চারঘাট পৌরসভায় পানির লাইন
শাহিনুর সুজন, চারঘাট (রাজশাহী)
প্রকাশ : ০৮ মে ২০২৪ ১৭:২১ পিএম
পানি সরবরাহ পাইপের মেয়াদ ১০ বছর। সেই পাইপ ৫ বছর আগে স্থাপন করা হলেও এখনও ব্যবহার শুরু হয়নি। মাটির নিচে পড়ে আছে। রাজশাহীর চারঘাট পৌরসভায় বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ প্রকল্পের এই হাল নিয়ে সমালোচনা উঠেছে।
২০১৮ সালের ৩০ জুলাই ঘটা করে কাজের উদ্বোধন হয়। এক বছরের মধ্যে চারঘাট পৌরসভায় বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল। প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ২০১৯ সালের ২২ নভেম্বর। তবে কাজ শেষ না হওয়ায় চার দফা মেয়াদ বেড়েছে। তবু কাজ শেষ করতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মুক্তা কনস্ট্রাকশন লিমিটেড। ফলে ৫ বছরেও পানি পৌঁছায়নি পৌরবাসীর ঘরে। ব্যবহার না হওয়ায় নষ্ট হচ্ছে পাইপলাইন।
জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চারঘাট অঞ্চলে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর প্রতি বছর অন্তত এক ফুট করে নামছে। পদ্মা ও বড়াল নদবেষ্টিত এলাকাটির অনেক টিউবওয়েলে পানি উঠছে না। শুষ্ক মৌসুমে সংকট তীব্র আকার ধারণ করে। ফলে দূর থেকে পানি এনে চাহিদা মেটান স্থানীয়রা। তাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের জন্য পৌর কর্তৃপক্ষ ‘পানি সরবরাহ ব্যবস্থাপনা প্রকল্প’ গ্রহণ করে।
প্রথম শ্রেণির ১৯টি পৌরসভায় বিশেষ এ প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক এবং ওপেক ফান্ড ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টের অর্থায়নে তৃতীয় নগর পরিচালন ও অবকাঠামো উন্নতিকরণ প্রকল্পের আওতায় এটি বাস্তবায়ন হচ্ছে। প্রায় ৮ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে জনস্বাস্থ্য এবং স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর।
পৌরবাসীর অভিযোগ, ব্যবহার না হওয়ায় এবং অপরিকল্পিতভাবে স্থাপন করায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পাইপলাইন। সড়ক প্রশস্তকরণের সময় নষ্ট হয়েছে প্রায় সাড়ে আট কিলোমিটার। স্থানীয় মেরামতপুর এলাকার সাজ্জাদ হোসেন নামে এক ব্যক্তি বলেন, ঢাকঢোল পিটিয়ে পানি সরবরাহের পাইপ বসানো হয়। সড়কের কাজের সময় তা তুলে ফেলা হয়। কিছুদিন পর সে পাইপ জোড়াতালি দিয়ে বসানো হয়েছে। তিনি বলেন, ‘জানি না পাইপে কখনও পানি আসবে কিনা।’
জানা গেছে, প্রকল্পের আওতায় ওভারহেড ট্যাঙ্ক ও পাঁচটি পাম্প হাউস নির্মাণ এবং ২৫ কিলোমিটার পাইপলাইন বসানো হচ্ছে। পাঁচটি পাম্পের মাধ্যমে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলনের পর পরিশোধন করা হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে পৌরসভার ৬০ ভাগ এলাকা বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের আওতায় আসবে।
সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) চারঘাট উপজেলার সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ এই কাজে গাফিলতির অভিযোগ তুলেছেন। তিনি বলেন, কোটি কোটি টাকা খরচ হলেও কর্তৃপক্ষের গাফিলতিতে বিশুদ্ধ পানি পৌরবাসীর কাছে পৌঁছায়নি। ঠিকাদার ও বাস্তবায়নকারী কর্তৃপক্ষ প্রকল্পের অবস্থা হযবরল করেছে।
প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী পৌরসভার নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) রেজাউল করিম গাফিলতির অভিযোগ করেছেন। তিনি বলেন, ‘সময় বাড়ালেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ বুঝিয়ে দেয়নি। তাদের তাগাদা দেওয়া হচ্ছে। কর্তৃপক্ষের কোনো গাফিলতি নেই।’ সড়কের কাজের জন্য ক্ষতিগ্রস্ত পাইপলাইন মেরামতের কাজ চলছে বলে তিনি জানান। পাইপের মেয়াদ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘মেয়াদ ১০ বছর হলেও আরও বেশি সময় ব্যবহার করা যাবে।’
উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপসহকারী প্রকৌশলী মেহেদী হাসান বলেন, এ ধরনের প্রকল্পে সময় লাগে। কাজের মান ঠিক রেখে বুঝে নেওয়ার চেষ্টা চলছে। পৌর মেয়র একরামুল হক বলেন, পৌরবাসীর বিশুদ্ধ পানির সংকট রয়েছে। তার দায়িত্ব নেওয়ার এক বছরে সিংহভাগ কাজ শেষ হয়েছে। মাস খানেকের মধ্যে পৌরবাসী বিশুদ্ধ পানি পাবে বলে আশা তার।