× ই-পেপার প্রচ্ছদ সর্বশেষ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি শিক্ষা ধর্ম ফিচার ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

অদৃশ্য কারণে ধরাছোঁয়ার বাইরে ইয়াবা জুয়েল

প্রবা প্রতিবেদক

প্রকাশ : ১৬ এপ্রিল ২০২৫ ০৯:০৩ এএম

আপডেট : ১৬ এপ্রিল ২০২৫ ১০:৪৭ এএম

অদৃশ্য কারণে ধরাছোঁয়ার বাইরে ইয়াবা জুয়েল

মদ, ইয়াবা, নারী সাপ্লাই, শিল্পপতিদের ব্ল্যাকমেলসহ নানা অভিযোগে অভিযুক্ত রাইসুল ইসলাম জুয়েল ওরফে ইয়াবা জুয়েল এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন থানায় ডজনেরও বেশি তার নামে মামলা থাকার পরও তার টিকিটিও ছুঁতে পারছে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। আর নানা অপরাধে অপরাধী এই মাদক কারবারি প্রকাশ্যে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন অপরাধজগৎ। 

ইয়াবা জুয়েলের বিরুদ্ধে হোটেলে হোটেলে নারী সাপ্লাই, মাদক বিক্রি, বিদেশে নারী পাচারের সুস্পষ্ট অভিযোগ রয়েছে। বিগত স্বৈরাচার আমলে কিছু অসাধু পুলিশ কর্মকর্তার আশ্রয়-প্রশ্রয়ে বেপরোয়া হয়ে ওঠেন জুয়েল। মাদক ও নারী ব্যবসার পাশাপাশি বিভিন্ন শিল্পপতির বিরুদ্ধে কুৎসা রটিয়ে টাকা হাতিয়ে নেওয়াই ইয়াবা জুয়েলের প্রধান কারবার। 

বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা গেছে, ডিজে পার্টির নামে হোটেলে হোটেলে নারী সাপ্লাই দিয়ে উত্থান ঘটে জুয়েলের। এরপর তিনি জড়িয়ে পড়েন মাদক কারবারে। পেশাদার অস্ত্রধারীদের নিয়ে নিয়মিত চলাফেরা তার। রাত গভীর হলেই রাজধানীর অভিজাত এলাকা বনানী ও গুলশানের মূর্তিমান আতঙ্ক হলেও অদৃশ্য কারণে তার টিকিও ছুঁতে পারছেন না আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। অথচ তার অপকর্মের ফিরিস্তি রয়েছে সবার হাতে। এমনকি গোপনে ভিডিও ধারণ করে ব্লাকমেলের অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

জানতে চাইলে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের গোয়েন্দা শাখার উপপরিচালক খুরশিদ আলম বলেন, ‘আমরা জুয়েলকে খুঁজছি। তাকে পাওয়ামাত্রই গ্রেপ্তার করা হবে। এ বিষয়ে আমাদের গোয়েন্দারা তৎপর রয়েছেন।’

তথ্য অনুসন্ধানে জানা গেছে, রাজধানীর বানানী ও গুলশানে ৪২টি সিসা বার এবং একাধিক ম্যাসাজ পার্লার চালান এই জুয়েল। পার্লারের সুন্দরী নারীদের নিয়ে রাতে সিসা বারে আড্ডা বসান এই জুয়েল। সেখান থেকে চাহিদা অনুযায়ী নারীদের বিভিন্ন স্থানে রাতযাপনের জন্য পাঠিয়ে কমিশন আদায় করে থাকেন। খরিদ্দারের তালিকায় রয়েছেন সমাজের উচ্চ শ্রেণির বখে যাওয়া ধনীর দুলালরা। এছাড়া ভিজিট ভিসায় দুবাই ও সিঙ্গাপুরে নারীদের পাচারের অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

জুয়েলের ঘনিষ্ঠরা জানিয়েছেন, ৫ আগস্টের আগে জুয়েল ছাত্রলীগের পরিচয়ে গুলশান-বনানী এলাকা দাপিয়ে বেড়াতেন। ওই সময় বিতর্কিত অনেক পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতার ছবিও দেখা গেছে। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে পটপরিবর্তনের পর আত্মগোপনে চলে যান এই মাদক কারবারি। কয়েকদিন পর খোলস পাল্টে বৃহৎ একটি রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠনের নেতা পরিচয়ে ফিরে আসেন গুলশান-বনানী এলাকায়। এরপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কিছু অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশে ফের শুরু করেন সিসা ও ম্যাসাজ পার্লার। সেখান থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কথা বলে প্রতি রাতে হাতিয়ে নিচ্ছেন লাখ লাখ টাকা। 

মূলত রাত গভীর হলেই জুয়েল সিন্ডিকেটের তৎপরতা শুরু হয় গুলশান-বনানী এলাকায়। তার সঙ্গে সারাক্ষণ ২-৩ জন অস্ত্রধারীও থাকে বলে অনেকে দাবি করেন। এই সিন্ডিকেটের সদস্যরা একেক দিন একেক স্থানে আড্ডা বসান। সেখানে হাজির হন ধনীর দুলাল-দুলালীরা। আড্ডার একপর্যায়ে তাদের অন্তরঙ্গ ছবি ও ভিডিও তুলেও ব্লাকমেল করার অভিযোগ রয়েছে জুয়েলের বিরুদ্ধে। আর মান-সম্মানের কথা চিন্তা করে অনেকেই বিষয়টি গোপনে সমাধান করছেন কোটি টাকার বিনিময়ে।

সূত্রমতে, এই জুয়েলের নামে ডজনেরও বেশি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে ডিএমপির ভাটারা থানায় দুটি মামলা (২০২৩ সালের ২২ ডিসেম্বরের নন-এফআইআর ১৪৯৫ ও ২০২২ সালের ২ ডিসেম্বরের এফআইআর নং-৪), রমনা মডেল থানায় একটি (২০২৩ সালের ৩১ অক্টোবর মামলা নং ২৬) মামলা রয়েছে। প্রতিটি মামলায় প্রতারণা, ছিনতাই, চুরিসহ নানা ধরনের অভিযোগ আনা হয়েছে। এছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে তার নামে নারী পাচার ও মাদক কারবারের একাধিক অভিযোগ রয়েছে বলে জানিয়েছেন তার ঘনিষ্ঠরা। 

সম্প্রতি দাবি করা মোটা অংকের চাঁদা না পেয়ে বনানীর একটি হোটেলে তথাকথিত অভিযান চালিয়ে ৩ হোটেল কর্মকর্তা-কর্মচারীকে আটক করে চালান দেওয়ার ঘটনায় আলোচনায় আসেন মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিদর্শক আতাউর, সহকারী পরিচালক এনায়েত এবং মাদক ও নারী কারবারি সিসা জুয়েল। বৃহস্পতিবার গভীর রাতে বনানীর ইউনিক রিজেন্সী হোটেলে অভিযান চালিয়ে মদের কিছু খালি বোতল উদ্ধার করে ওই হোটেলের তিনি কর্মকর্তা-কর্মচারীকে আটক করে বনানী থানায় মামলা করেন ইন্সপেক্টর আতাউর নিজেই। ওই ঘটনায় মাদকের তিন কর্মকর্তাকে বদলি করা হলেও অধরা থেকে গেছেন এই জুয়েল। 

ওই ঘটনার পর হোটেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ইউনিক রিজেন্সী হোটেলে কখনও অবৈধ কোনো কারবার হয় না। যে খালি বোতলগুলো উদ্ধার করা হয়েছে তা একজন কাস্টমারের, যার মদপানের লাইসেন্স রয়েছে। ৩০ লাখ টাকা এককালীন চাঁদা এবং প্রতি মাসে ৫ লাখ টাকা চাঁদা না পেয়ে মাদক ও নারী ব্যবসায়ী জুয়েলের সহযোগিতায় ওই হোটেলে অভিযান চালিয়ে একটি সাজানো নাটক বানান মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ঢাকা মেট্রো উত্তর সার্কেলের এই অসাধু দুই কর্মকর্তা। যাদেরকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে, তারা মাদক সেবন তো দূরের কথা, সিগারেট পর্যন্ত খান না। 

হোটেলের সিসি টিভির ফুটেজে থেকে দেখা গেছে, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ঢাকা মেট্রোর কর্মকর্তারা অভিযান পরিচালনার সময় হোটেল কর্মকর্তাদের সঙ্গে অহেতুক তর্কে জড়িয়ে যান। একপর্যায়ে তারা লাথি মেরে মেঝেতে ফেলে দেন এবং হোটেলের এক কর্মচারীকে এলোপাতাড়ি কিলঘুসি মারতে থাকেন। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের এই কর্মকর্তাদের এসব আচরণে হোটেলে অবস্থানরত বিদেশি অতিথি এবং চারপাশের লোকজন হতবাক বনে যান। তারা এই ঘটনার তাৎক্ষণিক প্রতিবাদও জানান।

জানা গেছে, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সরকারের দায়িত্ব নেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। শুরুতেই দেশের আইনশৃঙ্খলা উন্নয়নের পাশাপাশি মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করে অন্তর্বর্তী সরকার। মাদকের কারবার বন্ধে বিভিন্ন স্পটে অভিযান জোরদারের পাশাপাশি মাদক কারবারিদের একের পর এক গ্রেপ্তার করতে থাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। 

সরকারের নেওয়া এসব পদক্ষেপে আশাবাদী হয়ে ওঠে মানুষ এবং ভালো মানের হোটেল ব্যবসায়ীরা। তারা ভাবতে থাকে এখন থেকে আর কাউকে নানা অজুহাতে মোটা অঙ্কের মাসোহারা দিতে হবে না। শিকার হতে হবে না হয়রানির। তবে থেমে নেই অপকর্ম। সবার অগোচরে গুলশান ও বনানী জোনের হোটেল, সিসা বার, বার এবং বিভিন্ন মাদক স্পট থেকে প্রতি মাসে প্রায় কোটি টাকার চাঁদা ওঠাচ্ছেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উত্তর জোনের কর্মকর্তারা। আর তাদের চাঁদাবাজির এসব ঘটনা অনেকটাই ওপেন সিক্রেট। দাবিকৃত চাঁদা না পেলে তারা লোকদেখানো অভিযানও চালিয়ে থাকেন সংশ্লিষ্ট হোটেল, বারসহ মাদক স্পটগুলোতে। আর এসব কিছু নিয়ন্ত্রণ করেন সিসা জুয়েল। তাদের হয়ে বিভিন্ন স্পট থেকে টাকা আদায়ের অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

কে এই ইয়াবা জুয়েল

পুলিশ, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর এবং ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে সিসা জুয়েল এক পরিচিত নাম। নারায়ণগঞ্জের বাসিন্দা সাহাবুদ্দিনের ছেলে রাইসুল ইসলাম জুয়েল ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের সময় নিজেকে ছাত্রলীগের নেতা পরিচয় দিতেন। আওয়ালী লীগের সময় সাবেক মন্ত্রী, এমপিসহ রাজনৈতিক নেতা, পুলিশ কর্মকর্তা, সরকারি পদস্থ কর্মকর্তাদের তিনি তরুণী ও উঠতি বয়সি কথিত মডেল সরবরাহ করতেন। এসব অপকর্মের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের সাবেক মন্ত্রী, এমপি ও সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে জুয়েলের বিশেষ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। আর ওপর মহলে এই সম্পর্ককে ব্যবহার করে আওয়ামী লীগের সময় বনানী ও গুলশান এলাকায় অবৈধ মাদকের কারবার ও দেহব্যবসা নির্বিঘ্নে করতেন সিসা জুয়েল। 

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলেও সিসা জুয়েল রয়ে গেছেন বহাল তবিয়তে। তিনি নির্বিঘ্নে চালিয়ে যাচ্ছেন মাদক ও নারী সাপ্লাইয়ের কারবার। একাধিক মামলা মাথায় নিয়েও তিনি প্রশাসনের চোখ এড়িয়ে থেকে যাচ্ছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। 

মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অসাধু এই দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অসংখ্য অভিযোগ প্রতিদিনের বাংলাদেশের হাতে রয়েছে। পর্যায়ক্রমে তা প্রকাশ করা হবে।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : মোরছালীন বাবলা

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা