× ই-পেপার প্রচ্ছদ সর্বশেষ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি শিক্ষা ধর্ম ফিচার ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

পুলিশের মামলা তদন্তে বিপাকে পিবিআই

তানভীর হাসান

প্রকাশ : ১৯ জুন ২০২৫ ০৮:৫৫ এএম

পুলিশের মামলা তদন্তে বিপাকে পিবিআই

জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে গণহত্যার স্পর্শকাতর ৬৮টি মামলার তদন্ত করছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। এসব মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা থেকে শুরু করে মন্ত্রী-এমপি, ব্যবসায়ীসহ অনেকেই আসামি। সেই তালিকায় রয়েছেন ৯৯ জন পুলিশ সদস্যও। অভিযোগ রয়েছে, তারা মাঠ পর্যায়ে থেকে সরাসরি গণহত্যায় অংশ নিয়েছেন। সাবেক আইজিপি থেকে শুরু করে কনস্টেবল পদমর্যাদার অভিযুক্ত এসব কর্মকর্তার কারও কারও দাবি, যেসব মামলায় তাদের আসামি করা হয়েছে ওই সময় সেখানে তাদের উপস্থিতি ছিল না। কিছু মামলার তদন্তে এর প্রমাণও পাচ্ছেন তদন্তকারী কর্মকর্তারা। এতে কিছুটা বিপাকে পড়েছেন তদন্ত তদারক সংশ্লিষ্টরা। এমন পরিস্থিতিতে এসব মামলার তদন্তে ১৪ করণীয় নির্ধারণ ও কিছু মৌখিক নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে বলে পিবিআইয়ের দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, সাবেক আইজিপি, ডিএমপি কমিশনার, ডিবি প্রধান ও বিভিন্ন রেঞ্জের ডিআইজি যে এসব হত্যার নির্দেশদাতা ছিলেন বিষয়টি প্রমাণিত। পুলিশ কন্ট্রোল রুম ও বেতার বার্তার নির্দেশনার প্রমাণ রয়েছে তদন্তকারীদের হাতে। এসব মামলায় তাদেরকে নির্দেশদাতা হিসেবে চার্জশিটভুক্ত আসামি করা হবে। তবে মূল সমস্যা হচ্ছে মাঠ পর্যায়ে নির্দেশ বাস্তবায়নকারীদের নিয়ে। কারণ বেশিরভাগ মামলায় দেখা গেছে, এক এলাকায় দায়িত্বপালনকারী কর্মকর্তাকে অন্য এলাকার মামলায় আসামি করা হয়েছে। বাদীও তাদের শনাক্ত করতে পারছেন না। আবার তাদের কললিস্ট সংগ্রহ করার পর ঘটনাস্থলে উপস্থিতিও পাওয়া যাচ্ছে না। এমনকি দায়িত্ব পালনের কমান্ড সার্টিফিকেটও (সিসি) বলছে একই কথা। সেক্ষেত্রে ওই আসামিদের মামলা থেকে অব্যাহতির সুপারিশ করে আদালতে চার্জশিট দেওয়া হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। 

এ বিষয়ে পিবিআইয়ের এসপি আবু ইউসুফ প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘পিবিআই সব সময় বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে মামলার তদন্ত করে থাকে, যেন আসামি ও বাদী ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত না হয়। বর্তমান পিবিআইতে জুলাই গণহত্যার ৬৮টি মামলার তদন্ত চলছে। এসব মামলায় আসামি অনেক। এর মধ্যে ৯৯ জন পুলিশ সদস্য। পুলিশ সদস্যদের বিষয়ে তদন্তের ক্ষেত্রে অনেক করণীয় নির্ধারণ করা হয়েছে। সেখানে বলা রয়েছে সংশ্লিষ্ট পুলিশ সদস্যের ঘটনাস্থলে উপস্থিতি ও কর্মকাণ্ডের যোগসূত্র পাওয়া না গেলে আদালতে তাকে মামলা থেকে অব্যাহতির সুপারিশ করা হবে। পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবেন আদালত। 

উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘লালবাগ জোনের ডিবির ডিসিকে আসামি করা হয়েছে রমনা থানার একটি মামলায়। আবার মতিঝিল জোনের ডিসিকেও আসামি করা হয়েছে রমনা থানার মামলায়। দু্টি ডিভিশন আলাদা। তাদের ডিউটিও ছিল অন্য জায়গায়। তদন্তে তাদের অবস্থান ওই এলাকায় দেখা যায়নি। এমনকি কোনো সাক্ষীও পাওয়া যাচ্ছে না। এ ধরনের একাধিক মামলায় মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের অবস্থান মামলায় উল্লিখিত অবস্থানে পাওয়া যাচ্ছে না। এ বিষয়গুলো গভীরভাবে খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’ 

জানা গেছে, জুলাই-আগস্টের গণহত্যায় দায়ের হওয়া মামলার সংখ্যা প্রায় ১ হাজার ৩৪০টি। এ ছাড়া বিগত সরকারের আমলে অসংখ্য খুন ও গুমের ঘটনায় যেসব পুলিশ সদস্য জড়িত ছিলেন তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে আরও প্রায় ১ হাজার ১১০টি। সব মিলিয়ে এসব অভিযোগে এপ্রিল পর্যন্ত ঢাকাসহ সারা দেশে ১ হাজার ১৬৮ জন পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছে ২ হাজার ৪৫০টি। আসামির তালিকায় ১ হাজার ১৬৮ জন পুলিশ সদস্যের মধ্যে সহকারী পুলিশ সুপার থেকে আইজিপি পদমর্যাদার কর্মকর্তার সংখ্যা ২৮৫ জন। ইন্সপেক্টর ১৮৬ জন, সাব-ইন্সপেক্টর ৩৪১ জন, ১১৯ জন এএসআই, ৩ জন নায়েক ও ২২৫ জন কনস্টেবল এবং ৯ জন রয়েছেন পুলিশের অন্যান্য পদে। 

অধিকাংশ মামলা হয়েছে থানায় (জিআর)। বেশকিছু মামলার আবেদন আদালতে (সিআর) করা হলেও তা থানায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এসব মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছেন ৫৪ জন। ওয়ারেন্টভুক্ত হয়ে পলাতক রয়েছেন ৬২ জন পুলিশ সদস্য।

সূত্রমতে, পুলিশের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগের ৬৮টি মামলা চিহ্নিত করে পুলিশ সদর দপ্তর। পরে ওই মামলাগুলো পিবিআইকে তদন্ত করা নির্দেশ দেয়। তদন্ত শুরুর এক পর্যায়ে দেখা যায় বেশিরভাগ পুলিশ কর্মকর্তার দায়িত্ব এক জায়গায় থাকলেও তাকে অন্য একটি স্থানের ঘটনায় আসামি করা হয়েছে। এসব নিয়ে বিপাকে পড়ে পিবিআই। পরে তারা বিষয়টি নিয়ে বৈঠকে বসেন। সেখানে ১৪ করণীয় নির্ধারণ করে তদন্ত এগিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।

সূত্রমতে, ওই ১৪ করণীয়র মধ্যে রয়েছেÑ ঘটনাস্থল এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত সমন্বয়কদের সঙ্গে আলোচনা করে ঘটনাস্থল পরিদর্শন, স্থানীয় সব আসামির ঠিকানায় অভিযান চালানো, আসামিদের গ্রেপ্তার, পরবর্তীতে রিমান্ড, ঘটনাস্থলের সাক্ষী খুঁজে বের করা, অন্য মামলায় গ্রেপ্তারকৃতদের শ্যোন অ্যারেস্ট দেখানো, অজ্ঞাতনামা আসামিদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার করা, ভিকটিমের জানাজার ইমাম এবং গোসল প্রদানকারীদের এবং স্থানীয় গণ্যমান্যদের সাক্ষ্যগ্রহণ, কাউন্সিলর অথবা চেয়ারম্যানদের কাছ থেকে ভিকটিমের মৃত্যুসনদ সংগ্রহ, সহযোদ্ধা ও হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া লোকদের সাক্ষ্যগ্রহণ, বিভিন্ন দপ্তরে আবেদনকৃত সব রিপোর্ট দ্রুত সংগ্রহ করা, বাদীর তথ্যদাতাদের সাক্ষ্যগ্রহণ, মামলার কার্যক্রমে যারা সহযোগিতা করেছেন আসামি গ্রেপ্তার ও তদন্তে তাদের সহযোগিতা নেওয়া, ভিকটিমের বাড়িতে গিয়ে বাদী ও ভিকটিমের পরিবারের লোকজনের সঙ্গে আলোচনা করা অন্যতম। এ ছাড়াও মৌখিকভাবে আরও কিছু দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাদের। সেগুলো হচ্ছেÑ মামলায় সংশ্লিষ্ট পুলিশ সদস্যদের কললিস্ট সংগ্রহ করা, কোন এলাকায় ওই পুলিশ কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করছিলেন তার সিসি ফুটেজ সংগ্রহ করা, স্থানীয় সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করা, বিভিন্ন টেলিভিশনে প্রচারিত ওই দিনের ফুটেজ সংগ্রহ করে বিশ্লেষণ করা ও বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত ছবি সংগ্রহ করা অন্যতম।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে পিবিআইয়ের এক কর্মকর্তা প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘কললিস্ট সংগ্রহ করার উদ্দেশ্য হচ্ছে ঘটনার সময় তারা সেখানে উপস্থিত ছিল কি না তা নিশ্চিত হওয়া, দায়িত্ব পালনের সিসি সংগ্রহ করা (কমান্ড সার্টিফিকেট) হচ্ছে ওইদিন তার কোন এলাকায় দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল তা নিশ্চিত হওয়া। কোন কারণে ওই পুলিশ কর্মকর্তা তার মোবাইল ফোন বাসায় রেখে বা তার সিসি গোপন করে অন্য এলাকায় গিয়েছিলেন কি না তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য ওইসব এলাকার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করা হচ্ছে। সেখানেও তার উপস্থিতি পাওয়া না গেলে বিভিন্ন টেলিভিশনে প্রচারিত ওই দিনের ফুটেজ সংগ্রহ করে বিশ্লেষণ ও বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত ছবি সংগ্রহ করা হচ্ছে।’

এরই মধ্যে কয়েকটি টেলিভিশনে ফুটেজ চেয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে জানিয়ে ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘কিছু ফুটেজও পাওয়া গেছে। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে বাদীর এজাহারে আসামির অবস্থান এক জায়গায় দেখানো হলেও বাস্তবে তার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে না। এ নিয়ে বিপাকেও আছেন তদন্ত তদারক কর্মকর্তারা। সে ক্ষেত্রে শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের হুকুমের আসামি করে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সংশ্লিষ্টতা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’ 

সূত্রমতে, পিবিআইয়ের কাছে থাকা ৬৮ মামলায় ৯৯ জন পুলিশ সদস্যের মধ্যে রয়েছেনÑ সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন, সাবেক পিবিআই প্রধান বনজ কুমার মজুমদার, সাবেক এসবি-প্রধান মো. মনিরুল ইসলাম, সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ, সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি কৃষ্ণপদ রায়, সাবেক সিআইডি প্রধান মো. আলী মিয়া, সাবেক ডিআইজি রিপন সরদার, সাবেক র‌্যাব-প্রধান মো. হারুন অর রশিদ, সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি ড. খ. মহিউদ্দিন, সাবেক অতিরিক্ত আইজি আব্দুল বাতেন, সাবেক ডিআইজি মো. মনিরুজ্জামান, বর্তমান ডিআইজি টেলিকম রফিকুল ইসলাম গনি, সাবেক সিটিটিসি প্রধান আসাদুজ্জামান, ঢাকা রেঞ্জের সাবেক ডিআইজি সৈয়দ নুরুল ইসলাম, সাবেক ডিবি প্রধান হারুন-অর-রশিদ, ডিবির সাবেক জয়েন্ট কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকারসহ পুলিশের এডিসি, ওসি, এসআই, এএসআই, কনস্টেবল প


শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মারুফ কামাল খান

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা