পুঠিয়ার ঝলমলিয়া হাট
রাজু আহমেদ, রাজশাহী
প্রকাশ : ২৬ মে ২০২৪ ১৬:১৯ পিএম
আপডেট : ২৬ মে ২০২৪ ১৬:৫৬ পিএম
রাজশাহীর পুঠিয়ার ঝলমলিয়া হাটের খাজনা আদায়কারীদের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। প্রশাসনের নাকের ডগায় অতিরিক্ত খাজনা ও চাঁদা আদায়ের ঘটনা ঘটলেও কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলে অভিযোগ। এতে ক্ষোভ জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তাদের দাবি, সংশ্লিষ্ট এলাকায় বড় ব্যানারে পণ্যপ্রতি খাজনার অঙ্ক তুলে ধরা হোক। সেই সঙ্গে অতিরিক্ত খাজনা আদায় করায় ইজারা বাতিলসহ ব্যবস্থা নেওয়া হোক। খাজনা আদায় শতভাগ ঠিক রাখা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন ইজারাদার।
পুঠিয়ার ঝলমলিয়া রাজশাহীর বৃহৎ হাটগুলোর মধ্যে অন্যতম। গত বৃহস্পতিবার সকাল থেকে হাটের স্থায়ী দোকান ও ব্যবসায়ীরা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে প্রতিবাদ জানান। পরে বিকালে স্থানীয় প্রশাসন ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে। এ সময় ব্যবসায়ীরা জানান, তাদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে নিয়মিত চাঁদা দাবি করা হচ্ছে। হাটে সবজি ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে স্থায়ী দোকানদারÑ সবার কাছ থেকে সরকার নির্ধারিত খাজনা বা টোলের চেয়ে বেশি টাকা নেওয়া হচ্ছে। ১০ টাকার স্থলে আদায় করা হয় ৬০ থেকে ৭০ টাকা। কেউ প্রতিবাদ করলে তাকে মারধর করছেন।
ব্যবসায়ীরা প্রশাসনের কাছে দাবি কনের, হাট এলাকায় দুই থেকে তিনটি বড় সাইনবোর্ড বা ব্যানার কোন পণ্য কত পরিমাণ বিক্রি করলে বা কোন দোকানে কত টাকা খাজনা তা উল্লেখ করে দিতে হবে। সেই সঙ্গে চাঁদা ও অতিরিক্ত খাজনা আদায় করা হলে সংশ্লিষ্টের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। প্রয়োজনে ইজারা বাতিল করতে হবে।
ঝলমলিয়া হাটের ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ইবরাহিম সরকার বলেন, গত বুধবার দুপুর ১২টার দিকে হাটে ব্যবসায়ী আলমগীর হোসেন মন্টুর প্রতিষ্ঠানে ২০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি কর হয়। টাকা না দিলে তাকে মারধর করা হয়। রাতে বিষয়টি শোনার পর আলমগীরের সঙ্গে কথা বলতে গেলে আবারও হামলা চালায়। হাট ইজারাদার সুমন ও তার বাবা ইয়াহিয়ার নেতৃত্বে কাউসার, রাসেল, আলামিন, জহির, মাহি ও সাগরসহ তাদের ক্যাডার বাহিনী এ হামলা করে। হামলায় আহত কয়েকজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এর আগে স্থানীয় নজরুল মুনশির দোকানেও ২০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেন তারা। আগে হাটে স্থায়ী দোকানপ্রতি ২০ থেকে ৩০ টাকা নেওয়া হতো; এখন ৬০ থেকে ৭০ টাকা করে আদায় করা হচ্ছে।
সমিতির উপদেষ্টা ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আহসান উল হক মাসুদ বলেন, দীর্ঘদিন ধরে তারা ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত খাজনা আদায় করে আসছেন। তা ছাড়া আতঙ্ক সৃষ্টির জন্য বাজারে যাকে তাকে ধরে মারপিট করেন।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ইজারাদার নাজমুল ইসলাম সুমন বলেন, হাটের টোল আদায় শতভাগ ঠিকঠাক করা সম্ভব হয় না। যারা টোল আদায় করে তারা কিছুটা অনিয়ম করে। হাট যে টাকায় নিয়েছি তার চেয়ে অনেক কম আদায় করি। আমার লস হবে ১০ লাখ টাকা। অধিকাংশ ব্যবসায়ী আমার পক্ষে। হাটের লিজের টাকার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে জেলা প্রশাসন, পৌরসভা বা ইউএনও যদি হালনাগাদ চার্ট দেয়; তবে সেভাবেই খাজনা নেওয়া হবে।
তবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) একেএম নূর হোসেন নির্ঝর জানালেন ভিন্ন কথা। তিনি বলেন, ইজারা দেওয়ার সময় সংশ্লিষ্ট ইজারাদারকে খাজনার চার্ট দিয়ে দেওয়া হয়। ঝলমলিয়া হাটের ক্ষেত্রে একইভাবে রেট নির্ধারণ করা রয়েছে। ইজারাদার যা বলছেন তা সঠিক নয়। এ সময় তিনি জেলার সব হাট-বাজারের দ্রব্যপণ্যের খাজনার তালিকাও দেখান।