× ই-পেপার প্রচ্ছদ সর্বশেষ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি শিক্ষা ধর্ম ফিচার ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

সন্দীপে ব্যবসায়ী শিপন হত্যার নেপথ্যে আ.লীগ নেতা সমীর

আবু রায়হান তানিন, চট্টগ্রাম

প্রকাশ : ১৪ জুন ২০২৫ ১০:৫৬ এএম

সন্দীপে ব্যবসায়ী শিপন হত্যার নেপথ্যে আ.লীগ নেতা সমীর

রাস্তার পাশে পড়ে ছিল ব্যবসায়ীর গলাকাটা দেহ। কয়েক হাত দূরেই তার অক্ষত মোটরসাইকেল। তার হাত দুটো ছিল শরীর থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন। কোরবানির আগে গত ৩ জুন বিকাল ৫টার দিকে সন্দ্বীপের মাইটভাঙ্গার একটি সড়ক থেকে সাইফুদ্দিন শিপনের মরদেহ উদ্ধার করেন স্থানীয়রা। নির্মম এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে নানান জল্পনা-কল্পনা ডালপালা মেলতে থাকে। শেষ পর্যন্ত এই হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে আঙুল উঠেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী ও সন্দ্বীপের মগধরা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রবিউল আলম সমীরের দিকে।

জানা গেছে, ব্যবসায়ী শিপন ও সমীর দুজনই একই এলাকার বাসিন্দা। একটা সময় ঘনিষ্ঠ বন্ধুও ছিলেন। তাদের মধ্যে ব্যবসায়িক লেনদেন ছিল। পরে ব্যবসা সংক্রান্ত বিরোধ সৃষ্টি হলে ব্যবসা গুটিয়ে বিদেশ চলে যান শিপন। মাস দুয়েক আগে পরিস্থিতির পরিবর্তন হওয়ায় দেশে ফিরে আবারও ব্যবসা গোছানো শুরু করেন শিপন। আর এটিই কাল হয় তার জন্য। পুরনো বিরোধের জেরে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয় তাকে। 

শিপন হত্যার ঘটনায় রবিউল আলম সমীর ও তার ভাই রাকিব জাহাঙ্গীরসহ ১১ জনকে আসামি করে সন্দ্বীপ থানায় একটি হত্যা মামলা করেছেন শিপনের ভাই অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য মো. আফতাব হোসেন। গত ৫ জুন সন্দ্বীপ থানায় মামলাটি রেকর্ড করা হয়। এই মামলায় এজাহারভুক্ত তিন আসামিকে গ্রেপ্তারও করেছে পুলিশ। 

সন্দ্বীপ থানার ওসি কেএম সফিকুল আলম চৌধুরী প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘সমীর ও জাহাঙ্গীরসহ ১১ জনকে আসামি করে একটি মামলা হয়েছে। এই মামলায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। আদালত খুললে তাদের রিমান্ডের আবেদন করা হবে। তদন্তাধীন বিষয়ে এর বেশি কিছু বলতে চাই না।’

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, সমীর ও জাহাঙ্গীরের সঙ্গে শিপনের ইট, বালু, রড, সিমেন্টের সাপ্লায়ের ব্যবসা ছিল। ২০২৩ সালের ৩০ ডিসেম্বর সমীর অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার হলে শিপনের সঙ্গে তাদের মধ্যকার ব্যবসায়িক সম্পর্ক ছিন্ন হয়। পরে সমীর জামিনে বের হলে তাদের মধ্যে ব্যবসায়িক হিসাব-নিকাশ হয়। এতে শিপনের ১০ লাখ টাকা পাওনা হয়; যা এক মাসের মধ্যে পরিশোধের মৌখিক অঙ্গীকার করেন সমীর। কিন্তু পরে এই টাকা চাইতে গেলে তাকে বিভিন্নভাবে হুমকি-ধমকি দেওয়া শুরু হয়। এর ফলে ব্যবসা গুটিয়ে সৌদি চলে যান শিপন। গত ২ মার্চ দেশে ফিরে আসেন তিনি।

ঘটনার দিন ছেলের চিকিৎসা করিয়ে চট্টগ্রাম থেকে সন্দ্বীপ ফেরেন শিপন। বেলা ৩টায় বাড়িতে ঢুকে খাওয়াদাওয়া সেরে পাশের ইউনিয়নের শিবেরহাট বাজারের উদ্দেশে বের হন। পথেই তিনি হত্যার শিকার হন। শিপনের পরিবারের সদস্যরা ধারণা করছেন, সন্দ্বীপ গুপ্তছড়া ঘাট থেকেই তাকে অনুসরণ করছিল খুনিরা। 

এই হত্যার পরপরই সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয় পারিবারিক দ্বন্দ্বের জেরে সাগর নামে শিপনের এক আত্মীয় তাকে হত্যা করেছে। এই প্রচারণাটিকে পরিকল্পিত দাবি করে আফতাব হোসেন বলেন, ‘সাগরের সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক বা বিরোধ নেই। সে সমীরের অনুসারী। কিন্তু তার একার পক্ষে শিপনকে এভাবে নৃশংস হত্যা করার কোনো সুযোগ নেই। বেলা ৩টার দিকে চট্টগ্রাম থেকে আসা শিপন ওই রাস্তা দিয়েই ওই সময় শিবেরহাট যাচ্ছেন; এটাও তার একার পক্ষে জানা সম্ভব না। এই হত্যায় পুরো একটা চক্র ছিল।’

রবিউল আলম সমীর মগধরা ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বার। ২০২৩ সালে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তারের পর পুলিশ জানিয়েছিল সমীর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী। তার ছোট ভাই রাকিব জাহাঙ্গীরও সমীরের পর একই ওয়ার্ডের মেম্বার নির্বাচিত হন। রাকিব জাহাঙ্গীরও সন্দ্বীপ থানার তালিকাভুক্ত শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী। সন্দ্বীপের সাবেক সংসদ সদস্য মাহফুজুর রহমান মিতার পৃষ্ঠপোষকতায় একচেটিয়াভাবে বঙ্গোপসাগরে জলদস্যুতা, মাটি ও বালু বিক্রি, মাদক ব্যবসা ও ঠিকাদারির মাধ্যমে ব্যাপক অর্থবিত্ত ও ক্ষমতার মালিক হওয়ার অভিযোগ রয়েছে এই দুই ভাইয়ের বিরুদ্ধে। 

সর্বশেষ ২০২৪ সালের ২৬ জুন স্থানীয় সরকারের ২২৩টি শূন্যপদে দেওয়া নির্বাচনের তফসিলে মগধরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হন সমীর। ওই নির্বাচনে আরও ছয়জন মনোনয়নপত্র জমা দিলেও সমীরের চাপে সবাই তা প্রত্যাহার করতে বাধ্য হন। ফলে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হন সমীর। তবে ২৬ জুলাই অনুষ্ঠিত ওই নির্বাচন পরে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের পর স্থগিত হয়। এখন পর্যন্ত ওই তফসিলের নির্বাচন সম্পর্কে কোনো সিদ্ধান্ত না হলেও ১৪ আগস্ট সমীরকে চেয়ারম্যান নির্বাচিত করে গেজেট প্রকাশ করা হয়। একই বছরের ১২ সেপ্টেম্বর শপথ নেন তিনি। তবে সম্প্রতি বিষয়টি জানাজানি হয়। যদিও হত্যা মামলার পর সমীর দাবি করেছেন, ৫ আগস্টের পর থেকে তিনি ও তার ভাই পলাতক। এই দাবি নাকচ করে দিয়ে শিপনের ভাই আফতাব হোসেন বলেন, ‘ওরা দুই ভাই নিয়মিত এলাকায় আসেন। ২০-২৫ দিন ধরে থাকেন। ওরা তো মাদক ব্যবসা করে অঢেল টাকা কামিয়েছেন। স্থানীয় রাজনীতির প্রভাবশালী অনেকে ওদের পৃষ্ঠপোষকতা করছেন। ফলে অনেকটাই নিরাপদে তারা তাদের সবকিছু করছেন। ৫ আগস্টের আগে জোর করে একক প্রার্থী হয়ে জেতার পর তারা গোপনে শপথ পর্যন্ত নিয়েছেন। 

শিপনের মৃত্যুর পর তাকে আওয়ামী লীগের কর্মী দাবি করা হয়েছিলÑ এ বিষয়ে জানতে চাইলে আফতাব হোসেন বলেন, ‘আমরা ৫ ভাইয়ের তিনজন সাবেক সেনা সদস্য। আমাদের পরিবারের কেউ কখনও কোনো রাজনৈতিক পদপদবিতে ছিল না। এমনিতে ভোটার হিসেবে ভোট দিই। পছন্দের একটা দল আছে। কিন্তু গত ১৫ বছর ভোটও দিতে যায়নি আমাদের পরিবারের কেউ।’ 


শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মারুফ কামাল খান

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা