প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১১ জুন ২০২৪ ১২:২৭ পিএম
আপডেট : ১১ জুন ২০২৪ ১২:৫৮ পিএম
পুলিশি হেফাজতে গ্রেপ্তার মজিবুর রহমান আকন। প্রবা ফটো
দলের সঙ্গে ডাকাতি করতে বের হয়ে ২০১৮ সালের ১৪ ডিসেম্বর নিখোঁজ হন মো. আজাহার ওরফে আজাদ। পরিবারের পক্ষ থেকে খোঁজ চেয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরি করার কয়েক দিন পর আজহারের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এর পর কেটে গেছে ৬ বছর। দীর্ঘ ৬ বছর পর পুলিশ জানতে পেরেছে ডাকাত দলের অন্য সদস্যদের হাতে খুন হন আজাহার। যার নেতৃত্বে ছিলেন দলের সর্দার মো. মজিবুর রহমান আকন।
গত ৯ জুন তদন্তকারী সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) পরিদর্শক (এসআই) মো. শহিদুল ইসলামের নেতৃত্বে মজিবুর রহমান আকন ও শামিম হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারের পর তাদের কাছ থেকে বেরিয়ে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। সোমবার (১০ জুন) পিবিআই এক সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়েছে, ২০১৮ সালের ১৪ ডিসেম্বর মো. আজাহার ওরফে আজাদ তার বড় ভাই মো. শাজাহানের বাসা হতে কর্মস্থলের উদ্দেশে বের হয়। বাসায় না ফেরায় পরিবারের লোকজন তাকে বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুঁজি করতে থাকে। খোঁজাখুঁজির একপর্যায়ে ভিকটিমের বড় ভাই মো. শাজাহান জানতে পারেন ঢাকার সাভার মডেল থানার আমিন বাজার এলাকায় তুরাগ নদীতে একটি মরদেহ ভাসছে। ১৭ ডিসেম্বর ওই মরদেহ উদ্ধারের পর তা তার ছোট ভাই ভিকটিম আজাহার বলে শনাক্ত করেন। শাজাহান বাদী হয়ে সাভার মডেল থানায় অজ্ঞাতপরিচয় আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা করেন। প্রথমে মামলাটি থানা পুলিশ তদন্ত করে। ২০১৯ সালে আদালত থেকে মামলাটি নতুন করে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় পিবিআইকে।
পুলিশ সুপার কুদরত-ই-খুদা বলেন, মজিবর ছাড়াও সামিম হোসেন নামে এক আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সামিম ঝালকাঠি সদর থানার নওপাড়া গ্রামে বাসিন্দা। গ্রেপ্তারের পর তাদের আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। তারা আজাহার খুনে জড়িত থাকার বিষয়ে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন।
আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে আসামিরা জানিয়েছেন, ঘটনার দিন ২০১৮ সালের ১৪ ডিসেম্বর রাত ১১টার পর আজাহারসহ ৪/৫ জন ডাকাতি করতে ট্রলারে তুরাগ নদের গাবতলী ঘাট এলাকা থেকে আশুলিয়া রওনা করেন। কিছু দূর যাওয়ার পর আগের ডাকাতির টাকার ভাগ নিয়ে আজাহারের সঙ্গে মজিবর ও তার ‘সেকেন্ড ইন কমান্ড’ রুহুল আমিনের কথা কাটাকাটি শুরু হয়। একপর্যায়ে হাতাহাতি শুরু হলে রুহুল আমিন ধারালো বড় কাঁচি দিয়ে পেছন থেকে আজাহারের মাথায় তিনটি কোপ দেন। মজিবর চাপাতি দিয়ে আজাহারের বুকে একটি কোপ দিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করেন। পরে গুম করতে তুরাগ নদে ফেলে তারা চলে যান।
পিবিআই জানিয়েছে, ডাকাত সরদার মজিবর আকনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় এখন পর্যন্ত নয়টি মামলার তথ্য পাওয়া গেছে। মজিবরের সেকেন্ড ইন কমান্ড রুহুল আমিনের বিরুদ্ধে তিনটি মামলার তথ্য আছে। রুহুল আমিন আরেকটি হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত হয়ে কারাগারে আছেন। গ্রেপ্তার অপর আসামি সামিম হোসেনের বিরুদ্ধে একটি ডাকাতির মামলার তথ্য পাওয়া গেছে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই ঢাকা জেলার এসআই মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, মজিবর আকনের আপন ভাই আনোয়ার হোসেন শামীমও ডাকাত দলের সক্রিয় সদস্য। তার বিরুদ্ধেও তিনটি মামলার তথ্য পাওয়া গেছে। মজিবর ও আনোয়ার একেবারেই গরিব ঘরের সন্তান ছিলেন। তাদের আর্থিক অবস্থা ছিল খুবই শোচনীয়। তারা ডাকাতি ও চাঁদাবাজির টাকায় বরগুনায় গ্রামের বাড়িতে গড়ে তুলেছেন বিশাল মাছের খামার। এ ছাড়া একটি ডুপ্লেক্স বাড়িও নির্মাণ শুরু করেছে। সেই বাড়ি ও খামারের আশপাশের বিশাল এলাকা সিসি ক্যামেরা লাগিয়ে মনিটরিং করা হতো।
তিনি বলেন, মজিবর আকন ২০১৭ সালে দ্বিতীয় বিবাহ করেন। ঢাকায় অপরাধ করে গাজীপুরে দ্বিতীয় স্ত্রীর কাছে গিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে আত্মগোপনে থাকতেন তিনি। তুরাগ নদীর সাভার, আশুলিয়া ও গাজীপুর অংশে বিভিন্ন মালবাহী ট্রলার, বালুবাহী ভলগেট ও অন্যান্য নৌযানে দীর্ঘদিন ধরেই ডাকাতি ও চাঁদাবাজি করছিলেন তিনি। কেউ চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালেই রাতে অস্ত্রশস্ত্র ও দলবল নিয়ে তার ট্রলারে ডাকাতি করতেন। ট্রলারের লোকজনকে মারধর করে টাকা পয়সা ও মূল্যবান জিনিস ডাকাতি করে নিয়ে যেতেন তারা।