× ই-পেপার প্রচ্ছদ সর্বশেষ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি শিক্ষা ধর্ম ফিচার ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

বিএনপির নেতা শিপন কাজীর বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড়

আকরাম হোসেন

প্রকাশ : ০৫ জুন ২০২৫ ১৫:৫৪ পিএম

 বিএনপির নেতা শিপন কাজীর বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড়

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর দখল ও চাঁদাবাজির জন্য নিজস্ব কর্মীবাহিনী গড়ে তোলার অভিযোগ উঠেছে বাগেরহাট জেলা বিএনপির সদস্য খায়রুজ্জামান শিপনের (শিপন কাজী) বিরুদ্ধে। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বাগেরহাট-৪ আসনে মোরেলগঞ্জ ও শরণখোলায় তার কথাই শেষ কথা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তার বিরুদ্ধে শত শত বিঘা মাছের ঘের দখলের অভিযোগ উঠেছে। পাশাপাশি টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, প্রশাসন, সরকারি অফিস- সবই এখন শিপন কাজীর নিয়ন্ত্রণে। বিএনপির ত্যাগী অনেক নেতাকর্মী এলাকা ছেড়েছেন তার রোষানলে। 

‘বাগেরহাট-৪ আসন তাকে লিজ দিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। স্বয়ং খালেদা জিয়া বললেও কাজ হবে না’Ñএমন কথা প্রচার করেন শিপন কাজী। এ বিষয়ের একটি অডিও ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ইতোমধ্যে ভাইরাল হয়েছে। মোরেলগঞ্জ ও শরণখোলায় কোথায় কী হবে সবই ঠিক করেন শিপন কাজী। তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে গেলেই প্রতিপক্ষকে ‘ফ্যাসিবাদের দোসর’ ট্যাগ দিয়ে মোবাইলে প্রাণনাশের হুমকি এবং হামলা-মামলা ভয়ভীতি দেখানো হয়। এ বিষয়ে একাধিক ভুক্তভোগী ইতোমধ্যে শিপন কাজী ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছেন। 

এ সম্পর্কে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘অভিযোগপত্র আমি হাইকমান্ডে পাঠিয়েছি। তথ্য-উপাত্ত যাচাই-বাছাই চলছে। ইতোমধ্যে শিপন কাজীকে শোকজ করা হয়েছে।’

উত্থাপিত অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বাগেরহাট জেলা বিএনপির সদস্য খায়রুজ্জামান শিপন প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘কোথাও আমার একটাও মাছের ঘের নাই। আওয়ামী লীগের আমলে বিএনপির লোকজনের ঘের দখল হয়েছিল সেগুলো বিএনপি ও সাধারণ মানুষ উদ্ধার করেছে। এখানে আমার বিন্দুমাত্র সম্পৃক্ততা নাই।’

একটি কুচক্রী মহল তার বিরুদ্ধে রাজনীতিতে অবস্থান নিতে না পেরে এগুলো প্রচার করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘যারা এলাকায় যায় না, কাজ করে না, জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয় তারাই বিএনপিকে ধ্বংস করার নীলনকশায় নেমেছে। তারাই আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রোপাগান্ডা রটাচ্ছে ও ষড়যন্ত্র করছে।’

অভিযোগ উঠেছে, জুলাই অভ্যুত্থানের পর মোরেলগঞ্জের ১২-নং জিউধরা ইউনিয়নের শনিরঝোর-ডেওয়াতলা এলাকায় তানিয়া ইসলামের নামে থাকা ৬০ বিঘা এবং ১৫ বিঘার দুইটি মাছের ঘের দখল করে নিয়েছে শিপন কাজী ও তার সহযোগীরা।

এ প্রসঙ্গে ভুক্তভোগী তানিয়া ইসলাম বলেন, ‘শিপন কাজীর নেতৃত্বে তার সহযোগীরা অস্ত্রের মুখে আমার কাছ থেকে জমির লিজ চুক্তিনামায় সই করিয়ে নিয়েছে। পরিবারের সদস্যদের বাঁচাতে ইতোমধ্যে নগদ ৫০ হাজার টাকা ও ব্যাংক থেকে বিকাশের মাধ্যমে ৩০ হাজার টাকা দিয়েছি। তিনটি ঘেরে প্রায় ৫০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।’

তানিয়া ইসলাম আরও জানান, ‘ঘের দখলের ঘটনায় শিপন কাজী ও তাদের সহযোগীদের নামে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়, বাগেরহাট জেলা বিএনপি ও পুলিশ প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ দিলেও কেউ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।’ 

জানা যায়, মৌলভীবাজার টু ঘরামী বাজারের মাঝে পারভেজ মৃধার ৭০ ও ৫০ বিঘার দুইটি ঘের, ইমরান খানের ১৯০ বিঘা, মাহবুব খানের ৭৫ বিঘা এবং সাইদুল মেম্বারের ২০ বিঘার ঘেরের মাছ লুটসহ দখল করে নিয়েছে শিপন কাজীর অনুসারীরা। এসব ঘেরে তিন থেকে চার কোটি টাকার মূল্যের মাছ ছিল। একইভাবেই বহরবুনিয়া ইউনিয়নের রিপন তালুকদার চেয়ারম্যানের ৮০ বিঘা, মিলন তালুকদারের ১০০ বিঘা, আলি ফরাজীর ৬০ বিঘা, রফিকুল ফরাজীর ৫০ বিঘা, মামুন শেখ ৪০ বিঘা, মাসুদ ৮০ বিঘা, তরিকুল ইসলাম গোলাপের ১০০ বিঘা, বয়াসিংগার মোস্তফার ২২ বিঘা এবং রুম্মানের ৬৫ বিঘা মাছের ঘের লুটপাটসহ দখল করে নিয়েছে শিপন কাজীর অনুসারীরা। তবে হামলার ভয়ে এসব ঘেরমালিক মুখ খুলতে বা থানায় অভিযোগও করতে ভয় পাচ্ছেন। 

জাহিদ ইসলাম নামের এক গ্রিস প্রবাসীর কাছে ২০ লাখ টাকা চাঁদা ও মাসিক মাসোহারা দাবি করেন শিপন কাজী। চাঁদা দাবির সেই কথোপকথনের রেকর্ড রয়েছে প্রতিদিনের বাংলাদেশ-এর হাতে। জাহিদ ইসলাম প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘শিপন কাজীর ভয়ে দেশে এসেও অসুস্থ বাবা-মায়ের সঙ্গে দেখা করতে পারিনি। আব্বা-আম্মার দোয়া মাহফিলের খাবারও ফেলে দিয়েছে। আমাকে মোবাইল ফোনেও হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছে।’

প্রবাসী জাহিদের বাড়িতে হামলার অভিযোগ প্রসঙ্গে শিপন কাজী বলেন, ‘জাহিদ আওয়ামী লীগের দোসর। বিগত সরকারের সময় আওয়ামী লীগের লোকজন দিয়ে এলাকার মানুষের ওপর জুলুম করেছে। এসব কারণে এলাকার মানুষ তার বাড়িতে হামলা করে থাকতে পারে। এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না।’

এদিকে মোরেলগঞ্জ সুতালড়ী শফিজ উদ্দিন দাখিল মাদ্রাসায় ১৪ লাখ টাকা চাঁদাবাজির অভিযোগ ও হামলার ঘটনায় শিপন কাজীসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন মাদ্রাসার সুপার এম জহিরুল আলম। 

মাদ্রাসার সুপারকে চাঁদা দাবি ও হুমকি দেওয়ার অভিযোগের বিষয়ে শিপন কাজী বলেন, ‘মাদ্রাসার প্রধান ওলামা লীগের সদস্য। তিনি প্রভাব খাটিয়ে টাকার বিনিময়ে অবৈধভাবে আওয়ামী লীগের লোকজনকে নিয়োগ দিয়েছেন। মাদ্রাসা শেষ করে দিয়েছেন। এখন কোনো ছাত্রছাত্রী ভর্তি হয় না।’

মোরেলগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মতলুবুর রহমান বলেন, ‘এই এলাকায় দখল-বেদখল চলে। কিছু অভিযোগ শুনেছি। কেউ লিখিত অভিযোগ দিলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

শিপন কাজীর দখল ও চাঁদাবাজির অভিযোগের সত্যটা স্বীকার করে বাগেরহাট জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আকরাম হোসেন তালিম প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘দপ্তর থেকে তদন্ত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। আমরা শিপন কাজীকে বহিষ্কারের সুপারিশ করেছিলাম। কিন্তু হাইকমান্ড কী কারণে ব্যবস্থা নেয়নি তা জানি না।’ 

জেলা বিএনপির সমন্বয়ক এম এ সালাম বলেন, ‘মোরেলগঞ্জের দুই-একটা অভিযোগ এসেছিল। সেসব বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকের কাছে পাঠিয়েছি।’ 

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : মোরছালীন বাবলা

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা