× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

ভুক্তভোগীকে ‘পালানোর পরামর্শ’ ওসির, অভিযোগ গড়াল পুলিশ সদর দপ্তরে

আবু রায়হান তানিন, চট্টগ্রাম

প্রকাশ : ০৯ মে ২০২৪ ২১:৫৭ পিএম

আপডেট : ০৯ মে ২০২৪ ২২:৩১ পিএম

চট্টগ্রামের আনোয়ারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সোহেল আহমেদ। সংগৃহীত ফটো

চট্টগ্রামের আনোয়ারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সোহেল আহমেদ। সংগৃহীত ফটো

চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার ঝিওরী গ্রামের বাসিন্দা মোহাম্মদ ইদ্রীস। ৬৫ বছরের বৃদ্ধ পেশায় ইলেকট্রিশিয়ান। কর্মস্থল থেকে বাড়ি ফেরার পথে দুই প্রতিবেশীর ঝগড়া থামাতে গিয়ে হামলার শিকার হন তিনি। আহত অবস্থায় থানায় গেলেও পুলিশ মামলা নেয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে তার। ইদ্রীসের দাবি– মামলা না নিয়ে পরিবারসহ তাকে পালিয়ে যেতে পরামর্শ দেন সংশ্লিষ্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি)। পরে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন তিনি। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে পুলিশ তার বিরুদ্ধে পাল্টা মামলা করিয়েছে হামলাকারীদের দিয়ে। তবে পুলিশ বলছে, মামলা করার জন্য চিকিৎসা-সংক্রান্ত কাগজপত্র আনতে পরামর্শ দেওয়া হয় ইদ্রীসকে। পরে তিনি সেসব নিয়ে থানায় না আসায় মামলা নথিভুক্ত হয়নি। দুই পক্ষই একে-অপরের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। এখানে পুলিশের কোনো হাত নেই।

নিজ বাড়ির এলাকায় ইদ্রীস হামলার শিকার হন ৮ এপ্রিল। পরদিন তিনি আদালতে মামলা করেন। তার বিরুদ্ধে আনোয়ারা থানায় মামলা হয় ১৮ এপ্রিল। সে মামলায় ২৩ এপ্রিল জামিন পান তিনি। পরে আনোয়ারা থানার ওসি সোহেল আহমেদের বিরুদ্ধে ৪ মে পুলিশ সদর দপ্তরে অভিযোগ দেন বৃদ্ধ ইদ্রীস। সম্প্রতি অভিযোগপত্রের অনুলিপি এই প্রতিবেদকের হাতে এসেছে।

নিজের বিরুদ্ধে হওয়া মামলা সাজানো ও বানোয়াট দাবি করে পুলিশ সদর দপ্তরে দেওয়া অভিযোগে পাঁচটি যুক্তি দেখিয়েছেন ইদ্রীস। তিনি বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে করা মামলার বাদী একজন নারী। ঘটনার কোথাও তিনি ছিলেন না। আমার করা মামলায়ও তার নাম নেই। কিন্তু ঘটনার ১০ দিন পর তাকে বাদী করে মামলা নেওয়া হয়েছে শুধুমাত্র জামিন অযোগ্য যৌন নিগ্রহের ধারা যুক্ত করার জন্য।’

সেখানেও মিথ্যার আশ্রয় নেওয়া হয়েছে দাবি করে ইদ্রীস বলেন, ‘মামলায় বাদী মনোয়ারা বেগম দাবি করেছেন আমি ও আমার দুই ছেলে মিলে বাদীর শাড়ি খুলে ও ছিঁড়ে শ্লীনতাহানী করেছি। অথচ মামলার এজহারের সঙ্গে ঘটনার যে ছবি যুক্ত করা হয়েছে সেখানে দেখা যাচ্ছে মনোয়ারা বেগম মেক্সি পরা অবস্থায় আছেন। তাছাড়া মামলার এজহারে জমির ও হাসান শরীফকে মারধরের অভিযোগে ৩২৩ ধারা ও ৩২৬ ধারা যুক্ত করা হয়েছে। অথচ তাদের যে চিকিৎসাপত্র সেখানে চিকিৎসক তাদের নাপা এক্সটেন্ড, ম্যাক্সপ্রো, রোলাক জাতীয় ঔষধ সেবনের পরামর্শ দিয়েছেন। এগুলো ৩২৩ ধারা অন্তর্ভুক্ত। অথচ মামলার এজহারে কোপানোর কথা উল্লেখ করে ৩২৬ ধারা যুক্ত করা হয়েছে যাতে আমরা জামিন না পাই।’

ঘটনার শুরু যেভাবে

স্থানীয়রা জানান, ঘর নির্মাণ নিয়ে স্থানীয় মান্না মিয়ার সঙ্গে তার ভাই হাসান শরীফের বিরোধ ছিল। ইদ্রীস তাদের প্রতিবেশী। ৮ এপ্রিল হাসান শরীফ ও তার সহযোগীরা মান্নার ঘর ভেঙ্গে দিলে তিনি বাধা দেন। তখন হামলার শিকার হন ইদ্রীস।

জানতে চাইলে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মো. সারোয়ার বলেন, ‘হাসানরা মেরে ইদ্রীসের মাথা ফাটিয়ে দেয়। থানায় জানালে পুলিশ তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়। বিকালের পর অবস্থা পরিবর্তন হয়ে যায়। ইদ্রীসের বাড়িতে হামলা হয়। এখন শুনছি ইদ্রীসের বিরুদ্ধে উল্টো মামলা হয়েছে।’

বিষয়টি নিয়ে জানতে যোগাযোগ করা হয় ইদ্রীসের বিরুদ্ধে মামলার বাদী মনোয়ারা বেগমের সঙ্গে। মামলার নথিতে সংযুক্ত তার ফোন নম্বরে কল দিয়ে কথা বলতে চেষ্টা করা হয়। তবে কল রিসিভ করে ওপর প্রান্ত এক নারী জানিয়ে দেন দেওয়া হয় ‘এটি মনোয়ারার নম্বর না। ভুল নম্বর।’ এরপর ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন তিনি। 

ইদ্রীসের অভিযোগ– ওসি ‘স্বপ্রণোদিত’ হয়ে তার বিরুদ্ধে হামলাকারীদের দিয়ে মামলা করিয়েছেন। ওসির এমন ব্যক্তিগত রোষের কী কারণ– জবাবে ইদ্রীস বলেন, “ঘটনার পর আমি থানায় মামলা করতে যাই। তিনি (ওসি) ঘটনাস্থলে ফোর্সও পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু আমি গিয়ে দেখি– তারা (পুলিশ) অভিযুক্তদের সঙ্গে খোশগল্পে মেতে উঠেছে। পরে অভিযুক্তরা থানায় যায়। সেখান থেকে ফিরে রাতে আমার বাসায় হামলা করে। তখন আমি থানায় গেলে ওসি কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে আমাকে বলেন, ‘আপনি কিছুদিনের জন্য পরিবার নিয়ে পালিয়ে যান।”

ইদ্রীস আরও বলেন, ‘পরদিন আমি আদালতে যাই। অভিযোগ শুনে আদালত মামলা নথিভুক্ত করার আদেশ দেন। আদেশ পেয়ে ওসি ক্ষেপে যান। তিনি আমার বাড়িতে ফোর্স পাঠান, আমাকে থানায় যেতে বলেন। আমি অসুস্থ থাকায় থানায় যেতে পারিনি। এরপর ১৮ এপ্রিল ওই পক্ষকে ডেকে ওসি মামলা করান।’

জানতে চাইলে ওসি সোহেল আহমেদ বলেন, ‘ইদ্রীসের মামলাটাও থানায় রেকর্ড হয়েছে। আমরা মামলা নেইনি এটা সত্য না।’

আদালতের নির্দেশে মামলা নথিভুক্ত করা হয়েছে। এর আগে মামলা না নেওয়ার কারণ কী– জবাবে ওসি বলেন, ‘তিনি এসেছিলেন চিকিৎসা ছাড়া। তখন আমি বলেছি আগে চিকিৎসা করিয়ে আসুন, মামলা নেওয়া হবে। পরে আর তিনি আসেননি। দুই পক্ষের মারামারি হয়েছে। দুই পক্ষ থানায় মামলা করেছে। এখানে আমার রোষানলে পড়ার কিছু নেই। দুটোই তদন্তাধীন মামলা, এগুলো নিয়ে কথা বলতে চাই না।’

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা