শাহিনুর সুজন, চারঘাট (রাজশাহী)
প্রকাশ : ১৬ মে ২০২৪ ০৯:০৬ এএম
আপডেট : ১৬ মে ২০২৪ ০৯:১১ এএম
রাজশাহীর চারাঘাট উপজেলায় বন বিভাগ ও দর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর প্রায় ২৬ হাজার তালবীজ রোপণ করে। কিন্তু গত পাঁচ বছরেও আলোর মখি দেখেনি তালবীজগুলো। প্রবা ফটো
দেশে অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে বজ্রপাতে প্রাণহানির সংখ্যা। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা ও বজ্রপাত থেকে রক্ষা পেতে ২০১৭ সালে সারা দেশে রাস্তার দুই পাশে তালগাছের বীজ ও চারা রোপণের নির্দেশ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, বন বিভাগ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর রাজশাহীর চারঘাট উপজেলায় প্রায় ২৬ হাজার তালবীজ রোপণ করে। কিন্তু তালবীজগুলো গত পাঁচ বছরেও আলোর মুখ দেখেনি।
বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীনে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-(বিএমডিএ) ২ কোটি ২০ লাখ টাকায় ১৪ লাখ তালবীজ লাগানোর প্রকল্প বাস্তবায়ন করে। এ প্রকল্পের আওতায় ২০১৮-১৯ অর্থবছরে রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার জয়পুর বাজার থেকে তালতলা, হলিদাগাছি, দিঘলকান্দী, শলুয়া ও বালাদিয়াড় এলাকার ১০ কিলোমিটার জায়গায় ২০ হাজার তালবীজ রোপণ করা হয়।
এত দিনে তালবীজগুলো মাটি ছেড়ে দাঁড়ানোর কথা। অথচ সরেজমিনে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সাইনবোর্ড ছাড়া আর কিছুই চোখে পড়েনি। আদৌ তালের বীজ লাগানো হয়েছিল কি না, তা নিয়ে সন্দেহের কথা জানিয়েছেন স্থানীয়রা। বরং প্রকল্পের টাকা ঠিকাদার ও সংশ্লিষ্ট দপ্তর অনিয়মের মাধ্যমে নয়ছয় করেছে বলে অভিযোগ তুলেছেন তারা।
শলুয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) তৎকালীন চেয়ারম্যান জিয়াউল হক মাসুম বলেন, ২০১৮-১৯ সালের দিকে আমাদের এলাকায় কেউ তালবীজ কিংবা চারা রোপণ করেছিল বলে কখনও শুনিনি। নির্দিষ্ট ওসব জায়গায় কোনো তালের চারা কখনও দেখিনি। কীভাবে প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়েছে জানি না।
তালবীজ প্রকল্পে অনিয়ম হয়েছে কি না, জানতে চাইলে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চারঘাট জোনের সহকারী প্রকৌশলী আল-মামুনুর বলেন, চারঘাটে ১০ কিলোমিটার রাস্তায় সঠিকভাবেই তালবীজ রোপণ করা হয়েছে। তালবীজ অঙ্কুরোদগম হতে অনেক সময় লাগে। এজন্য হয়তো সেগুলো এখনও দৃশ্যমান হয়নি।
তবে বরেন্দ্র এলাকায় তালবীজ রোপণ কর্মসূচি প্রকল্পের পরিচালক ও বিএমডিএর নির্বাহী প্রকৌশলী তরিকুল ইসলাম চারঘাটে প্রকল্প বাস্তবায়নে অনিয়মের কথা স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, আমরা তদন্ত করে দেখেছি দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদার চারঘাটে ২০ হাজার তালবীজ রোপণ করেনি। সাইনবোর্ড টাঙিয়ে কাজ শেষ করেছে। সেজন্য তালগাছের চারা দেখা যাচ্ছে না। ঠিকাদারের সঙ্গে বিষয়টি সমন্বয় করে নতুন প্রকল্প এলে সেখানে পুনরায় তালবীজ রোপণ করা হবে।
উপজেলা বন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০২১-২২ অর্থবছরে চারঘাট উপজেলার পাঁচটি রাস্তার দুপাশে ২ হাজার ৭৪৩টি তালবীজ রোপণ করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে আরও ২ হাজার তালবীজ ও চারা রোপণকাজ চলমান রয়েছে। প্রতিটি তালবীজ রোপণে খরচ ধরা হয়েছে ৬০ টাকা।
তবে বিপুল পরিমাণ তালবীজ রোপণের কথা বলা হলেও নির্দিষ্ট রাস্তাগুলোতে সরেজমিনে মাঝে মাঝে দুয়েকটি জায়গায় তালের চারা দেখা গেছে। অধিকাংশ জায়গাতেই এখনও চারা গজায়নি। এ বিষয়ে উপজেলা বন কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান বলেন, এ প্রকল্পে কোনো অনিয়ম হয়নি। তালবীজ রোপণের পাশাপাশি আমাদের নার্সারিতেও চারা উৎপাদন করছি। সেগুলোও পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন রাস্তায় লাগানো হবে।
এদিকে ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তার অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলাজুড়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর ২০১৮-১৯ অর্থবছরে প্রায় ৯৫০টি ও ২০২০-২১ অর্থবছরে প্রায় ৪০০টি তালগাছের চারা রোপণ করেছে। চারা রোপণের জন্য আলাদা কোনো বরাদ্দ না থাকলেও কাজের বিনিময়ে টাকা (কাবিটা) প্রকল্পের মাধ্যমে এগুলো রোপণ করা হয়। তবে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের লাগানো অধিকাংশ চারা পরিচর্যার অভাবে নষ্ট হয়ে গেছে বলে জানা গেছে।
উপজেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা এস এম শামীম আহম্মেদ বলেন, তালগাছ লাগানোর আলাদা প্রকল্প না থাকলেও কাবিটার মাধ্যমে দুই মৌসুমে প্রায় ১ হাজার ৩৫০টি তালের চারা লাগানো হয়েছিল। অনেক জায়গায় রোপণ করা গাছগুলো নষ্ট হয়েছে এটা ঠিক। তালগাছগুলো রক্ষায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ সবাইকে আরও বেশি যত্নশীল হতে হবে।
সারা দেশের মতো চারঘাট উপজেলাতেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে উদ্বেগজনক হারে বজ্রপাতের ঘটনা বেড়েছে। উপজেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তার কার্যালয় ও ফায়ার স্টেশনের তথ্যমতে গত পাঁচ বছরে বজ্রপাতে চারঘাট উপজেলায় ১৬ জনের প্রাণহানি হয়েছে। এর মধ্যে ২০২১ সালে ইউসুফ এলাকায় এক জায়গাতেই চারজনের প্রাণহানি ঘটে।