রংপুর অফিস
প্রকাশ : ১০ মে ২০২৪ ১৬:২২ পিএম
আপডেট : ১০ মে ২০২৪ ১৬:২৪ পিএম
দখল-দূষণে রংপুরের ঐতিহ্যবাহী শ্যামাসুন্দরী খাল। প্রবা ফটো
রংপুরের ঐতিহ্যবাহী শ্যামাসুন্দরী খাল। ১৩৪ বছর আগে পুনঃখনন করা হয়েছিল। উদ্দেশ্য ছিল জলাবদ্ধতা দূর ও ম্যালেরিয়া থেকে নগরবাসীকে রক্ষা করা। বর্তমানে শ্যামাসুন্দরী খালে ঠিক উল্টো কাজ হচ্ছে। মশার উৎপাদনকেন্দ্র এবং জলাবদ্ধতায় প্রতি বছর নগরবাসীকে ডুবিয়ে দিচ্ছে এ খালটি। নগরবাসী ময়লার ভাগাড়ে পরিণত করায় শ্যামাসুন্দরী খালের এখন মরণদশা।
১৫ দশমিক ৮০ কিলোমিটার খালের ৫ কিলোমিটারে পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। রংপুর সিটি করপোরেশনের সহযোগিতায় ‘বিডি ক্লিন’ নামক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করবে। আগামীকাল শনিবার বিডি ক্লিনের এক হাজার স্বেচ্ছাসেবী এই দুর্গন্ধযুক্ত ময়লা পানিতে নামবেন। তারা নগরীর চেকপোস্ট এলাকা থেকে শাপলা চত্বর পর্যন্ত শ্যামাসুন্দরী খালের ময়লা আবর্জনা পরিষ্কার করবেন। এতে খালে পানির প্রবাহ হবে বলে তাদের আশা।
শ্যামাসুন্দরী খালে পরিচ্ছন্নতা অভিযান উপলক্ষে গতকাল বৃহস্পতিবার রংপুর সিটি করপোরেশন মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা এসব তথ্য জানান।
তিনি বলেন, রংপুর স্টেডিয়াম মাঠে পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হবে। সেখানে সিটি করপোরেশন, বিভাগীয় প্রশাসন, জেলা প্রশাসন, পুলিশ বাহিনী, পানি উন্নয়ন বোর্ডের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও সাংবাদিকরা উপস্থিত থাকবেন। এরপর বিডি ক্লিনের স্বেচ্ছাসেবীরা শ্যামাসুন্দরী খালে নেমে এর ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার করবেন। এ লক্ষ্যে স্বেচ্ছাসেবীর জন্য গামবুট, গ্লাভসসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম সরবরাহ করছে সিটি করপোরেশন। খাল থেকে উত্তোলন করা ময়লা পরিবহনের জন্য ডাম্প ট্রাকসহ অন্যান্য পরিবহন প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এ ছাড়া সিটি করপোরেশনের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বিভাগের কর্মকর্তা, কর্মচারীরাও খালের ময়লা অপসারণের কাজে সহযোগিতা করবেন।
সংবাদ সম্মেলনে ছিলেন সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা উম্মে ফাতিমা, প্যানেল মেয়র মাহবুবার রহমান মঞ্জু, রংপুর প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মেরিনা লাভলীসহ সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলররা।
১৮৯০ সালে পৌরসভার তৎকালীন চেয়ারম্যান ও ডিমলার রাজা জানকি বল্লভ সেন তার মা শ্যামাসুন্দরীর স্মরণে এ খাল খনন করেছিলেন। খালটি রংপুর সিটি করপোরেশন এলাকার মধ্যে ১৫ দশমিক ৮০ কিলোমিটারজুড়ে বিস্তৃত। এলাকাভেদে এর প্রস্থ ২৩ থেকে ৯০ ফুট। খালটি উত্তর-পশ্চিমে কেল্লাবন্দ ঘাঘট নদী থেকে শুরু হয়ে নগরীর বিভিন্ন এলাকার বুক চিরে মাহিগঞ্জ সাতমাথা রেলগেট এলাকায় কেডি ক্যানেল স্পর্শ করে মিশেছে খোকসা ঘাঘট নদীতে। রংপুর সিটি করপোরেশন ও বিভাগ হওয়ার পর শ্যামাসুন্দরী খাল ঘেঁষে খালের জায়গা দখল করে তৈরি হয়েছে বড় বড় অট্টলিকা, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, রেস্টুরেন্ট ও ঘরবাড়ি। এসবের প্রতিদিনের বর্জ্য ফেলা হচ্ছে শ্যামাসুন্দরী খালে। এ ছাড়া পয়োনিষ্কাশনের সংযোগ এ খালে দেওয়ায় পানি দূষিত হয়ে পড়েছে। শ্যামাসুন্দরী খালের পুরোনো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে ২০১৯ সালে জেলা প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি, সেনাবাহিনী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, নদী বিশেষজ্ঞ, প্রকৌশলী, শিক্ষক, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি এবং সাংবাদিকদের নিয়ে একটি সমন্বয় কমিটি গঠন, সভা-সমাবেশ হলেও খালের উন্নয়ন হয়নি।