রেজাউল করিম, গাজীপুর
প্রকাশ : ১৬ মে ২০২৪ ১৪:০৩ পিএম
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের কেন্দ্রস্থলে জয়দেবপুর-পুবাইল সড়কে ৯ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের সড়কে তৈরি হয়েছে ছোট-বড় অসংখ্য খানাখন্দ। প্রবা ফটো
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের কেন্দ্রস্থলে জয়দেবপুর-পুবাইল সড়কের বেহাল দশা। ৯ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের সড়কে কিছু দূর পরপর ছোট-বড় অসংখ্য খানাখন্দ তৈরি হয়েছে। সড়কটির দশা এতই বেহাল যেকোনো ধরনের যানবাহন চলাচল করতে পারে না। চলাচলে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে স্থানীয় যাত্রীসাধারণের।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, মহানগরীর বাঙাগালগাছ সড়কের মাথা থেকে নীলেরপাড়া, কানাইয়া, ইছালি হয়ে পুবাইল কলেজ গেট পর্যন্ত প্রায় ৯ কিলোমিটারের সড়কটি কয়েক বছর আগে সংস্কার করে সিটি করপোরেশন। এরপর বড় বড় মাটির ট্রাক, ভারী যানবাহন চলাচলে কিছুদিনের মধ্যেই বিভিন্ন স্থানে কার্পেটিং উঠে খানাখন্দ সৃষ্টি হতে শুরু করে। ক্রমেই সড়কটি যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। সাময়িকভাবে ইটের খোয়া দিয়ে কয়েক দফা নামমাত্র সংস্কার করা হয়। কিন্তু এ ধরনের সংস্কারে সড়কটি চলাচলের উপযোগী না হয়ে আরও বেহাল হয়ে পড়ে। এরপর কয়েক বছর চলে গেলেও আর সংস্কার করা হয়নি।
স্থানীয়রা বলছেন, সড়ক দিয়ে আশপাশের ৭-৮ গ্রামের মানুষকে শহরে যেতে কষ্ট করতে হয়। এ ছাড়া জেলা শহরের সঙ্গে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের সংযোগ ও কালীগঞ্জ হয়ে নরসিংদী যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম। সড়কটি যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী প্রায় ৫ বছর। এ নিয়ে কারও কোনো মাথাব্যথা নেই। সিটি করপোরেশনের ভেতরে এমন বেহাল সড়ক দেশের আর কোথাও নেই বলে দাবি তাদের।
দুর্ভোগের বর্ণনা দিতে গিয়ে তারা বলেন, একটু বৃষ্টি হলে সড়কের গর্তগুলোতে হাঁটুপানি জমে যায়। শিক্ষার্থীরা স্কুলে যাওয়ার জন্য রিকশা, ভ্যান, সিএনজি ঠিক সময় পায় না। খুব কমসংখ্যক অটোরিকশা চলে। এ ছাড়া অন্যান্য যানবাহনে অতিরিক্ত ভাড়া দিতে চাইলেও সড়কের নাম শুনলেই আসতে চায় না। বাধ্য হয়ে আদিম যুগের মতো হেঁটে চলাচল করতে হয়। মাঝে মাঝে পায়ে হাঁটাও দুষ্কর হয়ে পড়ে।
অটোরিকশা চালক হানিফ আলী বলেন, এই সড়কটি যখন ভালো ছিল শত শত অটোরিকশা, ভ্যান চলাচল করত। এখন কেউ যেতে চায় না। কারণ গাড়ি ঢুকলে ফেরত আসবে কি না, নিশ্চয়তা নেই। অনেক সময় যাত্রী নিয়ে পড়ে যায়। দুর্ঘটনা ঘটে, গাড়ির অবস্থা খারাপ হয়ে যায়। প্রতিদিন মেরামত করতে হয়। এজন্য বেশি ভাড়া দিলেও আমরা যাই না।
দক্ষিণ নীলেরপাড়া এলাকার বাসিন্দা সুজন আহমেদ বলেন, দীর্ঘ একযুগ ধরে গাজীপুর-পুবাইল রাস্তার অবস্থা খুব খারাপ। একটু বৃষ্টি হলেই এই রাস্তা দিয়ে চলাচল করা যায় না। তার ওপর এখন নতুন আতঙ্ক বিভিন্ন আবাসন কোম্পানি প্রায় দুই বছর ধরে এই রাস্তা দিয়ে মাটি পরিবহন করে ফসলের জমি ভরাট করছে। পাশাপাশি আমাদের চিলাই খাল প্রায় ভরাট হতে চলছে। পরিতাপের বিষয় বৃষ্টি হলে দক্ষিণ নীলেরপাড়ার বাসিন্দারা ঘর থেকে বের হতে পারে না। কোমলমতি শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে যেতে পারে না। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয় আমাদের দেখার কেউ নেই। আমরা এমন দুর্ভোগের অবসান চাই।
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আনোয়ার হোসেন বলেন, আমাদের দুর্ভোগের শেষ নাই। এই রাস্তার তিনবার টেন্ডার দিয়েছি, তিনবারই বাতিল করা হয়েছে। মেয়র সাহেব নাকি ৬০ ফিট রাস্তা করবে এজন্য বন্ধ রাখা হয়েছে। কবে কাজ শুরু হবে বলা যাচ্ছে না।
জানাতে চাইলে সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) এএসএম সফিউল আজম বলেন, রাস্তাটি প্রশস্ত করা হবে। ভূমি অধিগ্রহণের কারণে রাস্তার কাজ আটকে আছে। অধিগ্রহণ শেষ হলে যেকোনো সময় কাজ করতে পারি। ডিসি অফিস থেকে একোয়ার করতে দেরি করছে। তাদের লোকবল সমস্যা, লোকবল দিয়েছি, টাকাও দিয়েছি। তবুও কেন এত দেরি হচ্ছে বুঝতে পারছি না।