বিচার করব। আমি অবশ্যই আসব। আমার কোনো সমস্য নেই। আমি পুলিশ প্রশাসনকে নয়, আমার বিপরীত ব্যবসয়ীদের ভয় পাই। যারা দীর্ঘদিন ধরে আমার পিছনে লেগে আছে।’

অস্ত্র মামলা সম্পর্কে আরাভ বলেন, ‘অস্ত্র মামলায় আমাকে পুলিশ বিভিন্ন সময় গ্রেপ্তার করে জেলে দিয়েছে। মিথ্যা বলব না। হ্যাঁ, অস্ত্র মামলা আমার আছে ও ছিল। আমি খুব ভালো মানুষ আমি তাও বলব না। আমি প্রস্তুত আছি এটা মোকাবিলা করা জন্য। বাংলাদেশে সর্বোচ্চ পুলিশ কর্মকর্তা আমাকে বিমানে তুলে দিয়েছে, এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা। আমি অপরাধী কিনা, সেটা আদালত বলবে।’

আরাভ বিভিন্ন সময় মিডিয়ায় কাজ করেছেন বলে যে প্রচার আছে সে বিষয়ে আরাভ বলেন, ‘আমি কখনো মিডিয়াতে কাজ করতাম না। আমি কখনো হিরো ছিলাম না। তবে আমার ফিল্মে অফার এসেছিল। আমি করি নাই।’ আরাভ বলেন, ‘সামনে আরও ভালো কিছু নিয়ে আসছি।’ খুব তাড়াতাড়ি যুক্তরাষ্ট্রে আরাভ জুয়েলার্সের একটি ব্রাঞ্চ উদ্বোধন করবেন বলে জানান আরাভ। এরপর সবার কাছে দোয়া চেয়ে লাইভ শেষ করেন আরাভ।

অভিযোগপত্রে আছে

অভিযোগপত্রে দেখা যাচ্ছে, স্বপন সরকার নামে একজন আসামি রবিউল ওরফে আরাভকে ফোন করে বলেন, ‘ভাই পুলিশ লোকটি মারা গিয়াছে’। তখন দিদার নামে আরেক আসামি রবিউল ওরফে আরাভকে একটা বড় ট্রলি অথবা বস্তা আনতে বলেন। আরাভ ভোরের দিকে দুইটা বস্তা ও সাদা টাইপের একটা কাপড় নিয়ে আসেন। তবে আরাভ ভেতরে ঢোকেননি। ভবনের সামনে থেকে তার কাছ থেকে দিদার নামে এক আসামি বস্তা ও কাপড় নিয়ে যান। পরে লিফট দিয়ে লাশ নামিয়ে আসামি রহমত উল্লাহর গাড়িতে করে নিয়ে যান পাঁচ আসামি। রহমত উল্লাহ, দিদার, আতিক, স্বপন ও মিজান। তারা লাশ নিয়ে বনানী রোডে গিয়ে দেখতে পান, রবিউল ওরফে আরাভ, তার স্ত্রী সুরাইয়া আক্তার ওরফে কেয়া, মেহেরুন্নেসা ওরফে স্বর্ণা ওরফে আন্নাফি ওরফে আফরিন দাঁড়িয়ে আছেন।
শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা