রহিম শুভ, ঠাকুরগাঁও
প্রকাশ : ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০০:৪৩ এএম
আপডেট : ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০১:২১ এএম
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার সালন্দর ইউনিয়নে ২৫ বিঘা জমির উপর শাহরিয়ার আলমের নর্থ বেঙ্গল অ্যাগ্রো ফার্মস লিমিটেড। প্রবা ফটো
পাখির চোখে তাকালে যে কারও চোখ আটকে যাবে বাগানবাড়িটি দেখে। চারপাশে পুকুর, আম, লিচু আর সুপারিগাছের সারি। সঙ্গে লাখ টাকার বনসাই আলিশান ভবন রয়েছে এই বাগানবাড়িতে। চোখজুড়ানো এই বাগানবাড়ির মালিক সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ও রাজশাহী-৬ আসনের সংসদ সদস্য শাহরিয়ার আলম।
২০১০ সালে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার চৌধুরীহাট বাজারের পূর্ব পাশে ২৫ বিঘা জমি কেনেন শাহরিয়ার আলম। নাম দেন নর্থ বেঙ্গল অ্যাগ্রো ফার্মস লিমিটেড। তবে ক্রয়কৃত জমির সঙ্গে আরও প্রায় ১০ বিঘা জমি দখল করে বাগানবাড়ি করেছেন তিনি। তার মধ্যে রয়েছে অন্যের জমিসহ সরকারি জমি। এই সম্পদ দেখিয়ে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ২০০ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার খবর প্রচারিত হয়েছে এলাকায়।
বাগানবাড়িতে পুকুর ও বাগানের পাশাপাশি আবাদ হয় ধান, লাউ, পেঁপে, আম, সুপারি, ড্রাগনসহ নানান ধরনের সবজি। রয়েছে বিভিন্ন জাতের বনসাই। বাড়ির পাশে হলেও ভেতরে প্রবেশ নিষেধ ছিল স্থানীয়দের।
সালন্দর ইউনিয়নের শিংপাড়ার বাসিন্দা জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘এ বাগানবাড়িতে ঢোকা যাবে না এবং এলাকার কোনো মানুষ কোনো দিন ঢুকতে পারেনি। এটা বলে সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর জায়গা। এই এলাকার কয়েকজন মানুষের জমি ন্যায্যমূল্য না দিয়ে ভয় দেখিয়ে নেওয়া হয়েছে। আমরা চাই যাদের জমি জবরদখল করে নেওয়া হয়েছে তাদের ফেরত দেওয়া হোক, না হয় ন্যায্যমূল্য দেওয়া হোক।’
আরেক বাসিন্দা মজিবর রহমান বলেন, ‘সরকারি জমিও এই বাগানবাড়ির ভেতরে আছে। সেখানে পুকুর খনন করা হয়েছে। এলাকার মানুষ ভয়ে কথা বলেনি এত দিন।’
বাগানবাড়ির ভেতরে কাজ করা শ্রমিক আব্দুস সামাদ বলেন, ‘আমাদের বলা হয়েছে যারা এইখানে কাজ করি তারা ছাড়া বাইরের কেউ যাতে এই বাগানবাড়িতে ঢুকতে না পারে। সেজন্য আমরা কাউকে ঢুকতে দেই না। দিলে আমাদের আর কাজে নিবে না। এখানে চাষাবাদ করা হয়। বিভিন্ন ধরনের সবজি ও ধান চাষ হয়। পুকুরে মাছ চাষ হয়। আলুর জাত নিয়ে কাজ করার ল্যাব আছে। এ ছাড়া অনেক গাছ আছে। সেগুলোর যত্ন নিতে হয়। প্রতিদিন গড়ে আমরা সাত-আট জন কাজ করি।’
সালন্দর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফজলে এলাহী মুকুট চৌধুরী বলেন, ‘বাগানবাড়িটি বানানো হয় ২০১০ সালে। স্থানীয় কিছু লোকের জমি ও সরকারি কিছু জমি নিয়ে এটা বানান সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম।’
নর্থ বেঙ্গল অ্যাগ্রো ফার্মস নামে একটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে প্রতিমন্ত্রীর বাগানবাড়িতে। সেটির ম্যানেজার তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘দেশের এমন পরিস্থিতিতে এখানকার তেমন আর খোঁজখবর নেন না প্রতিমন্ত্রীর লোকজন।’ প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোাগযোগের চেষ্টা করা হলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে প্রতিমন্ত্রী গা ঢাকা দেন। তার সঙ্গে যোগাযোগ সম্ভব হচ্ছে না।