প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২২ ডিসেম্বর ২০২৪ ১২:০২ পিএম
সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদসহ পুলিশ-র্যাবের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা আর ক্ষমতাচ্যুত সরকারের মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ ওই দলের নেতাদের ম্যানেজ করতে নিজের সুন্দরী স্ত্রী তানজিনা সুলতানা জুহীকে টোপ হিসেবে ব্যবহার করতেন বিশ্ববাটপাড় হিসেবে পরিচিত জেসিকা গ্রুপের মালিক জসীম উদ্দিন। অবশ্য সাধারণ মানুষের কাছে এই জসীম সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের ক্যাশিয়ার নামেই পরিচিত। বেনজীরের ক্যাশিয়ার হিসেবে কয়েকশ কোটি টাকা বিদেশে পাচারের অভিযোগ রয়েছে জসীমের বিরুদ্ধে। বেনজীরের ক্যাশিয়ার হওয়ার কারণে আগে ভয়ে জসীম বা তার স্ত্রী জুহীর বিরুদ্ধে মুখ খুলতেন না কেউই। তবে ৫ আগস্টের পর পাল্টে গেছে সবকিছু। ছাত্র-জনতার ওপর হামলা, প্রতারণা ও জালজালিয়াতির মামলায় জসীম এখন কারাগারে। গ্রেপ্তারি পরোয়ানা মাথায় নিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন তার স্ত্রী তানজিনা সুলতানা জুহী। স্বামী জসীমের অবর্তমানে সবকিছুর কলকাঠি নাড়ছেন এখন জুহী।
টিবয় থেকে জসীম উদ্দিন আজ শত শত কোটি টাকার মালিক। রেমিট্যান্সযোদ্ধা হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিলেও প্রবাসজীবনে তার পেশাই ছিল বাটপাড়ি। প্রভাবশালীদের মনোরঞ্জনের জন্য স্ত্রী জুহীকে টোপ হিসেবে ব্যবহার করতেন জসীম উদ্দিন। যেখানে যেতেন সেখানে স্ত্রী জুহীকে নিয়ে যেতেন, আর তাকে দিয়েই কাজ হাসিল করতেন। এভাবেই রাতারাতি অর্থবিত্তের মালিক হয়ে ওঠেন জসীম উদ্দিন। সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ, পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ ও আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গেও জুহীর ছিল ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ। এই তিনজনকে ম্যানেজ করেই চন্দনাইশের উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন জসীম উদ্দিন।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর রাতারাতি নিজেকে পাল্টে ফেলেছেন জুহী। বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে গড়ে তুলেছেন ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ। নামসর্বস্ব একটি দলের নেতার সঙ্গেও রয়েছে তার ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ। তাদের দিয়েই এখন নানা অপতৎপরতা চালাচ্ছেন জুহী। জসীম উদ্দিনের গোটা পরিবারই নানা প্রতারণার সঙ্গে জড়িত। জসীমের ভাই মাসুদও একজন প্রতারক। ভাইয়ের মতো বাটপাড়ি তার পেশা। বাটপাড়ি ও প্রতারণা করে মাসুদও শতকোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। জসীম উদ্দিনের শ্যালক জুয়েলের বিরুদ্ধেও রয়েছে প্রতারণার নানা অভিযোগ। বোনজামাইয়ের পথ ধরে চালিয়ে যাচ্ছেন শিল্পপতিসহ নানা স্তরের মানুষের সঙ্গে প্রতারণা। অভিযোগ রয়েছে, বিগত স্বৈরাচার সরকারের সময়ে জসীম উদ্দিনের ভাই মাসুদ ও শ্যালক জুয়েলের সঙ্গে দেশের শীর্ষস্থানীয় ইয়াবা ব্যবসায়ী বদির ছিল ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ। এলাকাবাসী জানিয়েছে, কক্সবাজার ও চন্দনাইশে ইয়াবা সাপ্লাইয়ের কাজ করতেন মাসুদ ও জুয়েল। একাধিকবার পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করলেও সাবেক আইজিপি বেনজীরের নির্দেশে তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি।
আন্তর্জাতিক ঘরানার মহাবাটপাড় জসীম উদ্দিন এবং তার স্ত্রী তানজিনা সুলতানার বিরুদ্ধে প্রতারণা ও জালিয়াতির দুটি মামলা করেছে দেশের সুপ্রতিষ্ঠিত শিল্পপ্রতিষ্ঠান রংধনু গ্রুপ। কক্সবাজারে হোটেল বিক্রির কথা বলে প্রতারক এই দম্পতি ২৪৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, জেসিকা গ্রুপ নামের একটি শিল্পগ্রুপের মালিক হিসেবে জসীম উদ্দিন রংধনু গ্রুপের মালিকের সঙ্গে পরিচিত হন। জেসিকা গ্রুপের চেয়ারম্যান তানজিনা সুলতানা ও এমডি জসীম উদ্দিন কক্সবাজারে হোটেল আইবিশ লিমিটেড নামের একটি হোটেলের কাজ শুরু করেন। টাকার সমস্যার কথা বলে আসামিগণ শতভাগ শেয়ার বিক্রি করার ঘোষণা দেন। এর বিপরীতে ব্যাংকের মাধ্যমে কয়েক দফায় রংধনু গ্রুপের কাছ থেকে ২৪৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা গ্রহণ করেন তারা। হোটেলটি চালু হওয়ার পর লাভের অংশ হিসেবে আরও ১৮ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে এই প্রতারক দম্পতি। রংধনু গ্রুপের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার আগে এই প্রতারক স্বামী-স্ত্রী জানিয়েছিলেন, হোটেল আইবিশ লিমিটেডের নামে কোনো ব্যাংক লোন নেই। টাকা পরিশোধের পর দেখা যায়, ওই হোটেল এবং সমুদয় সম্পত্তি সোনালী ব্যাংক পিএলসির খাতুনগঞ্জ শাখায় দায়বদ্ধ রেখে তারা আগেই টাকা উঠিয়ে নিয়েছেন। জসীম উদ্দিন বর্তমানে কারাগারে। তার স্ত্রী তানজিনা সুলতানা, ভাই মাসুদ ও শ্যালক চাইছেন রংধনু গ্রুপের পুরো টাকাটা আত্মসাৎ করতে। আর এজন্য নানা কল্পকাহিনী বানিয়ে ফায়দা লোটার চেষ্টা চালাচ্ছেন এই তিন প্রতারক। তবে বাটপাড় জসীম উদ্দিন ও তার পরিবারের সদস্যদের যারা চেনে, তাদের কেউই প্রতারক চক্রের কোনো কথাই বিশ্বাস করছে না।