প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১০ জুলাই ২০২৪ ২৩:০২ পিএম
চিকিৎসক সাবরিনা শারমিন। ফাইল ফটো
করোনা সনদ জালিয়াতির অভিযোগে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের সাবেক রেজিস্ট্রার ও বহুল আলোচিত চিকিৎসক সাবরিনা শারমিনসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
বুধবার (১০ জুলাই) দুদকের সহকারী পরিচালক আফনান জান্নাত কেয়া বাদি হয়ে সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা-১ এ মামলাটি করেন।
দুদকের উপ-পরিচালক ও জনসংযোগ কর্মকর্তা আকতারুল ইসলাম এ তথ্য জানিয়েছেন।
মামলার অন্য আসামিরা হলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ, ডা. সাবরিনা শারমিন হুসেনের স্বামী ও জেকেজি হেলথ কেয়ারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরিফুল চৌধুরী, স্বত্বাধিকারী জেবুন্নেছা রিমা, স্টাফ আ.স.ম সাঈদ চৌধুরী, হুমায়ুন কবির ওরফে হিমু ও তানজিনা পাটোয়ারী।
এজাহারে বলা হয়েছে, ডা. সাবরিনা শারমিন হুসেন জাতীয় হৃদরোগ ইন্সটিটিউটের কার্ডিয়াক সার্জারি বিভাগের রেজিস্ট্রার হিসেবে কর্মরত থাকাকালে অসৎ উদ্দেশ্য এবং কর্তৃপক্ষের বিনা অনুমতিতে জেকেজি হেলথ কেয়ার নামে একটি লাভজনক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান পরিচয় ব্যবহার করে আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছেন। তিনি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও অন্যদের যোগসাজশে স্বামী আরিফুল চৌধুরীর অভিজ্ঞতাহীন, নিবন্ধনবিহীন, ট্রেডলাইসেন্সবিহীন ‘ওভাল গ্রুপের’ নাম সর্বস্ব প্রতিষ্ঠান ‘জেকেজি হেলথ কেয়ার’কে কোভিড-১৯ এর নমুনা সংগ্রহের জন্য অনুমতি পাইয়ে দিতে সহযোগিতা করেন।
এজাহারে আরও বলা হয়, বিনামূল্যে বুথ থেকে করোনার স্যাম্পল কালেকশনের জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে অনুমোদন নিয়ে বুথ থেকে স্যাম্পল কালেকশন না করে আসামি ডা. সাবরিনা শারমিন হুসেন ও তার স্বামী আরিফুল চৌধুরীর নির্দেশে তাদের অফিসের কর্মীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে টেস্ট ফি নেন। প্রতিটি টেস্টের জন্য আনুমানিক পাঁচ থেকে আট হাজার টাকা গ্রহণ করেন। কিন্তু সংগৃহীত স্যাম্পল যথাযথ পরীক্ষা না করে আনুমানিক ১৫ হাজার ৪৬০টি ভুয়া ও জাল রিপোর্ট প্রস্তুত করে বিভিন্ন জনের মধ্যে বিলি বন্টন করেন। একইসঙ্গে জাল রিপোর্ট সেবা গ্রহীতাদের কাছে সরবরাহ করে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ করেন। এছাড়া সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটি এবং ২০২০ সালের ১ এপ্রিল থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত লকডাউনের মধ্যে মাত্র ৩ মাসে ওভাল গ্রুপ এবং এর অঙ্গ প্রতিষ্ঠান ভেলবিল সিকিউরিটি সার্ভিসেস প্রাইভেট লিমিটেডের ব্যাংক অ্যাকাউন্টগুলোতে এক কোটি ১৬ লাখ ৯০ হাজার ৭ টাকা জমা করা হয়। যা করোনা টেস্টের টাকা বলে প্রতীয়মান হয়। এছাড়া তিনি প্রতারণা ও জালিয়াতির উদ্দেশ্যে নিজের জন্ম তারিখ পরিবর্তন করে দুটো ‘সচল জাতীয় পরিচয়পত্র’ প্রস্তুত করেন। যা দিয়ে দুটো ভিন্ন টিআইএন নম্বর খোলেন এবং প্রকৃত জন্ম ১৯৭৮ সালকে ১৯৮৩ বানিয়ে তার কর্মস্থলে মিথ্যা তথ্য প্রদান করে চাকরির মেয়াদ ৫ বছর পর্যন্ত বাড়িয়ে অসৎ উদ্দেশ্যে সরকারি চাকরির সুযোগ-সুবিধা অবৈধভাবে গ্রহণের অপচেষ্টা করেছেন।
বাদি এজাহারে উল্লেখ করেন, ‘আসামিরা সরকারি কর্মচারী হিসেবে কর্মরত থেকে ক্ষমতার অপব্যবহার, জাল জালিয়াতি ও প্রতারণার উদ্দেশ্যে ভুয়া ও জাল রিপোর্ট তৈরি, সেগুলো সেবা গ্রহীতাদের কাছে সরবরাহ করে করোনা মহামারির সময়ে জীবন বিপন্নকারী রোগের সংক্রমণ বিস্তার ঘটিয়ে জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন, যা শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
এর আগে করোনা মহামারি চলাকালে ২০২০ সালের ২৩ জুন করোনার ভুয়া সনদ দেওয়া, জালিয়াতি ও প্রতারণার অভিযোগে সাবরিনা, তার স্বামী আরিফুলসহ ছয় জনকে গ্রেপ্তার করে তেজগাঁও থানা পুলিশ। গ্রেপ্তারের পর থানা হাজতে থাকা অবস্থায় আরিফুলের ক্যাডার বাহিনী থানায় ভাঙচুর ও হামলা করে। মারধর করে পুলিশকে। ওই মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পরবর্তী ১২ জুলাই সাবরিনাকে জি তেজগাঁও বিভাগীয় উপ-পুলিশ (ডিসি) কার্যালয়ে নেওয়া হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি সদুত্তর দিতে না পারায় তাকে তেজগাঁও থানায় আরিফুলের বিরুদ্ধে হওয়া মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। ওই মামলায় প্রায় চার বছর জেল খাটার পর জামিনে মুক্তিপান। কারাগার থেকে বেরিয়ে আবার নানান বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়ান ডা. সাবরিনা।