পারভেজ খান
প্রকাশ : ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১০:০২ এএম
আপডেট : ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১১:৩৭ এএম
ছবি: সংগৃহীত
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সরকার পতনের মতো ঘটনা ঘটে গেলেও চাঁদাবাজদের দৌরাত্ম্যের অবসান হয়নি। ক্ষমতার পটপরিবর্তনের ধাক্কায় কেবল চেহারায় বদল ঘটেছে, চাঁদাবাজি বন্ধ হয়নি। সরকার বদলের শুরুর দিকে কিছুটা ‘বিরতি’ দিয়ে নতুন পরিচয়ে ধীরে ধীরে আবারও মাঠে নেমে পড়েছে চাঁদাবাজরা। আগের মতোই সারা দেশে তাদের উপদ্রব দেখা যাচ্ছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, চাঁদাবাজদের সবচেয়ে বড় টার্গেট পয়েন্ট হচ্ছে শিল্পাঞ্চল, বাণিজ্যিক এলাকা, বাস ও নৌ-টার্মিনাল, বালুমহাল ও হাটবাজার। এই চাঁদাবাজদের বড় বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, সব সময়ই ক্ষমতাসীন দলের অনুগত হয়ে আশ্রয়-প্রশ্রয়ে থাকা। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের টানা ১৫ বছরের শাসনামলে ব্যবসায়ী আর বাসিন্দারা অতিষ্ঠ ছিলেন এই চাঁদাবাজ সিন্ডিকেটের অত্যাচারে। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সেই সরকারের পতনের পর নির্যাতিতরা ভেবেছিল তাদের ভাগ্যে বোধ হয় পরিবর্তন আসবে, কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সেটা ঘটেনি। বিগত সরকারের আমলের চাঁদাবাজদের ছেড়ে যাওয়া শূন্য আসন পূর্ণ হতে সময় লাগেনি। সব পয়েন্টেই আবার নতুন করে শুরু হয়েছে দখল ও চাঁদাবাজি। আর এই চাঁদাবাজরাও বর্তমান সময়ে সুবিধাজনক অবস্থায় থাকা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কিছু অসাধু নেতার আশীর্বাদপুষ্ট। তবে পুলিশের চাঁদাবাজি নিয়ে আপাতত তেমন অভিযোগ মিলছে না। ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী ও অন্যান্য সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
রাজধানীতে চাঁদাবাজদের সবচেয়ে বড় রাজত্ব সায়েদাবাদ, মহাখালী, গাবতলী আর ফুলবাড়িয়া বাসস্ট্যান্ড বা টার্মিনাল। আগে এসব এলাকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করত ‘শাহজাহান-রাঙা, এনায়েত-সিরাজ, কালাম-রুস্তম-সামদানি’ সিন্ডিকেট। তারা সরাসরি আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত ছিলেন। পরিবহন নেতা নামধারী এই চাঁদাবাজরা এখন সবাই পলাতক। কিন্তু তাতে থেমে নেই ওইসব পয়েন্টের চাঁদাবাজি। এসেছে নতুন মুখ। পরিবহন খাতে চাঁদাবাজি বহাল তবিয়তেই রয়েছে। পুরোনোর শূন্যস্থানে এখন সক্রিয় রয়েছে সাইফুল-কফিল-বিশ্বাস গ্রুপ। পরিবহন সেক্টর বাদেও মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকা ও তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলেও শুরু হয়েছে ‘নতুন মুখের’ চাঁদাবাজি।
বিকাশ পরিবহনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সোহরাব হোসেন এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘গত ৫ আগস্ট দেশ থেকে স্বৈরাচার সরকারের বিদায় হয়েছে। কিন্তু পরিবহন ব্যবসায়ীরা সন্ত্রাস, চাঁদাবাজ ও দখলদারমুক্ত হননি।’
ইলিয়টগঞ্জ এক্সপ্রেসের মালিক ও পরিবহন নেতা সাইফুল ইসলাম আগের দুই দফায় বিএনপির শাসনামলে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। গত ১৪ আগস্ট সাইফুলের নেতৃত্বে সমিতির ৩১ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটিও ঘোষণা করা হয়।
সাইফুল ইসলাম গত শুক্রবার এই প্রতিবেদককে জানান, তার বা তাদের বিরুদ্ধে নতুন করে চাঁদাবাজি শুরু করার যে অভিযোগ আনা হচ্ছে, তা ঠিক নয়। বরং পরিবহন খাতে শৃঙ্খলা আনতে তারা দায়িত্ব নিয়েছেন এবং চাঁদাবাজি বন্ধে সর্বাত্মক চেষ্টা চালাচ্ছেন। আরেক পরিবহন নেতা কফিল উদ্দিন দাবি করেন, তিনি সমিতির কার্যালয়ের নিয়ন্ত্রণ নেননি। নেতারা আসছেন না। তাই কর্মচারীরাই এখন সমিতি চালাচ্ছেন।
চাঁদাবাজদের আরেকটি বড় টার্গেট পয়েন্ট রাজধানীর কারওয়ান বাজার। আগে এই এলাকা নিয়ন্ত্রণ করতেন ইরান ও তার অনুগত সন্ত্রাসীরা। সরকার পরিবর্তনের পর গা ঢাকা দিয়েছে আগের চক্র। এসেছে আরেক গ্রুপ। দখল ও চাঁদাবাজিকে কেন্দ্র করে গত ৯ সেপ্টেম্বর রাতে সংঘর্ষ হয় কারওয়ান বাজারে। এক ঘণ্টার বেশি সময় ধরে চলা ওই সংঘর্ষের সময় অনেকের হাতেই দেশীয় অস্ত্র দেখা গেছে। এ ঘটনায় অন্তত ১০ জন আহত হয়।
ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, তেজগাঁও থানা শ্রমিক দলের জালাল, জাহাঙ্গীর, আনু, জাহিদ, সুমন, হাফিজসহ কয়েকজন ওই রাতে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে জোরপূর্বক চাঁদা আদায় করতে গেলে তারা প্রতিরোধের মুখে পড়লে এই সংঘর্ষ বাঁধে। তবে খবর পেয়ে শিক্ষার্থীরা আসার ফলে ঘটনা বেশি দূর এগোয়নি। অভিযুক্ত জালাল আহমেদকে তেজগাঁও থানা পুলিশের জিম্মায় দিয়ে দেন ব্যবসায়ী ও শিক্ষার্থীরা। কিন্তু প্রভাবশালী মহলের হস্তক্ষেপে পরদিনই মুচলেকা দিয়ে থানা থেকে তাকে নিয়ে আসেন শ্রমিক দলের নেতারা।
এ বিষয়ে তেজগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোবারক হোসেন বলেন, ‘কেউ চাঁদাবাজ হিসেবে চিহ্নিত হলে তাকে কোনোভাবেই ছাড় দেওয়া হবে না। কারওয়ান বাজারের ঘটনায় উভয় পক্ষ সমঝোতা করে মুচলেকা দেওয়ায় আটক জালালকে তাদের জিম্মায় দেওয়া হয়েছে।’
চাঁদাবাজি নিয়ে কয়েক দিন আগে এক সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘ছাত্র-জনতার নজিরবিহীন রক্তপাত ও বিপুল প্রাণহানির বিনিময়ে অর্জিত এ সম্ভাবনাকে যারা নিজেদের রাজনৈতিক বিজয় ভাবছেন এবং এটিকে দলবাজি, দখলদারি ও চাঁদাবাজির সুযোগে রূপান্তরের অপপ্রয়াসে লিপ্ত হচ্ছেন, তা আন্দোলনের মূল চেতনার জন্য অশনিসংকেত। গত সরকারের পতনের মুহূর্ত থেকেই লক্ষ করা যাচ্ছে, দলবাজি, চাঁদাবাজি, দখলদারত্বসহ রাজনৈতিক অঙ্গনে আধিপত্য প্রতিষ্ঠার তৎপরতা শুরু হয়েছে দেশজুড়ে।’
দল থেকে কড়া সতর্কবার্তা
এদিকে দেশের বিভিন্ন এলাকায় চাঁদাবাজির সাম্প্রতিক কিছু ঘটনায় বিএনপি এবং দলের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে। এমনকি বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন প্রভাবশালী সদস্য এবং একজন যুগ্ম মহাসচিবের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি ও দখলদারত্বে জড়িত হওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এরই মধ্যে বিভিন্ন অভিযোগে অনেকের বিরুদ্ধে দলীয়ভাবে শাস্তিমূলক ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে। কেউ যাতে এই অপকর্মে জড়িত না হয় তার জন্য বারবার সতর্ক করা হচ্ছে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সাম্প্রতিককালে তার একাধিক বক্তব্যে চাঁদাবাজি ও দখলদারত্ব থেকে দলের নেতাকর্মীদের বিরত থাকতে বারবার আহ্বান জানিয়েছেন। কেউ এসব অপকর্মে জড়িত হলে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও সতর্ক করেছেন তিনি।
চাঁদবাজদের বিরুদ্ধে কঠোর মনোভাব প্রকাশ করেছে জামায়াতে ইসলামীও। সম্প্রতি দলটির কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেছেন, ‘অন্যায়, অপশাসন, চাঁদাবাজি ও দখলদারত্ব প্রতিরোধে জামায়াতে ইসলামী সর্বশক্তি নিয়োগ করে জনগণের পাশে থাকবে। কোনো চাঁদাবাজ, দখলদারকে ছাড় দেওয়া হবে না।’
অন্যান্য রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়েছে। তবে তাতে কাজের কাজ খুব একটা হচ্ছে বলে মনে করছে না ভুক্তভোগীরা।
পুলিশের ভাষ্য : ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি) অতিরিক্ত কমিশনার রেজাউল করিম মল্লিক গতকাল রবিবার প্রতিদিনের বাংলাদেশকে জানান, ঢাকা মহানগর এলাকায় চাঁদাবাজি বন্ধে পুলিশ বদ্ধপরিকর। ডিএমপি বিভিন্ন এলাকায় চাঁদাবাজির কিছু অভিযোগ পেয়েছে। চাঁদাবাজদের তালিকা করে তাদের গ্রেপ্তারে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, চাঁদাবাজদের কোনো দল নেই। যে দলের বা মতেরই হোক না কেন, তারা চিহ্নিত অপরাধী। তাদের কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। ডিএমপির সব থানার পুলিশ এ বিষয়ে কাজ করছে।
সর্বত্রই মাথাচাড়া দিচ্ছে চাঁদাবাজরা
কেবল রাজধানী নয়, বর্তমানে দেশের অন্যান্য অঞ্চলেও নতুন চাঁদাবাজদের দৌরাত্ম্য শুরু হয়েছে। আওয়ামী লীগ ও তাদের সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের জায়গায় এখন বিএনপি ও তাদের অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা চাঁদা আদায় করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিভিন্ন স্থানে এ নিয়ে অপ্রীতিকর অনেক ঘটনাও ঘটছে।
চট্টগ্রাম : চট্টগ্রাম অফিস জানায়, সরকার পরিবর্তনের পর পরই বদলে গেছে চট্টগ্রামের চাঁদাবাজদের চেহারা। বন্দরসহ পুরো চট্টগ্রামে পুরোনো চাঁদাবাজদের জায়গায় আসছে নতুন মুখ। সেই সঙ্গে বদলে যাচ্ছে চাঁদাবাজির ধরনও। এরই মধ্যে নব্য চাঁদাবাজদের থাবা পড়েছে গার্মেন্টস, পরিবহন সেক্টর, ফুটপাথ ও রাজনৈতিক নেতাদের ওপর। চাঁদাবাজির বেশিরভাগ অভিযোগই বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনগুলোর নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে।
স্বেচ্ছাসেবক দলের চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক আলী মুর্তজা খানের বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের রিয়াজউদ্দিন বাজার, বিআরটিসি, চৈতন্যগলি এলাকায় জায়গা দখল, চাঁদাবাজি করার অভিযোগ ওঠে। এমন অভিযোগে তাকে দল থেকে বহিষ্কারও করা হয়েছে। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের দপ্তর সম্পাদক কাজী আব্দুল্লাহ আল-মামুন স্বাক্ষরতি এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানিয়েছেন।
ফুটপাথের হকারদের কাছ থেকেও নতুনরা চাঁদা নিচ্ছে উল্লেখ করে চকবাজার এলাকার একজন হকার বলেন, সরকার পতনের পর কয়েক দিন চাঁদা দিতে হয়নি। এখন নতুন একজন এসে টাকা নিয়ে যায়। তবে তার নাম বলতে পারেননি তিনি।
বরিশাল : আমাদের বরিশাল প্রতিবেদক জানিয়েছেন, জেলার বানারীপাড়া উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও বাইশারী ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আব্দুর সবুর খান, যাকে এলাকায় সবাই চেনে সবুর মেম্বার হিসেবে, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দলবল নিয়ে দখল করে নিয়েছেন বানারীপাড়া খেয়াঘাট। এ সময় টোল আদায়কারী সাইদুল হাওলাদারকে মারধর করার অভিযোগও পাওয়া গেছে।
ঘাটের ইজারাদার আরিফুল হক জানান, তিনি এক বছরের জন্য জেলা পরিষদ থেকে ৯৮ লাখ টাকায় ঘাটটি ইজারা নিয়েছিলেন। সেটি দখল করে নিয়েছেন সবুর খান। বরিশাল জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও বানারীপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে আইনগত সহায়তা দেওয়ার অনুরোধ করেছেন তিনি। কিন্তু এখনও ঘাট বুঝে পাননি।
স্থানীয়ভাবে জানা গেছে, সবুরের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে জেলা বিএনপি। তবে সব অভিযোগ অস্বীকার করে সবুর খান দাবি করেছেন, তিনি এসব কাজের সঙ্গে নেই।
বানারীপাড়ার মতোই বরিশাল জেলার ১০টি উপজেলা ও মহানগরীতে দখলবাণিজ্য ও চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে। যে যেভাবে পারছে জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন এমনকি ওয়ার্ড পর্যায়ের বিভিন্ন স্থাপনা, সংগঠনের কার্যালয়, বাস টার্মিনাল, বাজার, ডায়াগনস্টিক সেন্টার, আবাসিক হোটেল দখল করছে। বেশিরভাগ অভিযোগ উঠছে বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। এমনকি চাঁদা না দেওয়ায় হত্যার ঘটনাও ঘটেছে।
এলাকায় থাকতে হলে ছাত্রলীগকর্মী রাশেদ সিকদারের কাছ থেকে চাঁদা দাবি করেছিলেন গৌরনদী উপজেলার বার্থী ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি আলামিন তালুকদার। বিষয়টি নিয়ে বনিবনা না হওয়ায় ১৬ আগস্ট রাতে বার্থী বাসস্ট্যান্ডে তাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন নিহত রাশেদের বড় ভাই রাসেল শিকদার।
বিস্তর অভিযোগ থাকলেও দখল ও চাঁদাবাজির অভিযোগ মানতে নারাজ বিএনপি নেতারা। কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্বাহী সদস্য আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ বলেন, ‘বিএনপিতে দখলদার ও চাঁদাবাজদের কোনো ঠাঁই নেই।’
বরিশাল জেলা সুজনের সাধারণ সম্পাদক রনজিৎ দত্ত বলেন, ‘আওয়ামী লীগের দখলদারত্ব উচ্ছেদ করে এখন বিএনপি দখলদারত্ব চালাচ্ছে। সরকার পরিবর্তন হলেও চরিত্রগত পরিবর্তন কিন্তু হয়নি।’
ময়মনসিংহ : জেলার বিভিন্ন এলাকায় বালুমহাল ও স্ট্যান্ড দখলের কথা জানিয়েছেন আমাদের ময়মনসিংহ প্রতিবেদক। জেলা সদরসহ ১৩টি উপজেলায় এ ধরনের ঘটনার খবর পাওয়া গেছে, যেগুলোর সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন স্থানীয় বিএনপি নেতা।
গফরগাঁও উপজেলায় যুবদলের দুই গ্রুপের মধ্যে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে সবুজ আকন্দ ও জসিম উদ্দিন নামে দুই যুবদল কর্মীর মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। গফরগাঁওয়ে বালুমহাল, বাজারের ইজারা ও স্ট্যান্ড দখল করার অভিযোগ পাওয়া গেছে বিএনপি ও যুবদলের কর্মীদের বিরুদ্ধে।
ভালুকা উপজেলায় হবিরবাড়িসহ কয়েকটি এলাকায় শতাধিক কলকারখানায় একসময় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ব্যবসা করত। ওইসব কলকারখানা এখন বিএনপির নেতাকর্মীদের দখলে চলে গেছে। যদিও এসব ঘটনার অভিযোগে ভালুকা বিএনপির আহ্বায়ক ফখরুদ্দিনকে এরই মধ্যে দল থেকে বহিষ্কার করেছে বিএনপি।
ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা সদরে পানের হাট দখলে নিয়েছে বিএনপির নেতাকর্মীরা। তবে এ ঘটনার প্রতিবাদ করেছেন বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য শাহ মো. নুরুল কবীর।
নগরীর ফুটপাথ দখলের অভিযোগও রয়েছে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। জেলার ১৩টি উপজেলাতেই হাটবাজার, স্ট্যান্ড, বালুমহাল ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান দখলের অভিযোগ রয়েছে বিএনপি, যুবদল ও তার অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে।
এসব অভিযোগ অস্বীকার করে ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক জাকির হোসেন বাবলু প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, বিএনপি দখল ও লুটপাটের রাজনীতি করে না। বিএনপির নাম ভাঙিয়ে উচ্ছৃংখল কিছু যুবক এসব করছে।
রাজশাহী : রাজশাহী প্রতিবেদক জানান, চাঁদাবাজ চক্র এ জেলাতেও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। চক্রটি ট্রাক, বাস টার্মিনাল, ফুটপাথসহ সিএনজি স্ট্যান্ডগুলোতে চাঁদাবাজি শুরু করেছে। লুটে নিয়ে যাচ্ছে পুকুর ও দীঘিতে চাষ করা লাখ লাখ টাকার মাছ। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর হাতবদল হয়েছে এলাকার চাঁদাবাজি ও দখলদারত্বের নেতৃত্ব। এই তালিকার শীর্ষে রয়েছে বিএনপির নেতাদের নাম। বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারাও।
এর আগে রাজশাহী নগরীর জিরো পয়েন্ট এলাকার ফুটপাথ ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণ করতেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা বিপন্ন সরকার। তার হয়ে চাঁদাবাজি করতেন অমিত, নিপুন, নাহিদ ও সঞ্জয়। তবে পটপরিবর্তনের পর চক্রটি গা ঢাকা দিয়েছে। এখন নতুন করে একটি চক্র সক্রিয় হয়ে উঠেছে।
গত ৯ আগস্ট সিরোইলে বাস মালিক সমিতির কার্যালয় দখল করে রাজশাহী মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব মামুন অর রশীদ ও সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক নজরুল হুদার সমর্থকরা। ক্ষমতার পালাবদলের সঙ্গে সঙ্গে নজরুল হুদার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি ও জমি দখলের অভিযোগ ওঠে। বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে ১৭ আগস্ট সকালে সংবাদ সম্মেলন করেন বিএনপি চেয়ারপারসনের অন্যতম উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু। সেখানে তিনি দাবি করেন, বিএনপির ওই নেতার বিরুদ্ধে কেন্দ্রে অভিযোগ জানানো হয়েছে।
রংপুর : রংপুর অফিস জানায়, বিগত সরকারের পতনের পর রংপুর মোটর শ্রমিক ইউনিয়ন চলে গেছে বিএনপি নেতার দখলে। এখন কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালসহ মোটর শ্রমিক ইউনিয়ন চলছে বিএনপি নেতা বাবুর নির্দেশে। সরকার পতনের পর সদর উপজেলার পাগলাপীর বাজারে শ্রমিক লীগ কার্যালয় ছেড়ে পালিয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতারা। কার্যালয়টি এখন স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাদের নিয়ন্ত্রণে।
রংপুর মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সামসুজ্জামান সামু বলেন, বিএনপির পরিচয় দিয়ে কেউ যাতে চাঁদাবাজি, দখলদারত্ব করতে না পারে সে লক্ষ্যে আমরা কমিটি গঠন করেছি। তারা এসব বিষয় অনুসন্ধান করে যথাযথ পদক্ষেপ নেবে। কেউ যদি এসব কাজে জড়িত থাকে, তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।