চট্টগ্রাম অফিস
প্রকাশ : ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ২৩:১০ পিএম
র্যাবের হাতে ধরা পড়া অপহরণকারী চক্রের সদস্য দুলাল মিয়া ও মোরশেদ। ছবি : প্রবা
চট্টগ্রামে ১৫ মাসের এক শিশুকে অপহরণ করে বিক্রি করে দেওয়ার নয়দিনের মাথায় দুই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। পাশাপাশি অপহৃত শিশুটিকেও উদ্ধার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারের দু’জনের মধ্যে দুলাল মিয়া নামে একজন এই ঘটনার হোতা বলে জানিয়েছে র্যাব। অসহায় নারীদের ফাঁদে ফেলে তাদের সন্তান অপহরণ করে বিক্রি করে দেওয়াই দুলাল মিয়ার পেশা।
বুধবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে কিশোরগঞ্জ সদর থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে দুলালকে গ্রেপ্তার করা হয়। ওই রাতেই ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে উদ্ধার করা হয় শিশুটিকে। একইসঙ্গে গ্রেপ্তার করা হয় মোরশেদ নামে আরেকজনকে।
র্যাব জানিয়েছে, গত ১৭ ফেব্রুয়ারি ফাতেমা আক্তার পাঁচ বছরের কন্যা ও ১৫ মাসের ছেলে রাব্বিকে নিয়ে রেলওয়ে স্টেশনে যান। সেখানে পূর্বপরিচিত দুলাল মিয়ার কাছে নেত্রকোনাগামী ট্রেনের সময়সূচি জানতে চান তিনি। দুলাল মিয়া তাদের জানান যে সেদিন নেত্রকোনাগামী কোনো ট্রেন নেই। পরে দুলাল ওই নারীকে সন্তানসহ কোতোয়ালি থানার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরিয়ে রাতে বাকলিয়া থানার বাসুর কলোনি নামক জায়গায় একটি কক্ষ ভাড়া করে রাখেন।
পরদিন ফাতেমা সকালের নাশতা খেয়ে গোসলখানায় গেলে দুলাল মিয়া তার ১৫ মাসের শিশু রাব্বিকে নিয়ে পালান। এ ঘটনায় ফাতেমার স্বামী বাদী হয়ে ২৪ ফেব্রুয়ারি বাকলিয়া থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা করেন। ওই মামলার পরিপ্রেক্ষিতে র্যাব-১৪ ও র্যাব-৭ যৌথ অভিযান চালিয়ে দুলালকে গ্রেপ্তার করে।
র্যাব বলছে, দুলাল মিয়া ও তার পরিবার শিশু অপহরণ চক্রের সঙ্গে জড়িত। এর আগেও তিনি একটি শিশুকন্যা চুরি করে মামলার আসামি হয়েছেন। ওই মামলায় এখনও জেল খাটছেন তার স্ত্রী।
গ্রেপ্তার দুলাল মিয়া ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল থানার শোলাবাড়ি এলাকার দুধ মিয়ার ছেলে এবং মোরশেদ মিয়া একই থানাধীন শাখাইতি এলাকার ইজ্জত আলীর ছেলে।
র্যাব-৭ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. মাহবুব আলম বলেন, ‘দুলাল ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় তার পরিচিত এক প্রবাসী দম্পতির কাছে এক লাখ টাকার বিনিমিয়ে অপহৃত শিশুটিকে বিক্রি করে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানতে পারি, শিশুটি অপর আসামি মোরশেদের কাছে রয়েছে। সেই অনুযায়ী আমরা মোরশেদকে গ্রেপ্তার করে শিশুটিকে উদ্ধার করি। মোরশেদ ১৭ বছর প্রবাসে ছিলেন। তিনি পাঁচ কন্যা সন্তানের জনক। ছেলে সন্তানের আকাঙ্ক্ষায় তিনি এই অপহরণ চক্রের যোগাসাজশে প্ররোচণা দিয়ে শিশুটিকে তার কাছে নিয়ে যান।’
দুলাল আগেও এমন অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন দাবি করে তিনি বলেন, ‘দুলালের বিরুদ্ধে কিশোরগঞ্জের ভৈরবে একটি চুরি সংক্রান্ত মামলার তথ্য পাওয়া গেছে। এর আগেও দুলাল সারা মনি নামে আড়াই বছরের এক শিশুকে অপহরণ করে মামলার আসামি হয়েছিল। ওই ঘটনায় সম্পৃক্ততার অভিযোগে তার স্ত্রী রুনা বেগম কারাগারে রয়েছেন। দুলাল মিয়ার মোবাইলে বাচ্চা বিক্রি সংক্রান্ত বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে কথোপকথনের প্রাথমিক তথ্য আমরা পেয়েছি। আপাতদৃষ্টিতে আসামি ও তার পরিবার এক ভয়ংকর সক্রিয় অপহরণ চক্রের সদস্য বলে জানা গেছে। এই চক্রের অন্য সদস্যদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।’