রাজবংশী রায়
প্রকাশ : ১৫ মার্চ ২০২৩ ০৮:২৯ এএম
আপডেট : ২০ মার্চ ২০২৩ ০৯:২০ এএম
‘ওয়ার্ল্ড ফেমাস মার্কেট প্লেস দুবাইয়ে আমি সাকিব আল হাসান আসছি ১৫ মার্চ। আরাভ জুয়েলারি শপ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে। শপ ১৬, বিল্ডিং ৫, হিন্ড প্লাজা, নিউ গোল্ড শপ, দুবাই। আপনারা আসছেন তো?’ ভিডিওবার্তায় দুবাইয়ে আরাভ জুয়েলার্স নামে একটি শোরুমের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে অংশ নিতে এভাবেই আমন্ত্রণ জানাতে দেখা যায় বাংলাদেশের তারকা ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানকে। তার এই বিজ্ঞাপনী বার্তাটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রচার হচ্ছে। সাকিবের এই ভিডিওবার্তাটি ওই জুয়েলারির স্বত্বাধিকারী আরাভ খানের ফেসবুক পেজ থেকে গত ৩ ফেব্রুয়ারি শেয়ার করা হয়।
সেখানে তিনি লিখেছেন, ‘ওয়ার্ল্ড নাম্বার ওয়ান ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান ইজ কামিং অন ফিফটিনথ মার্চ, টু থাউজেন্ড টোয়েন্টি থ্রি- ফর দ্য ওপেনিং সেরিমনি অব আরাভ জুয়েলার্স ইন দুবাই। ওপেনিং সেরিমনি টাইম সেভেন পিএম। এভরিওয়ান ইজ ইনভাইটেড অ্যান্ড রিকোয়েস্ট টু শেয়ার দিজ উইথ ফ্রেন্ডস অ্যান্ড ফ্যামিলি। থ্যাংক ইউ!’ একই পোস্টে বাংলায় লেখা হয়- ‘কোনোদিন কাউকে শেয়ার করতে বলিনি আমার কোনো পোস্ট। দয়া করে এই পোস্টটি শেয়ার করবেন এবং আপনাদের ফ্রেন্ড অ্যান্ড ফ্যামিলি সবাইকে ইনভাইট করবেন।’
ভিডিও রিপোর্ট দেখুন : হত্যা মামলার আসামির ডাকে দুবাই গেলেন সাকিব
শুধু সাকিব নন, আরাভ খানের জুয়েলারি শপের উদ্বোধন উপলক্ষে শুভেচ্ছা জানিয়ে ভিডিওবার্তা দিয়েছেন ইংলিশ ক্রিকেটার বেনি হাওয়েল, শ্রীলঙ্কা জাতীয় দলের পেসার উসুরু উদানা, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বাঁহাতি ওপেনার এভিন লুইস, সংযুক্ত আরব আমিরাত ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক রোহান মোস্তফা, আফগানিস্তানের হজরতউল্লাহ জাজাই, পাকিস্তানের ক্রিকেটার মোহাম্মদ আমিরসহ অনেকে।
বাংলাদেশের চলচ্চিত্র পরিচালক দেবাশীষ বিশ্বাস, গায়ক নোবেল, রুবেল খন্দকার, বেলাল খান, জাহেদ পারভেজ পাভেল এই জুয়েলার্সের উদ্বোধন উপলক্ষে দুবাই যাচ্ছেন বলে তারাও ভিডিওবার্তায় জানিয়েছেন। একই রকম ভিডিওবার্তায় আলোচিত কনটেন্ট নির্মাতা হিরো আলম জানিয়েছেন, তিনিও একই অনুষ্ঠানে অংশ নিতে দুবাই যাবেন। ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের উদ্বোধন উপলক্ষে আরাভ খান তার দুবাইয়ের বাড়িতে নিজের মাজরা থেকে নিয়ে আসা মায়া হরিণ জবাই করে শুভাকাঙ্ক্ষীদের নিয়মিত দাওয়াত খাওয়াচ্ছেন। এ নিয়ে তিনি নিয়মিত ফেসবুক লাইভও করছেন।
সাকিব আল হাসানের এ অনুষ্ঠানে যোগদানের বিষয়ে তার এজেন্ট নাফিস মোমেনকে ফোন করা হলে তিনি প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, দুবাইয়ে জুয়েলারি শপ উদ্বোধন অনুষ্ঠানটির শিডিউল তার মাধ্যমে হয়নি। এজন্য এ সম্পর্কে তিনি কিছু বলতে পারবেন না। তবে নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, সাকিব গতকালই (মঙ্গলবার) বাংলাদেশ সময় রাত ১টা ৪০ মিনিটে এমিরেটসের ফ্লাইটে দুবাইয়ের পথে পাড়ি জমান। কিন্তু এতটা পথ তিনি উড়ে গেলেন কার ডাকে? সাকিব ভালো করে জানেন তো সেটা? এ প্রশ্ন ওঠার পেছনে যথেষ্ট সঙ্গত কারণ রয়েছে।
সবার ভাবতে হয়তো ভালো লাগবে, একজন বাঙালি কীভাবে দুবাইয়ে এত বড় একটি জুয়েলারি শপ গড়ে তুলেছেন! যেটির উদ্বোধনে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ক্রিকেটারসহ বিভিন্ন অঙ্গনের একঝাঁক তারকা উপস্থিত থাকছেন। দৃষ্টিনন্দন একটি বাড়িতে বাংলাদেশি জুয়েলারি ব্যবসায়ীদেরও ভিড় জমে যাবে। কিন্তু এই আলো ঝলমলে পর্দার আড়ালে লুকানো রয়েছে অন্ধকারের এক অজানা কাহিনি।
আরাভ খানের জুয়েলারি শপের উদ্বোধনের একটি প্রতিবেদন দেশের প্রতিষ্ঠিত একটি জাতীয় দৈনিকের অনলাইনে গত ১১ মার্চ প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদনে তাকে একসময়ের চলচ্চিত্র অভিনেতা বলে উল্লেখ করা হয়। কিন্তু কয়েকজন চলচ্চিত্র পরিচালক ও অভিনেতার সঙ্গে প্রতিদিনের বাংলাদেশের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে তারা এ নামে কোনো অভিনেতাকে চেনেন না বলে জানান। উদ্বোধনের অপেক্ষায় থাকা ওই প্রতিষ্ঠান নিয়ে দেশের একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেল আরাভ খানের বক্তব্য প্রচার করে, যেখানে তাকে বাংলাদেশি ব্যবসায়ী উল্লেখ করা হয়। যেখানে আরাভ জুয়েলার্সের লোগোটি ৪১ কোটি টাকারও বেশি খরচ করে ৬০ কেজি স্বর্ণ দিয়ে বানানো হয়েছে বলে জানানো হয়। যেখানে আরাভ খান বলেছেন, ‘আমরাও ইন্ডিয়া থেকে কম না। এটা যাতে আমরা দেখাতে পারি… ইনশা আল্লাহ। আমি সেই সব থিঙ্কিং নিয়ে বাংলাদেশের জন্য এটা করেছি।’
কিন্তু খটকা দেখা দেয় তার ফেসবুক পেজ থেকে শেয়ার করা কিছু পোস্টে। একটি পোস্টে আরাভ খান একটি বাড়ি দেখিয়ে বলছেন, ‘এটি গ্রামের বাড়ি, কিন্তু গোপালগঞ্জ নয়।’ একটি বিএমডব্লিউ মোটরসাইকেল নিয়ে মাছ কিনতে যাওয়ার ভিডিও শেয়ার করেছেন। রাস্তার ট্যাক্সিক্যাব, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ট্রাক ও সবশেষ বাজার দেখে বোঝা গেল এটি কলকাতার কোথাও। এতে সন্দেহ জাগে- কে এই আরাভ খান? কী তার আসল পরিচয়?
প্রতিদিনের বাংলাদেশ এই আরাভ খানকে নিয়ে অনুসন্ধান শুরু করে। এতে চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে আসে। জানা যায়, আরাভ খান নামের মানুষটি প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশের গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ার আশুতিয়া গ্রামের রবিউল ইসলাম ওরফে আপন ওরফে সোহাগ ওরফে হৃদয়। তার বাবার নাম মতিউর রহমান মোল্লা। পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) পরিদর্শক মো. মামুন এমরান খান হত্যা মামলার পলাতক আসামি এই আরাভ খান। ভারতীয় পাসপোর্ট ব্যবহার করে তিনি দুবাইয়ে কয়েক বছর অবস্থান করছেন। তার পাসপোর্ট নম্বর ইউ ৪৯৮৫৩৮৯। শুধু আরাভ খানই নন, তার স্ত্রী সাজেমা নাসরিন এবং কথিত বাবা-মায়ের পাসপোর্টও ভারতীয়।
আরাভ খানের ভারতীয় পাসপোর্টের তথ্য বলছে, তার বাড়ি পশ্চিমবঙ্গের নরেন্দ্রপুর। কথিত বাবা জাকির খানের ঠিকানা উল্লেখ করা হয়েছে কন্দর্পপুর, রাজপুর সোনারপুর (এম), গড়িয়া, দক্ষিণ ২৪ পরগনা। কিন্তু সেখানে খোঁজ লাগিয়ে তার কোনো হদিস মেলেনি। এলাকার অন্তত ২০ জনের সঙ্গে কথা বলেও তার পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তাদের বক্তব্য- এ নামে কাউকে তারা এলাকায় দেখেননি। ছবি দেখানোর পর প্রতিবেশীরাও চিনতে পারেননি।
পুলিশ সূত্র বলছে, ২০১৮ সালে মামুন এমরান খানকে হত্যার পর পেট্রোল ঢেলে লাশ পুড়িয়ে গাজীপুরে বনের ভেতরে ফেলে দেয় দুষ্কৃতকারীরা। ওই ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় ২০১৯ সালের ৩১ মার্চ অভিযোগপত্র জমা দেয় পুলিশ। এরপর ঢাকার ১ নম্বর অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে বিচার শুরু হয়। এ মামলার ৬ নম্বর আসামি হলেন রবিউল ইসলাম ওরফে আপন ওরফে সোহাগ ওরফে হৃদয়। ওই সময় থেকেই তিনি পলাতক। পরে জানা যায়, যোগসাজশের মাধ্যমে প্রকৃত আসামি রবিউলের পরিবর্তে জেলে গেছেন চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলার আইনপুর গ্রামের নুরুজ্জামানের ছেলে আবু ইউসুফ লিমন। একাধিক গণমাধ্যমে ওই খবরও প্রচার হয়। ক্রিকেট খেলার স্বপ্নে বিভোর লিমন জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়ার প্রলোভনে রবিউলের পরিবর্তে হত্যা মামলার হাজিরা দিতে আদালতে যান। পরে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।
মামলার নথি অনুযায়ী, রবিউল ইসলামের বাড়ি গোপালগঞ্জ জেলার কোটালীপাড়ার আশুতিয়া গ্রামে। বাবা মতিউর রহমান মোল্লা এবং মা লাকি বেগম। পুলিশের তদন্তেও এর সত্যতা মেলে। ওই তদন্তে বলা হয়, প্রকৃত আসামি রবিউলের সঙ্গে যোগসাজশে আবু ইউসুফ লিমন নিজেকে আসামি পরিচয় দিয়ে আদালতে উপস্থিত হয়ে জামিনের আবেদন করে অপরাধ করেছেন। এটি প্রতারণা। এরপর লিমনের বিরুদ্ধে প্রতারণার মামলা করা হয়।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (খিলগাঁও জোনাল টিম) অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার শাহিদুর রহমান প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, আরাভ জুয়েলারি শপ উদ্বোধনের বিষয়টি ফেসবুকে শেয়ার করার পর তা আমাদের নজরে এসেছে। পরিদর্শক মো. মামুন এমরান খান হত্যা মামলার আসামি রবিউল আরাভ নামে ফেসবুক আইডি চালাচ্ছেন। তার দুটি পাসপোর্ট আমাদের কাছে এসেছে। একটি বাংলাদেশি, অপরটি ভারতীয়। তার বিষয়ে আমরা খোঁজখবর নিচ্ছি। অপরাধীকে আইনের আওতায় আনার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হবে বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে কথা বলতে আবু ইউসুফ লিমনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে প্রতিদিনের বাংলাদেশকে তিনি বলেন, প্রতারণার শিকার হয়ে তিনি প্রতারণার মামলায় পড়েছেন। ক্রিকেটার হওয়ার যে স্বপ্ন নিয়ে ঢাকায় এসেছিলেন, তা ওই মামলায় পড়ে শেষ হয়ে গেছে। এখন তিনি চাকরির খোঁজ করছেন। লিমনের অভিযোগ- হত্যা মামলার অন্য আসামিরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করছে না। নিরপরাধ হয়েও তিনি জেল খেটেছেন। আর এখন প্রতারণার মামলার হাজিরা দিয়ে যাচ্ছেন। ২০২০ সালের অক্টোবর থেকে প্রায় ৯ মাস জেল খাটার পর জামিনে মুক্তি পান লিমন।
লিমনের বাবা নুরুজ্জামান প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, হত্যাকাণ্ডের মূল আসামি রবিউল ইসলাম আপন। সে এখন দুবাইয়ে আছে বলে জেনেছি। কচুয়ার পালগিরি এলাকার এক ছেলে দুবাই আছে। তার সঙ্গে আপনের দেখা হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি। ছেলের বিষয়ে নুরুজ্জামান বলেন, জাতীয় দলে খেলার স্বপ্ন নিয়ে লিমন ঢাকায় গিয়েছিল। ষড়যন্ত্রের ফাঁদে পড়ে ভুল আসামি হয়ে তাকে কারাগারে যেতে হয়েছে। বর্তমানে ঢাকায় তার নামে ৪১৯ ও ৪২০ ধারার দুটি প্রতারণা মামলা রয়েছে। ওই মামলায় প্রতি মাসে হাজিরা দিতে হয়। আক্ষেপ করে তিনি বলেন, লিমনের মতো কাউকে যেন এমন ষড়যন্ত্রের জালে পড়ে ভুল শাস্তি পেতে না হয়। এই এক ঘটনায় তাদের পরিবারটা শেষ হয়ে গেছে।
গোপালগঞ্জে রবিউল ইসলাম ওরফে আরাভ খানের গ্রামের বাড়িতে সরেজমিন পরিদর্শন করে তার বাবা-মায়ের খোঁজ মেলেনি। প্রতিবেশীরা বলেছেন, বছরখানেক আগে তার মা-বাবাও দুবাই চলে গেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রবিউলকে মগবাজারের নয়াটোলার আমবাগান এলাকা থেকে ২০১৫ সালের ২৮ জানুয়ারি অবৈধ অস্ত্রসহ পুলিশ গ্রেপ্তার করে। রমনা মডেল থানায় তার বিরুদ্ধে অবৈধ অস্ত্র আইনে মামলা হয়। জেলে পাঠানোর পর তিনি জামিনে বের হন। দুই বছরের মাথায় ২০১৭ সালের ২৫ জুন আবারও অবৈধ অস্ত্রসহ তাকে গুলশান থানা পুলিশ গ্রেপ্তার করে। জেলে পাঠানোর পর আবারও জামিনে বেরিয়ে যান। পরের বছর পরিদর্শক মো. মামুন এমরান খানকে হত্যা মামলার আসামি হয়ে ফেরারি হয়ে যান এই রবিউল ইসলাম আপন ওরফে আরাভ খান।
ভারতে গিয়ে বিয়ে এবং সেদেশের নাগরিকত্ব নেন আরাভ খান নামে। বিয়ে করেন আসামের গোয়ালপাড়ার বাসিন্দা সাজেমা নাসরিনকে। ১৫ লাখ রুপি দেনমোহরে ২০২০ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি বিয়ে হয়। বিয়ের রেজিস্ট্রেশন নম্বর ৫৮৭৯ (এ)। এরপর আরাভ খান নাম নিয়ে দুবাইয়ে চলে যান।
দুবাইয়ে তার কাগজপত্র ঘেঁটে দেখা যায়, ২০২১ সালের ৩১ অক্টোবর থেকে ২০২৪ সালের ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত তিন বছর মেয়াদি ভিসা পান তিনি। সেখানে তার রেসিডেন্ট আইডেন্টিটি হয়েছে। সেখানে তার জাতীয়তা ভারতীয় বলে উল্লেখ করা হয়েছে। দুবাইয়ে তিনি ২০২১ সালের ২৬ অক্টোবর আরাভ খান টেকনিক্যাল সার্ভিসেস কন্ট্রাকটিং এলএলসি নামে একটি প্রতিষ্ঠান খোলেন। এ প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স নম্বর ৯৯৬১৩৯। মেম্বারশিপ নম্বর ৩৭৭০৯৭। রেজিস্ট্রেশন নম্বর ১৬২৭৮২৪। এর ৪৮ শতাংশ শেয়ার আরাভের, ৪৮ শতাংশ স্ত্রী সাজেমার এবং ৪ শতাংশ শেয়ার সংযুক্ত আরব আমিরাতের নাগরিক হামদা আলি হাতিম আলি আলবালুসির।
আরাভ খান দুবাইয়ে প্রবাসীদের কাছে এবং বাংলাদেশের গণমাধ্যমে নিজেকে বাংলাদেশি বলে পরিচয় দেন। তবে তার সব ধরনের কাগজপত্রে জাতীয়তা ভারতীয় বলে উল্লেখ রয়েছে। অনুসন্ধান বলছে, এর সবগুলোই ভুয়া।
ভারতীয় পাসপোর্ট অনুযায়ী আরাভ খানের জন্ম ১৯৯৩ সালের ৩১ জুলাই। ৩০ বছর বয়সি আরাভ খান দুবাইয়ে হাজার কোটি টাকা মূল্যের জুয়েলারি শপ খুলে সেখানকার ব্যবসায়ীদেরও চমকে দিয়েছেন। তিনি কীভাবে এত বিত্তশালী হলেন- এ প্রশ্ন সবার। তার গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ার হিরণ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাজাহারুল আলম পান্না নিশ্চিত করেন যে, আরাভ খানই তার ইউনিয়নের বাসিন্দা রবিউল ইসলাম ওরফে আপন। প্রতিদিনের বাংলাদেশকে তিনি বলেন, রবিউল দীর্ঘ ১৩ বছর ধরে বাড়িতে আসে না। শুনেছি সে এখন দুবাই থাকে, এখন সেখানে স্বর্ণের ব্যবসা করে। তার বিরুদ্ধে পুলিশ হত্যাসহ বিভিন্ন ধরনের মামলা রয়েছে। শুনেছি কয়েকদিন আগে তার মা-বাবাকে দুবাই নিয়ে গেছে। অনেক টাকা-পয়সার মালিক হলেও গ্রামের বাড়িতে কোনো বাড়িঘর তৈরি করেনি। ওর দুটি বোন আছে। তাদের বাগেরহাটের মোল্লাহাটে বিয়ে হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সেখানকার এক প্রতিবেশী জানান, রবিউলের বাবা মাছ বিক্রি করতেন। তা দিয়ে সংসার চলত। সেই রবিউল কীভাবে এত টাকার মালিক হলেন তা তাদের জানা নেই।
এদিকে দুবাইয়ের অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করবেন চলচ্চিত্র পরিচালক দেবাশীষ বিশ্বাস। তিনি এখন দুবাইয়ে অবস্থান করছেন। ঘটনার বিস্তারিত তুলে ধরে জানতে চাইলে তিনি ফোনে প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, আরাভ খানের সঙ্গে ব্যক্তিগত ঘনিষ্ঠতা তেমন নেই। তবে কয়েক বছর ধরে শোবিজ অঙ্গনে ঘোরাঘুরির কারণে তার সঙ্গে পরিচয়। সম্প্রতি দুবাই থেকে আরাভ খানের ম্যানেজার পরিচয়ে একজন ফোন করে অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনার প্রস্তাব দেন। বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠান উপস্থাপনার কারণে তার প্রস্তাবটি গ্রহণ করি। এরপর জানতে পারলাম সাকিব আল হাসানও অনুষ্ঠানে যোগদান করবেন। তখন তাদের নিশ্চিত করি যে, অনুষ্ঠানটি আমি উপস্থাপনা করব। কারণ সাকিব আল হাসান বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক তারকা। তিনি থাকা মানে কোনো সমস্যা নেই। এরপর সাকিবের সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে যোগাযোগ করলে জানান, ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে খেলা শেষে তিনি ১৫ মার্চ দুবাই যাবেন।
আরাভ জুয়েলার্সের উদ্বোধন অনুষ্ঠানের এ আয়োজন নিয়ে সেখানে বসবাসরত বাংলাদেশিদের মধ্যে নানা প্রশ্ন উঠেছে। দুবাইয়ে দীর্ঘদিন ধরে বসবাসরত কয়েকজন বাংলাদেশির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নিউ গোল্ড সুক এলাকায় আরাভ জুয়েলার্স যে সাজসজ্জা ও আয়তন নিয়ে চালু হচ্ছে, তাতে বড় অঙ্কের অর্থের বিনিয়োগ হয়েছে। দুবাইয়ে এর আগে এত বড় আয়োজন করে কোনো বাংলাদেশি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের উদ্বোধন হয়নি। সে কারণে প্রতিষ্ঠানটির মালিকানা নিয়ে বাঙালি কমিউনিটির মধ্যে বেশ কৌতূহল ও আলোচনা রয়েছে।
প্রতিবেদনটির বিষয়ে কথা বলার জন্য মঙ্গলবার ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশের ম্যাচের পর থেকে অনেকবার চেষ্টা করা হলেও সাকিব আল হাসানের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। রবিউল ইসলাম আপন ওরফে আরাভ খানের সঙ্গেও ফোনে যোগাযোগ করা হলে তার সাড়া পাওয়া যায়নি।