× ই-পেপার প্রচ্ছদ সর্বশেষ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি শিক্ষা ধর্ম ফিচার ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

এনআরবিসিতে ফের সক্রিয় তমাল চক্র

রেদওয়ানুল হক

প্রকাশ : ০৭ জানুয়ারি ২০২৫ ১০:২৫ এএম

গ্রাফিক্স : প্রতিদিনের বাংলাদেশ

গ্রাফিক্স : প্রতিদিনের বাংলাদেশ

গুরুতর অনিয়মের ঘটনা ঘটেছে এনআরবি কমার্শিয়াল (এনআরবিসি) ব্যাংকে। সেখানে বিশেষ সিন্ডিকেট তৈরি করে দুর্নীতির আখড়া গড়েছেন খোদ ব্যাংকের চেয়ারম্যান এস এম পারভেজ তমাল। শুধু তাই নয়, অনিয়মের সহযোগীদের বিশেষ পুরস্কারও দিয়েছেন তিনি। তবে আইন অমান্য করে পুরস্কার দিতে গিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তোপের মুখে পড়তে হয়েছে তাকে। অনিয়মের তথ্য প্রমাণিত হওয়ায় তার বিরুদ্ধে শাস্তির সুপারিশও করা হয়। তবে বিগত শেখ হাসিনা সরকারের শীর্ষ ব্যক্তিদের আনুকূল্যে সব শাস্তি থেকে রেহাই পেয়েছেন তিনি। 

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক পলাতক গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারকে বাগে নিতে তার আপন ভগ্নিপতিকে কোনো অভিজ্ঞতা ছাড়াই ব্যাংকের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে বসিয়েছেন। সরকার পতনের পর এস এম পারভেজ তমালের বিরুদ্ধে হত্যা মামলাও হয়েছে। তবে অদৃশ্য কারণে তিনি এখনও স্বপদে বহাল আছেন। এমনকি তার সহযোগীদের পদোন্নতি দিয়ে চাঙা রাখছেন। তবে পদোন্নতিপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের মধ্যে এমন কয়েকজন আছেন যাদের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। এ কারণে তাদের ব্যাংক হিসাব তলব ও জব্দ করেছে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। 

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একাধিক প্রতিবেদন এবং দাখিল হওয়া অভিযোগ পর্যালোচনা করে দেখা যায়, পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যানসহ কয়েকজন পরিচালক মিলে কোম্পানি খুলে তার মাধ্যমে এনআরবিসি ব্যাংকে নিয়োগ দিয়েছেন প্রায় ৪ হাজার চুক্তিভিত্তিক কর্মী। পর্ষদের বৈঠকে খাবার কেনায় অস্বাভাবিক ব্যয়ের তথ্য মিলেছে। একই দিন সকালে লিখিত পরীক্ষা নিয়ে বিকালে মৌখিক পরীক্ষা নেওয়ার মতো ঘটনাও ঘটেছে। বাজেয়াপ্তযোগ্য শেয়ারের মালিকানা নেওয়া হয়েছে চেয়ারম্যানের ব্যবসায়িক অংশীদারের নামে। 

ব্যাংকের উদ্যোক্তা শেয়ারহোল্ডাররা ব্যাংকের চেয়ারম্যান এস এম পারভেজ তমালের স্বেচ্ছাচারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বাংলাদেশ ব্যাংক, অর্থ মন্ত্রণালয়, দুর্নীতি দমন কমিশনসহ বিভিন্ন দপ্তরে দফায় দফায় চিঠি দিয়েছেন। বিভিন্ন সময়ে কিছু পদক্ষেপ নিয়েও অজানা কারণে চুপ হয়ে গেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গভর্নরের ভগ্নিপতিকে চাকরি এবং ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়সহ নিষিদ্ধ সংগঠনটির চিহ্নিত অপরাধীরদের বলয়ে তমালের বিশেষ বাহিনী ছিল। তবে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতেও তিনি কোন শক্তিবলে দাপট দেখাচ্ছেন তা নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র হুসনে আরা শিখা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। 

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন বলছে, এনআরবিসি ব্যাংকের মানবসম্পদ নীতিমালা অনুযায়ী, কর্মমূল্যায়নের ভিত্তিতে একজন কর্মকর্তাকে একবারে সর্বোচ্চ তিনটি ইনক্রিমেন্ট দেওয়া যাবে। আবার পদোন্নতির জন্য অন্তত দুই বছরের এসিআর থাকতে হবে। কাজী মো. সাফায়েত কবিরসহ কয়েকজন কর্মকর্তার পদোন্নতির ক্ষেত্রে এ নিয়ম মানা হয়নি। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শনে উঠে এসেছে, চেয়ারম্যানের আস্থাভাজন ২৭ কর্মকর্তাকে চার থেকে ১৩টি পর্যন্ত ইনক্রিমেন্ট দেওয়া হয়েছে। কোনো ধরনের অভিজ্ঞতা ছাড়াই ব্যাংকের বোর্ড সেক্রেটারিসহ বিভিন্ন পর্যায়ে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে চেয়ারম্যানের অপছন্দের কয়েকজন কর্মকর্তাকে নানা উপায়ে চাপ প্রয়োগ করে ব্যাংক থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে চেয়ারম্যান এস এম পারভেজ তমালের বক্তব্যের জন্য যোগযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, তার বিরুদ্ধে ছাত্র হত্যাচেষ্টর মামলা থাকায় বর্তমানে তিনি পলাতক আছেন। 

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিদর্শন দলের সুপারিশের পরও অভিযুক্তদের কোনো শাস্তি হয়নি। অজানা কারণে সব ধামাচাপা পড়ে যায়। তবে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ব্যাংকটির উদ্যোক্তারা ফের একাধিক অভিযোগ দায়ের করেছেন। এর প্রেক্ষিতে গত ১ ডিসেম্বর ব্যাংকের কর্মকর্তা কামরুল হাসান, দিদারুল হক মিয়া, রাজিদুল ইসলাম, জমিরুদ্দিন, দিদারুল ইসলাম, ফরহাদ সরকারসহ ৬ জনের ব্যাংক হিসাব তলব করেছে বিএফআইইউ। এর আগে গত ১৪ নভেম্বর ব্যাংকটির চেয়ারম্যান পারভেজ তমাল ও নির্বাহী কমিটির সাবেক চেয়ারম্যান আদনাম ইমামসহ ৩ জনের ব্যাংক হিসাব স্থগিতের আদেশ দেওয়া হয়।

তবে এসব কর্মকর্তাকেও পদোন্নতি দিয়েছে এনআরবিসি কর্তৃপক্ষ। অর্থাৎ কেন্দ্রীয় ব্যাংক যাদের অবৈধ লেনদেন শনাক্তে তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে তাদেরকে ব্যাংক থেকে পদোন্নতি দেওয়ার মাধ্যমে চাঙা রাখা হচ্ছে। ব্যাংকটির কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এসব ব্যক্তি যাতে তমাল ও তার সহযোগীদের বিষয়ে মুখ না খোলে সেজন্য তাদেরকে পদোন্নতি দিয়ে শান্ত রাখা হয়েছে। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে এনআরবিসি ব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক রবিউল ইসলাম প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘ব্যাংকের পারফরম্যান্স ভালো করতে হলে কর্মকর্তাদের মনোবল চাঙা রাখতে হয়। তাই তাদেরকে পদোন্নতি দেওয়া হচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ব্যাংক তদন্ত করছে, যদি তারা দোষী সাব্যস্ত হয় তাহলে তাদের শাস্তির আওতায় আনা হবে।’ 

তবে অতীত ইতিহাস বলছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক একাধিক পরিদর্শন শেষে শাস্তির সুপারিশ করলেও তা বাস্তবায়ন করেনি এনআরবিসি কর্তৃপক্ষ। এসব কর্মকর্তাই ইতঃপূর্বে বে-আইনিভাবে আর্থিক সুবিধা নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের হস্তক্ষেপে তা আবার ফেরত দিতে বাধ্য হয়েছেন। 

তমাল চক্রের যেসব সদস্য অনিয়মে জড়িত

ডিএমডি হারুনুর রশিদ : কেন্দ্রীয় ব্যাংকে দাখিলকৃত অভিযোগপত্র এবং একাধিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, তমালের সকল অনিয়ম সফলভাবে সম্পন্ন করার দায়িত্বে নিয়োজিত আছেন ব্যাংকের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান অর্থনৈতিক কর্মকর্তা (সিএফও) হারুনুর রশিদ। তমালের ইশারায় এ ব্যাংকার দৈনন্দিন যাবতীয় কাজ, নিয়োগ, পদোন্নতি, ঋণ অনুমোদন ও বিতরণ, কেনাকাটা, ব্যবসা সম্প্রসারণ, সকল প্রকার খরচের অনুমোদনকারী তিনি। দিনশেষে দুর্নীতিলব্ধ টাকা তমালের হাতে পৌঁছানোর দায়িত্বও পালন করেন তিনি। এ ছাড়া বৈদেশিক বাণিজ্যের আড়ালে দুর্নীতি-কারসাজি, শেয়ার কারসাজিরও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। একই সঙ্গে ব্যাংকের এসকেএস প্রকল্পের মাধ্যমে টাকা লোপাটের মূল কর্মকর্তা এবং এসকেএস প্রকল্পের প্রধান বিজনেস ও ঋণ অনুমোদনকারী কর্মকর্তাও তিনি। অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, এই কর্মকর্তা ঢাকার বসুন্ধরা, বারিধারা, পূর্বাচল, শান্তিনগর, ধানমন্ডি, মুন্সীগঞ্জসহ বিভিন্ন স্থানে প্রায় ২৭টি প্লট এবং ফ্ল্যাটের মালিক। তাকে মার্কেন্টাইল ব্যাংক থেকে একসঙ্গে তিনটি প্রমোশন দিয়ে পদায়ন করেন পারভেজ তমাল।

সাফায়েত কবির কানন (এসইভিপি) : ডিএমডি হারুনুর রশিদের অনুগত এবং তমাল-আদনান দুর্নীতিবাজ চক্রের অন্যতম প্রধান সহায়ক সাফায়েত কবির কানন। ব্যাংকের সকল নিয়োগ বাণিজ্যের হোতা তিনি। অর্থের বিনিময়ে প্রায় ২ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। জনপ্রতি কমপক্ষে ৫ থেকে ১০ লাখ টাকা করে পদভেদে ঘুষ নিয়েছেন এ কর্মকর্তা। পরবর্তীতে এসব নিয়োগ অবৈধ হিসেবে ঘোষণা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। কাননের ঢাকার বনশ্রী, হাতিরঝিল ও গুলশানে বেশ কয়েকটি প্লট ও ফ্ল্যাট আছে এমন অভিযোগ তুলে ধরা হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকে দাখিল হওয়া অভিযোগপত্রে।

ভারপ্রাপ্ত এমডি রবিউল ইসলাম : তিনি তমালের পক্ষে বিভিন্ন সংস্থাকে ঘুষ দেন। মার্কেন্টাইল ব্যাংক থেকে দুর্নীতির দায়ে প্রায় ২০ বছর আগেই দুদকের জালে আটকা পড়েন এ কর্মকর্তা। তিনি বিএফএইইউর সাবেক প্রধান মাসুদ বিশ্বাসের বাল্যবন্ধু। মাসুদ বিশ্বাসের মাধ্যমে তমাল-আদনানের অর্থ পাচার মামলা নিষ্পত্তি করতেন রবিউল।

ডিএমডি কবির আহমেদ : আন্তর্জাতিক ব্যাবসার আড়ালে ও বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময়ে ব্যাপক কারসাজির অভিযোগ রয়েছে কবির আহমেদের বিরুদ্ধে। তমাল-আদনানের আন্তর্জাতিক ব্যবসায় তিনি সহায়তা করেন। তার বিরুদ্ধে ব্যাংকের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান তৌফিক চৌধুরীর কালোটাকা বৈধ করার অভিযোগ তদন্তের আবেদন জানানো হয়েছে। 

ডিএমডি হুমায়ুন কবির : বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক এই নির্বাহী পরিচালক ২০২২ সালে ২ কোটি টাকার বিনিময়ে তমাল-আদনানের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ব্যাংকের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে বাধা দিয়েছেনÑ এমন অভিযোগ করেছেন ব্যাংকের উদ্যোক্তা পরিচালকরা। এ ছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের তার প্রভাব কাজে লাগাতে অবসরের পর তাকে উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। চেয়ারম্যান তমালের পরামর্শে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্রদের বিপক্ষে কাজ করতে ও স্বৈরাচার সরকারের পক্ষে কাজ করতে অফিস আদেশ জারি করেন এই হুমায়ুন কবির। এখনও বাংলাদেশ ব্যাংকের সকল প্রকার পরিদর্শন ও তদন্ত প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ করেন তিনি। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন যুগ্ম পরিচালক ফেসবুক স্ট্যাটাসের মাধ্যমে তার সব অনৈতিক আদেশ ও কাজে হস্তক্ষেপের তথ্য ফাঁস করেছেন। 

বিএফআইইউয়ের তদন্তের অধীন কর্মকর্তাদের পদোন্নতি দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে মোহাম্মদ হুমায়ূন কবির প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘হিসাব তলবের অর্থ এই নয় যে, তাদেরকে প্রমোশন দেওয়া যাবে না। যতক্ষণ পর্যন্ত তারা দোষী সাব্যস্ত না হন তারা প্রমোশন পেতে পারেন।’

এ কে এম রবিউল ইসলাম (এসইভিপি) : আদনানের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ হওয়ার সুবাদে গুলশান ব্রাঞ্চের দায়িত্বে থাকা অবস্থায় আদনানের সকল দুর্নীতির প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসেবে জড়িয়ে পড়েন রবিউল। নিজের ভায়রার নামে ভার্সাটাইল নামে কোম্পানি খুলে ঘুষের টাকা এই একাউন্টে জমা করার গুরুতর অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। গুলশান ও বনানী ব্রাঞ্চের বিভিন্ন অস্তিত্বহীন কোম্পানির ঋণ প্রদানের সঙ্গেও জড়িত এই কর্মকর্তা। মাত্র তিন বছরে ঢাকার বসুন্ধরাতে ৭ তলা বাড়ি করেছেন তিনি।

আহসান হাবিব (এসভিপি) : সাবেক গভর্নর রউফ তালুকদারের একমাত্র ভগ্নিপতি তিনি। রউফ তালুকদারকে বাগে আনতে এই আহসান হাবিবকে কোনো রকম ব্যাংকিং অভিজ্ঞতা ছাড়াই ব্যাংকের সমস্ত নিয়মনীতি লঙ্ঘন করে এসভিপি হিসেবে নিয়োগ দেয় পারভেজ তমাল। পরবর্তীতে তাকে আবার কিছুদিনের মধ্যেই পদোন্নতি দিয়ে কোম্পানি সেক্রেটারির মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে বসায়। দুর্নীতি ধামাচাপা দিতে রউফ তালুকদারকে ঘুষ দেওয়া এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের তমালের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিতে নির্দেশনা দিতেন গভর্নরের এই ভগ্নিপতি।

দিদারুল হক মিয়া (এসভিপি) : ব্যাংকের আইটি বিভাগের প্রধান ও ক্রয় কমিটির সদস্য হওয়াতে সকলপ্রকার গুরুতর অনিয়ম ও বাংলাদেশ ব্যাংককে কৌশলে মিথ্যা তথ্য দিয়ে ধোঁকা দেন দিদারুল হক। ব্যাংকের প্রতিটি ব্রাঞ্চ থেকে অবৈধ উপায়ে সিস্টেম চার্জের নামে প্রতি মাসে কোটি কোটি টাকা কর্তন করে তমাল-আদনান ও ব্যাংকের সঙ্ঘবদ্ধ আর্থিক অপরাধী চক্রের সঙ্গে ভাগাভাগি করা তার দায়িত্ব। ব্যাংকের নিরীহ, সৎ ও দুর্নীতিবিরোধী কর্মকর্তাদেরকে টর্চার সেলে নিয়ে নির্যাতনের গুরুতর অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে তথ্য গোপনের দায়ে সম্প্রতি জরিমানাও গুনেছে এনআরবিসি ব্যাংক। তার বিরুদ্ধে শাস্তির সুপারিশও করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

কমান্ডার ফরহাদ সরকার (এসভিপি) : তমালের হয়ে ব্যাংকের সকলপ্রকার নিপীড়নমূলক কাজ করেন ফরহাদ সরকার। সৎ ও পেশাদার ব্যাংক কর্মকর্তাদের নির্যাতন-নিপীড়নের মূল কারিগর এই ফরহাদ সরকার ব্যাংকের টর্চার সেলেরও প্রধান। ব্যাংকের সকল নিয়মনীতি লঙ্ঘন করে তাকে নিয়োগ এবং পদোন্নতি সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। একই সঙ্গে তিনি তমালের নিজস্ব প্রতিষ্ঠান এনআরবিসি ম্যানেজমেন্টেরও প্রধান নির্বাহী, যা সম্পূর্ণ আইন বহির্ভূত হিসেবে চিহ্নিত করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

পারভেজ হাসান (এসভিপি) : অবসরপ্রাপ্ত এই সেনা কর্মকর্তাকে ব্যাংকের সমস্ত নিয়মনীতি উপেক্ষা করে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। অনিয়ম করে ভুয়া কেনাকাটার নাটক সাজিয়ে ব্যাংক থেকে টাকা বের করার কাজে তিনি পটু। ঢাকার সাভার, মানিকগঞ্জ, মিরপুর ও কিশোরগঞ্জে এই পারভেজ হাসানের বিশাল সম্পদ রয়েছে বলে বাংলাদেশ ব্যাংকে দাখিল করা অভিযোগে বলা হয়েছে।

মারুফ উদ্দিন কামাল (এসভিপি) : অনিয়মের মাধ্যমে ঋণ বিতরণ ও মন্দ ঋণকে কৌশলে নিয়মিত দেখানোর মূল কুশীলব এই মারুফ উদ্দিন। মার্কেন্টাইল ব্যাংক থেকে তাকে বিশেষ পারদর্শী হিসেবে নিয়ে আসা হয়েছে। 

প্রধান ফরেক্স ডিলার জামির উদ্দিন : বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময়ের নামে অর্থ লুট ও তমালের সঙ্গে সেই টাকা ভাগাভাগির সঙ্গে জড়িত তিনি। তার ব্যাংক স্টেটমেন্টে দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত থাকার প্রমাণ মিলেছে বলে অভিযোগে দাবি করা হয়েছে। 

আসিফ ইকবাল : শেয়ার কেলেঙ্কারি, আর্থিক দুর্নীতিসহ নানামুখী অনিয়ম-দুর্নীতিতে অভিযুক্ত এ কর্মকর্তা চেয়ারম্যানের পিএস হিসেবে কাজ করছেন। দুদকের মামলায়ও তার নামসহ তার পরিবারের অনেকের নাম রয়েছে। তমালেন ফিনল্যান্ডের ব্যবসা ও বিদেশে অর্থ পাঠানোর কাজে তিনি নিয়োজিত আছেন। যার অধিকাংশই অবৈধভাবে পাচার করা হচ্ছেÑ এমন অভিযোগ করা হয়েছে। 

কামরুল হাসান : অবৈধ নিয়োগ বাণিজ্য, নিজের ও নিজের পরিবারের সদস্যদের নামে ব্যাংকের দুর্নীতিলব্ধ হিসাবসমূহের আন্তঃলেনদেন এবং তমালের বান্ধবীদের সঙ্গে লেনদেনের অভিযোগ রয়েছে এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। কামরুল ওভারসিস ও কামরুল ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলসের ব্যবসা গড়ে তুলেছেন তিনি। 

রূপপুর শাখা ম্যানেজার রাশেদুল হাসান : তমালের হয়ে রূপপুরে ঠিকাদারি ব্যবসা পরিচালনা করা, ব্যাংকের ম্যানেজার হয়েও তমালের হয়ে রাশিয়ানদের জন্য রূপপুরে হোটেল ব্যবসা পরিচালনা করা, ভুয়া ও বেনামি ঋণ সৃষ্টি, অবৈধ বৈদেশিক মুদ্রার ব্যবসায় জড়িত হওয়ার অভিযোগ আছে এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। 

মাইক্রোফিন্যান্স ভিপি রমজান আলী : এসকেএসের সংযোগে সকল অনিয়ম-দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত এই কর্মকর্তা। কমিউনিটি ব্যাংক থেকে পুলিশ পরিচয়ে চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। তার সহযোগী আব্দুল হকও চাকরি করছেন রমজানের তদবিরে। একক ক্ষমতায় ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত জামানতবিহীন ঋণ অনুমোদন ও বিতরণের সুযোগ নিয়ে ভুয়া কাস্টমার সাজিয়ে শত শত ভুয়া ঋণ অনুমোদন ও বিতরণের অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে। যার প্রকৃত সুবিধাভোগী চেয়ারম্যান পারভেজ তমাল। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক পরিদর্শনে দালিলিক প্রমাণও মিলেছে।

আসিফ আহমেদ : অবৈধ নিয়োগ বাণিজ্য, পদায়ন, প্রমোশন, দুর্নীতিতে অসহযোগিতাকারী পেশাদার কর্মকর্তাদেরকে নানামুখী ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে পর্যুদস্ত করাসহ নানামুখী অনিয়ম-দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত এই আসিফ আহমেদ। 

অভিযুক্ত এসব কর্মকর্তার সিংহভাগকে ৫ থেকে ১৩টি বেআইনি ইনক্রিমেন্ট দিয়েছিলেন তমাল। পরে বাংলাদেশ ব্যাংকের হস্তক্ষেপে সেই অর্থ ফেরত নেওয়া হয়। অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের প্রত্যেকের মন্তব্য জানার চেষ্টা করে প্রতিদিনের বাংলাদেশ। তবে ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছাড়া কেউ মন্তব্য দিতে রাজি হননি। 

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : মোরছালীন বাবলা

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা