সাইফুল হক মোল্লা দুলু, মধ্যাঞ্চল
প্রকাশ : ১১ মে ২০২৪ ১২:২৭ পিএম
আপডেট : ১১ মে ২০২৪ ১২:৩১ পিএম
কিশোরগঞ্জ জেলা কারাগার। ছবি : সংগৃহীত
ওদের চেহারায় সম্ভাবনার উজ্জ্বল দ্যুতি, অবয়বে বৈভবের ছাপ। শারীরিক গঠন, অবয়ব ও আচরণে সম্ভ্রান্ত পরিবারের নিদর্শন। বাস্তবেও ওরা তা-ই। ওরা একঝাঁক উঠতি বয়সি তরুণ। সর্বনাশা মাদকের থাবা ওদের বেপথগামী করেছে। পরিণত করেছে সমাজের বখে যাওয়া সন্তানে। অবশেষে ঠাঁই হয়েছে কারাগারের অন্ধ প্রকোষ্ঠে।
কিশোরগঞ্জ জেলা কারাগারে বন্দি এসব তরুণ-যুবার দেখা মেলে। এরা সবাই জেলার ১৩টি উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে মাদক মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছে। কেউ কেউ মাদক গ্রহণ করে আবার কেউ মাদক বহনকারী হিসেবে মামলার আসামি।
কিশোরগঞ্জ জেলা কারাগার সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি সময়ের হিসাবে কিশোরগঞ্জ জেলা কারাগারে সবসময় গড়ে বন্দি থাকে ১ হাজার ৪০০ থেকে ৫০০ জন। এদের বেশিরভাগই তরুণ-যুবক।
জানা গেছে, পড়াশোনায় ভালো, পরিবারও উচ্চশিক্ষিত। পাশাপাশি কোনো কোনো সম্ভ্রান্ত বংশের ছেলেরাও মাদকসেবী হিসেবে কারাগারে ঢুকেছে। পারিবারিক ঐতিহ্য থাকার কারণে লাজ-শরমের ভয়ে অনেক বন্দির কোনো খোঁজখবর করতে পরিবারের লোকজন কারাগারে আসে না। আবার অনেক বন্দি কারাগার থেকে ফিরে গিয়ে মাদক ছেড়ে ভালো হয়েছে, এমন নজিরও রয়েছে।
জানা গেছে, কারাগারে ১৮ বছরের কম বয়সি তরুণ মাদকসেবীও রয়েছে। পুলিশ গ্রেপ্তার করার পর ১৬-১৭ বছরের তরুণদের ১৮-২০ লিখে দেওয়ায় তাদেরকে জেলা কারাগারেই অবস্থান করতে হচ্ছে। যদিও কিশোর মাদকসেবীদের কারাগারে থাকার কথা নয়। কিশোরগঞ্জ আদালত সূত্রে জানা গেছে, প্রতি তিন-চার মাসে কম বয়সি দুই শতাধিক মাদক মামলার আসামি জামিনে ছাড়া পায়। এদের সিংহভাগ স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যায়। আবার ২৫ ভাগ মাদকাসক্ত গ্রেপ্তার হয়ে আবারও কারাগারে ফিরে আসে। সেই সাথে প্রতিদিন গ্রেপ্তার হয়। ফলে সারা বছরই কারাগারে মাদকাসক্তদের সংখ্যা অপরিবর্তিত থাকে। এসব পরিসংখ্যান পর্যালোচনা করলে তরুণ মাদকসেবীদের সংখ্যা কমছে না, বরং বেড়েই চলেছে।
কোর্ট পরিদর্শক আবু বকর সিদ্দিক বলেন, প্রতিদিন কোর্টের মাধ্যমে ৩-৪ জন তরুণ মাদকসেবী কারাগারে প্রবেশ করছে। এদের চেহারা দেখলে মায়া হয়। বন্ধু কিংবা খারাপ সঙ্গীদের পাল্লায় পড়ে এরা বিপথগামী হচ্ছে। এ থেকে যুবসমাজকে রক্ষা করতে হলে সামাজিক সচেতনতার পাশাপাশি পরিবার থেকে শুরু করতে হবে। প্রবীণ চিকিৎসক ও বেসরকারি কারা পরিদর্শক ডা. দীন মোহাম্মদ জানান, তারুণ্যের অহংকার যুবসমাজ। এই তারুণ্যই মাদকের কাছে হেরে যাচ্ছে। কারাগারে বন্দি মাদক মামলায় আটক যুবক ও তরুণদের মুখের দিকে তাকালে তাদের মধ্যে উজ্জ্বল সম্ভাবনার প্রতিচ্ছবি পরিলক্ষিত হয়। কিন্তু মাদক তাদের সেই সম্ভাবনাকে নষ্ট করে দিচ্ছে। তার মতে, আমরা যে যেখানে আছি-সেই জায়গা থেকে মাদকের বিরুদ্ধে কাজ করতে হবে।
জেল সুপার ফারুক আহমেদ বলেন, মাদক মামলায় বন্দি সম্ভাবনাময় তরুণ-যুবকদের বাছাই করে প্রতিদিন ধর্মীয় শিক্ষার পাশাপাশি মাদক ছেড়ে দেওয়ার জন্য বিশেষ আলোচনা ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রম নেওয়া হয়েছে। এতে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মাদকসেবী ভালো হয়ে যাচ্ছে। তারা জামিনে বের হয়ে যাওয়ার সময় শপথ করে আর কখনোই মাদক গ্রহণ করবে না।
কারাধ্যক্ষ মো. আসাদুর রহমান জানান, জেলা কারাগারে তিন শতাধিক তরুণ ও যুবক রয়েছে। যারা মাদক মামলার আসামি। এদের বিষয়ে আমাদের সবসময় সচেতন থাকতে হয়। তাদের জন্য বিভিন্ন মাদকবিরোধী সমাবেশসহ মাঝেমধ্যে প্রীতি ফুটবল খেলার আয়োজন করা হয়। এসব থেকে কিছু ইতিবাচক ফল পাওয়া যাচ্ছে। এমনসব কর্মসূচি কারাগারে সারা বছর চালু রাখা হবে।