× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

ঘুরে দাঁড়াচ্ছে তৈরি পোশাক শিল্প

হুমায়ুন মাসুদ, চট্টগ্রাম

প্রকাশ : ২০ মে ২০২৪ ১১:১৫ এএম

আপডেট : ২০ মে ২০২৪ ২০:৪১ পিএম

ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

২০১৬ সালে চট্টগ্রামে সচল তৈরি পোশাক কারখানা ছিল ৩৬৩টি। এরপর ধারাবাহিকভাবে কমতে থাকে সচল তৈরি পোশাক কারখানার সংখ্যা। ওই সময় তিন বছরের ব্যবধানে চট্টগ্রামে বন্ধ হয়ে যায় অন্তত ৫৪টি সচল কারখানা। ২০১৯ সালে সচল তৈরি পোশাক কারখানার সংখ্যা নেমে আসে ৩০৯টিতে। এরপর করোনার কারণে ২০২০ সালে এসে চট্টগ্রামে সচল তৈরি পোশাক কারখানা আরও কমে যায়। আগের বছরের তুলনায় ২০টি কারখানা কমে চট্টগ্রামে সচল তৈরি পোশাক কারখানার সংখ্যা এসে উপনীত হয় ২৮৯টিতে। 

এরপর এখন আবার চট্টগ্রামে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে তৈরি পোশাক কারখানা। ২০২০ সালের পর গত তিন বছরে চট্টগ্রামে নতুন করে সচল হয়েছে অন্তত ৬১টি কারখানা। বিজিএমইএ চট্টগ্রাম কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে চট্টগ্রামে বিজিএমইএ নিবন্ধিত কারখানা আছে ৬০০টি। এর মধ্যে বর্তমানে সচল রয়েছে ৩৫০টি কারখানা। অর্থাৎ তিন বছরের ব্যবধানে এখানে সচল কারখানার সংখ্যা বেড়েছে ৬১টি।  

সচল কারখানার সংখ্যা বৃদ্ধিকে ইতিবাচকভাবে দেখলেও চট্টগ্রামের তৈরি পোশাক কারখানাগুলো নানামুখী চ্যালেঞ্জের মুখে বলে জানিয়েছেন পোশাক কারখানা মালিকরা। তারা বলছেন, করোনার পর এখন প্রতিনিয়ত নিত্যনতুন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছে দেশের তৈরি পোশাক খাত। চট্টগ্রামে এই চ্যালেঞ্জ আরও বেশি। এখানে গ্যাস-বিদ্যুৎ সংযোগ পেতে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়, নতুন বিনিয়োগে ব্যাংক খুব একটা সহযোগিতা করতে চায় না, আছে দক্ষ শ্রমিকস্বল্পতা। এরপরও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে তৈরি পোশাক শিল্প এগিয়ে যাচ্ছে। যার প্রমাণ চট্টগ্রামে সচল কারখানার সংখ্যা বাড়ছে। তবে সেটি ২০১৪, ২০১৫ সালের তুলনায় কম। ২০১৫ সালে চট্টগ্রামে ৪৫৫টি সচল কারখানা ছিল। সেখানে এখন সচল কারখানা আছে ৩৫০টি। নানা প্রতিকূলতার কারণে চট্টগ্রামে কারখানা চালু করতে চান না মালিকরা। আবার অনেকে চালু কারখানা বন্ধ করে দিয়ে স্থানান্তর করে ফেলছেন।

জানা যায়, গত এক দশকে অন্তত ১২টি প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় স্থানান্তর হয়েছে। এর মধ্যে ২০১৫ সালের দিকে চট্টগ্রাম নগরীর আঁতুরার ডিপো এলাকা থেকে দুটি কারখানা গাজীপুরে স্থানান্তর করে ডে গ্রুপ। 

জানতে চাইলে ডে অ্যাপারেলস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনোয়ার হোসাইন পাটোয়ারী প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘রানা প্লাজা ধসের পর অ্যাকার্ড কমপ্লায়েন্স ইস্যুতে আমাদের কারখানাগুলো বন্ধ করে দেয়। তখন আমরা কমপ্লায়েন্স নিশ্চিত করে দুটি কারখানা গাজীপুরে শিফট করে নিয়ে আসি। আর দুটি একেবারে বন্ধ করে দিয়েছি।’

বিজিএমইএ চট্টগ্রাম কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ১৯৮৫ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ এই ৩৫ বছরে চট্টগ্রামে ৬২৩টি পোশাক কারখানা চট্টগ্রামে গড়ে ওঠে। এর মধ্যে ১৯৮৫ থেকে ২০১৫Ñ এই ৩০ বছরে সবচেয়ে বেশি কারখানা গড়ে ওঠে। এরপর ২০১৬ থেকে চট্টগ্রামে কমতে থাকে পোশাক কারখানার সংখ্যা। ২০১৫ সালে যেখানে চট্টগ্রামে নিবন্ধিত কারখানা ছিল ৭৫৬টি, সেখানে ২০২০ সালে নিবন্ধিত কারখানা এসে দাঁড়ায় ৬৯৩টিতে। গত তিন বছরে এটি আরও কমে যায়। বর্তমানে চট্টগ্রামে বিজিএমইএ নিবন্ধিত কারখানা আছে ৬০০টি। এই হিসাবে গত ১০ বছরে এই ১৫৬টি কারখানা চট্টগ্রামে বিলুপ্ত হয়ে যায়। একই সময়ে চট্টগ্রামে সচল কারখানার সংখ্যাও কমতে থাকে। ২০১৬ থেকে ২০২০ পর্যন্ত চার বছরে চট্টগ্রামে সচল তৈরি পোশাক কারখানার সংখ্যা কমে যায় ৭৪টি। ২০১৬ সালে যেখানে সচল তৈরি পোশাক কারখানা ছিল ৩৬৩টি, সেখানে ২০২০ সালে সচল কারখানার সংখ্যা এসে দাঁড়ায় ২৮৯টিতে। তবে এটি এখন ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে। আগের বছরের তুলনায় ১৭টি বেড়ে ২০২১ সালে চট্টগ্রামে সচল তৈরি পোশাক কারখানার সংখ্যা দাঁড়ায় ৩০৮টিতে। ২০২২ সালে এসে সেটি আরও বেড়ে যায়, তখন সচল কারখানা ছিল ৩৩৬টি। সর্বশেষ ২০২৩ সালে এখানে সচল কারখানা ছিল ৩৪০টি। 

এদিকে গত তিন বছর চট্টগ্রামে সচল তৈরি পোশাক কারখানার সংখ্যা বাড়লেও দেশের মোট তৈরি পোশাক রপ্তানির হিস্যায় দিন দিন পিছিয়ে পড়ছে চট্টগ্রাম। ১৯৮৫ সালের শুরুর দিকে দেশের মোট রপ্তানির ৪০ শতাংশ যেখানে রপ্তানি হতো চট্টগ্রাম থেকে। সেখানে এখন রপ্তানি হিস্যা নেমে এসেছে ১৪ শতাংশে। 

বিজিএমইএ সূত্রে জানা যায়, ১৯৮৫ সালে চট্টগ্রামে নিবন্ধিত গার্মেন্টস শিল্পপ্রতিষ্ঠান ছিল ১৩৩টি। এর মধ্যে সচল ছিল ১২৬টি। ওই সময় দেশের মোট তৈরি পোশাক রপ্তানির প্রায় ৩৯ শতাংশ হতো চট্টগ্রাম থেকে। এরপর ১৯৯৫ সালে এখানে তৈরি পোশাক কারখানা দ্বিগুণ হয়ে যায়। ওই সময় নিবন্ধিত পোশাক শিল্পপ্রতিষ্ঠান ছিল ৩৫৯টি। এর মধ্যে সচল ছিল ৩৪৫টি। তখন জাতীয় রপ্তানির ৩৪ শতাংশ হতো চট্টগ্রাম থেকে। এরপর ধারাবাহিকভাবে পোশাক কারখানার সংখ্যা বাড়লেও জাতীয় রপ্তানিতে চট্টগ্রামের অংশগ্রহণ কমতে শুরু করে। ২০০৫ সালে জাতীয় রপ্তানির ২৬ দশমিক ৩২ শতাংশ হয় চট্টগ্রাম থেকে। এর ১০ বছর পর ২০১৫ সালে চট্টগ্রামের রপ্তানি হিস্যা দাঁড়ায় ১৪ শতাংশে। বর্তমানেও একই অবস্থা বিরাজ করছে। ২০২০ সালে জাতীয় রপ্তানির ১৫ শতাংশ তৈরি পোশাক রপ্তানি হয় চট্টগ্রাম থেকে। ২০২১ সালে ১৫ শতাংশ, ২০২২ সালে ১৩ দশমিক ৫ এবং ২০২৩ সালে দেশের মোট তৈরি পোশাক রপ্তানির মাত্র ১৪ শতাংশ রপ্তানি হয়েছে চট্টগ্রাম থেকে। 

জানতে চাইলে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সহসভাপতি রাকিবুল আলম চৌধুরী প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, সচল কারখানার সংখ্যা বাড়ছে মানেই তৈরি পোশাক শিল্প ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। আগের তুলনায় এখন ক্রয়াদেশও কিছুটা বেড়েছে। তাই কারখানা সচল হচ্ছে। আমরা নতুন কমিটি তৈরি পোশাক রপ্তানি আরও কীভাবে বাড়ানো যায়, সেটি নিয়ে কাজ করছি। ক্রয়াদেশ বাড়লে তখন সচল কারখানার সংখ্যাও ধীরে ধীরে বাড়বে। তবে এর জন্য সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে বলে তিনি জানান। 

তিনি আরও বলেন, ‘চট্টগ্রামে কারখানা চালু করা কঠিন কাজ। এখানে গ্যাস-বিদ্যুৎ সংযোগ পেতে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়, নতুন বিনিয়োগে ব্যাংক খুব একটা সহযোগিতা করতে চায় না, আছে দক্ষ শ্রমিকস্বল্পতা। জায়গার দাম অনেক বেশি। এ কারণে নতুন কারখানা স্থাপন করা ব্যয়সাপেক্ষ। অন্যদিকে কমপ্লায়েন্সের বাধ্যবাধকতার কারণে বর্তমান অবকাঠামোতে কারখানা পরিচালনা করার বিষয়ে ক্রেতাদের অনীহা। এসব কারণে জাতীয় রপ্তানিতে চট্টগ্রাম পিছিয়ে পড়ছে। সরকার যদি এসব সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করে, তাহলে সচল কারখানার সংখ্যা সামনে আরও বাড়বে।’


শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা