প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১২ মার্চ ২০২৩ ১৪:০৬ পিএম
আপডেট : ১২ মার্চ ২০২৩ ১৮:২১ পিএম
ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে ডিবির সংবাদ সম্মেলন। ছবি : সংগৃহীত
রাজধানীর উত্তরার তুরাগ এলাকায় ডাচ-বাংলা ব্যাংকের সোয়া ১১ কোটি টাকা ডাকাতির ঘটনায় নতুন করে দুই কোটি ৫৩ লাখ ৯৮ হাজার ৫০০ টাকা উদ্ধার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)।
শনিবার (১১ মার্চ) রাতে ঢাকার মিরপুর, বনানী সুনামগঞ্জসহ বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে এই টাকা উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা হয়েছে মোট ৮ জনকে।
আগে উদ্ধার করা ৩ কোটি ৮৯ লাখ ৫০ হাজারসহ এ নিয়ে মোট উদ্ধার টাকার পরিমাণ ৬ কোটি ৪৩ লাখ ৪৮ হাজার ৫০০ টাকা।
গ্রেপ্তাররা হলেন, মো. সানোয়ার হাসান, মো. ইমন ওরফে মিলন, মো. আকাশ মাদবর, সাগর মাদবর, মো. বদরুল আলম, মো. মিজানুর রহমান, মো. সনাই মিয়া ও এনামুল হক বাদশা।
রবিবার (১২ মার্চ ) দুপুরে ডিএমপি আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিবিপ্রধান অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।
তিনি বলেন, ‘ডাচ-বাংলা ব্যাংকের সোয়া ১১ কোটি টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনায় আমরা বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালাচ্ছি। এখনও অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’
ঘটনার দিন সন্ধ্যায় ডিবি পুলিশের একটি দল রাজধানীর খিলক্ষেত এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৩ কোটি ৮৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা উদ্ধার করে।
এরপর বিভিন্ন সূত্র ও গোয়েন্দা কার্যক্রমের ভিত্তিতে গতকাল রাতে মিরপুর গোয়েন্দা ও উত্তরা গোয়েন্দা বিভাগ পৃথকভাবে ঢাকা, ঢাকার আশপাশ, সিলেটের সুনামগঞ্জসহ বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ওই ঘটনায় জড়িত মোট আটজনকে গ্রেপ্তার করে। তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ২ কোটি ৫৩ লাখ ৯৯ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়।
অভিযান ও টাকা উদ্ধার অভিযান সম্পর্কে হারুন বলেন, ’প্রথমে রাজধানীর বনানী হতে সানোয়ার হোসেন নামে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার হেফাজত থেকে ১ কোটি ১৪ লাখ ৫১ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়।
তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বনানী থেকে ইমনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার জোয়ার সাহারার বাসা থেকে উদ্ধার করা হয় ৩২ লাখ ৪৭ হাজার ৫০০ টাকা।
ঢাকার উত্তরা থেকে আকাশ ও সাগর নামে দুজনকে গ্রেপ্তারের পর ১ কোটি ৭ লাখ টাকাসহ ছিনতাইকাজে ব্যবহৃত একটি প্রাইভেট কার জব্দ করা হয়।
ডিবির অপর একটি দল সিলেটের সুনামগঞ্জে অভিযান পরিচালনা করে চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তাররা হলেন, বদরুল আলম, মিজানুর রহমান, সনাই ও এনামুল হক বাদশা।
গ্রেপ্তারদের ভাষ্যমতে, গত ৮ মার্চ সিলেট যাওয়ার কথা বলে একটি হায়েস মাইক্রো বাস ভাড়া করা হয়। ডাকাতদের কথামতো হায়েস গাড়িটির চালক কুর্মিটোলা বাসস্ট্যান্ডের কাছে এলে পেছনের সিট ঠিক করার কথা বলে পা বেঁধে এখানে ফেলে রাখা হয়, এরপর ওই গাড়িটির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ডাচ-বাংলা ব্যাংকের টাকা বহনকারী মানি প্ল্যান্ট লিঙ্কের গাড়ি ফলো করতে ওৎ পেতে থাকে।’
হারুন বলেন, ডাকাত দল দীর্ঘদিন ধরে মানি প্ল্যান্ট লিঙ্কের টাকা বহনকারী গাড়ি অনুসরণ করে আসছিল। তারা জানত টাকা বহনে মানি প্ল্যান্ট লিঙ্কের কোনো সিকিউরিটি ও অস্ত্র ছিল না।
মিরপুর ডিওএইচএস এলাকা থেকে ডাকাত দল ডাচ-বাংলা ব্যাংকের টাকা বহনকারী মানি প্ল্যান্ট লিঙ্কের গাড়ি অনুসরণ শুরু করে। একবার সামনে একবার পেছনে এভাবে চলতে থাকে। এভাবে ডাকাত দলের ভাড়া করা হায়েস গাড়ি তুরাগের নির্জন স্থানে পৌঁছার পর দুই গাড়ির ধাক্কা লাগে।
এই অজুহাতে গাড়ি থেকে ডাকাত দল নামে ও তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি শুরু হয়। তারা মানি প্ল্যান্ট লিঙ্কের গাড়ি থেকে কয়েকজনকে নামিয়ে গাড়ির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দূরে চল যায়। এরপর গাড়িতে থাকা ম্যানেজারকে ধাক্কা দিয়ে তারা টাকার ট্রাংকসহ নিজেদের হায়েস গাড়িতে নিয়ে ৩০০ ফিটের নির্জন এলাকার দিকে চলে যায়।
হারুন বলেন, গ্রেপ্তাররা জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে, ডাকাতরা সেখানে দুটি টাকার ট্রাংক ভেঙে দুটি চাউলের বস্তা ও পাঁচটি ব্যাগ ভর্তি করে। বাকি দুই ট্রাংকের টাকা দেখে তারা ভয় পেয়ে যায়। কোনো ব্যাগ না থাকায় টাকা ও ট্রাংক ফেলে পালিয়ে যায়। ড্রাইভারের সিটের ওপরে একটা ফেলে ও নিজেরা কাপড়-চোপড় পরিবর্তন করে ফেলে চলে যায়।
অবশিষ্ট ব্যাগটি হায়েসের ড্রাইভার সুস্থ হয়ে নিজ হেফাজতে নেয়। এ ছাড়াও সে ট্রাংক থেকে অবশিষ্ট টাকা ভরে সে তার ভাইয়ের হেফাজতে দেয়। পরবর্তীতে তাদের স্বীকারোক্তি মতে বাসা থেকে ১ কোটি ৭ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়।
গ্রেপ্তার আসামিদের ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছে। রিমান্ডে এনে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।