প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৯ জুন ২০২৪ ১০:৫৯ এএম
আসন্ন কোরবানির ঈদকে কেন্দ্র করে সক্রিয় হয়েছে জাল নোট তৈরির চক্র।
আসন্ন কোরবানির ঈদকে কেন্দ্র করে সক্রিয় হয়েছে জাল নোট তৈরির চক্র। এমন একটি চক্রের ৪ জনকে রাজধানীর কদমতলী থানাধীন দনিয়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেনÑ লিয়াকত হোসেন জাকির ওরফে মাজার জাকির ওরফে গুরু জাকির, তার দ্বিতীয় স্ত্রী মমতাজ বেগম, লিমা আক্তার রিনা ও সাজেদা আক্তার। গতকাল শনিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ওই এলাকার একটি বাসায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এসময় তাদের কাছ থেকে প্রায় সোয়া কোটি টাকার জাল নোট এবং আরও প্রায় তিন কোটি টাকার জাল নোট তৈরি করার মতো বিশেষ কাপড়/কাগজ, বিশেষ ধরনের কালি, ল্যাপটপ কম্পিউটার, চারটি প্রিন্টার, বিভিন্ন সাইজের কয়েক ডজন স্ক্রিন/ ডাইস, সাদা কাগজ, হিটার মেশিন, স্কেল, কাগজ কাটার, রাবার ব্যান্ড, কার্টন, নিরাপত্তা সুতা, গ্লু, খামসহ হরেক রকম মালামাল উদ্ধার করে গোয়েন্দারা।
গোয়েন্দারা জানান, জাল নোট চক্রের মূল হোতা লিয়াকত হোসেন জাকির ইতোমধ্যে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের বিভিন্ন টিমের কাছে ৬ বার গ্রেপ্তার হয়েছেন। লিমা আক্তার রিনা দুইবার এবং রুমানা ইসলাম ইয়াবা ও আইসসহ গ্রেপ্তার হয়ে জেল-হাজতে ছিলেন। জেল-হাজতে থেকেই বর্তমানে জাল নোট কারবারি চক্রের সঙ্গে পরিচয় হয়। এরপর এ চক্রের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন।
ডিবি বলছে, ঈদকে ঘিরে অন্যান্য বছরের মতো সক্রিয় জাল টাকার কারবারিরা। সুযোগ কাজে লাগাতে রাজধানীর কদমতলীতে তৈরি করা হচ্ছিল জাল টাকা। চক্রটি বিপুল পরিমাণ জাল নোট বাজারে ছাড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। ঢাকায় তৈরি এই জাল নোট বিক্রির জন্য যোগাযোগ হতো অনলাইনে আর লেনদেন হতো মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে। লেনদেনের পর কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে পাঠানো হয় জাল নোট। যার বেশিরভাগ এবার যাচ্ছে মফস্বলে। টার্গেট কোরবানির পশুর হাট।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের লালবাগ বিভাগের উপকমিশনার (অতিরিক্ত ডিআইজি হিসেবে পদোন্নতি প্রাপ্ত) মশিউর রহমান অভিযান শেষে সাংবাদিকদের বলেন, ২৫ বছর ধরে জাল টাকার খুচরা ও পাইকারি কারবার করায় বিভিন্ন মানের জাল নোট ও রুপি তৈরিতে অত্যন্ত দক্ষ লিয়াকত হোসেন জাকির। তিনি ২০১২ সাল থেকে ৫০০ ও ১ হাজার টাকার জাল নোট তৈরি করলেও বর্তমানে সাধারণ মানুষ যেন সন্দেহ করতে না পারেন সেজন্য বড় নোটের পাশাপাশি ১০০ ও ২০০ টাকার জাল নোট তৈরি করতেন। বর্তমানে কাগজ, ল্যাপটপ, কম্পিউটারের কালি ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক উপকরণের দাম বেড়ে যাওয়ায় জাকির ১ হাজার টাকার ১০০টি নোটের বান্ডেল ১৮-২০ হাজার টাকায় বিক্রি করতেন। গত ১২ বছরে জাকির কখনও জাল টাকা খুচরায় বিক্রি করেননি। নারী-পুরুষ মিলে তার প্রায় ১৫-২০ জন কর্মচারী আছেন, যাদের মাসে দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা বেতন দিতেন। তারা ব্যক্তি পর্যায়ে জাল টাকা বিক্রি করলে ধরা পড়তে পারেন, সেই ঝুঁকি এড়াতে অনলাইনে বিশেষত ফেসবুক ও মেসেঞ্জারে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের ক্রেতাদের কাছ থেকে অর্ডার নিয়ে কুরিয়ারের মাধ্যমে জাল নোট পৌঁছে দিতেন।
তিনি বলেন, জাল নোট তৈরির সময় সহযোগীরা গ্রেপ্তার হলে জাকির মাজারে মাজারে অবস্থান করতেন। মাজারের কচ্ছপ, মাছের খাবার নিয়ে ব্যস্ত থাকেন বলে তাকে মাজার জাকির বলা হয়। অপরদিকে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় জাল নোটের ছোট ছোট ঘরোয়া কারখানা স্থাপনকারীরা জাকিরের কাছ থেকে কারিগর, সফট কপি, পরামর্শ এমনকি মডেল জাল রুপি নিয়ে থাকেন বলে জাকিরকে গুরু জাকির বলেও চেনেন অনেকে।
জাল নোট প্রতিরোধে বাংলাদেশ ব্যাংককে আরও আন্তরিক হওয়ার তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, সারা বছর গোয়েন্দা কার্যক্রম চালাতে হয়। নানান ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা করা প্রয়োজন। কারণ চক্রগুলো সারা বছরই জাল নোট তৈরি করছে। কয়েক দিন আগে এক নারীই ৫০ লাখ জাল টাকা নিয়েছেন জাকিরের কাছ থেকে। ফলে বোঝাই যাচ্ছে তারা কী পরিমাণ জাল নোট বাজারে ছাড়ছেন। চক্রে ১৫-২০ জন এজেন্ট রয়েছেন, যারা সারা দেশে জাল টাকা ছড়িয়ে দিচ্ছেন। ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে গরু-ছাগল বিক্রি বা লেনদেনের সময় অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে টাকা যাচাই-বাছাই করে নেওয়ার পরামর্শ দেন এই কর্মকর্তা।