রাজশাহী অফিস
প্রকাশ : ০৮ মে ২০২৪ ১৭:০৭ পিএম
আপডেট : ০৮ মে ২০২৪ ১৭:২৯ পিএম
বেলাল উদ্দীন সোহেল। প্রবা ফটো
ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপে রাজশাহীর গোদাগাড়ী ও তানোরে আজ ভোটগ্রহণ। এই দুই উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে মোট প্রার্থী সাতজন। যাদের মধ্যে গোদাগাড়ীতে পাঁচ এবং তানোরে দুইজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। দুই উপজেলার সাত প্রার্থীর মধ্যে গোদাগাড়ীর এক প্রার্থীর সম্পদের বিবরণ প্রশ্ন তুলেছে জনমনে। বিপুল সম্পদের উৎস নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও এই অর্থসম্পদই তাকে প্রভাবশালী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনী প্রতিযোগিতার সম্মুখভাগে নিয়ে এনেছে।
রাজশাহী জেলার সীমান্ত এলাকা গোদাগাড়ী উপজেলা মাদক পাচারের অন্যতম রুট হিসেবে পরিচিত। এ ছাড়াও এই রুট দিয়ে চোরাইপথে ভারতীয় পণ্য দেশে প্রবেশ করে। রাজশাহী জেলার আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রতি মাসে যে পরিমাণ মাদক উদ্ধার করে তার একটি বড় অংশ এই উপজেলা থেকেই উদ্ধার হয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দেওয়া তথ্যমতে, সীমান্তবর্তী এলাকায় মাদক চোরাচালন চক্রের সঙ্গে স্থানীয় একাধিক জনপ্রতিনিধি জড়িত। তাদের অনেকেই শূন্য থেকে বিপুল অর্থসম্পদের মালিক বনে গেছেন। এ ছাড়াও এলাকার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়োগ ও কমিটি বাণিজ্যের অভিযোগ রয়েছে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে। এসব নিয়ে একাধিক গণমাধ্যমে বিভিন্ন সময়ে সংবাদ প্রকাশ হয়েছে।
রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলায় পাঁচজন প্রার্থী হলেন বর্তমান উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবলীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম, গোদাগাড়ী পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি রবিউল আলম, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-প্রচার সম্পাদক সুনন্দন দাস রতন, উপজেলা যুবলীগের অর্থবিষয়ক সম্পাদক ও সদ্য পদত্যাগ করা দেওপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বেলাল উদ্দীন সোহেল এবং জেলা বিএনপির সাবেক যুববিষয়ক সম্পাদক সাজেদুর রহমান খান মার্কনী। তানোর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে দুইজন প্রার্থী হলেন- বর্তমান চেয়ারম্যান ও যুবলীগ নেতা লুৎফর হায়দার রশিদ ময়না। তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী তানোর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুন।
প্রার্থীদের নির্বাচন কমিশানে দেওয়া হলফনামায় দেখা যায়, সাতজন প্রার্থীর মধ্যে গোদাগাড়ী উপজেলা যুবলীগের অর্থবিষয়ক সম্পাদক বেলাল উদ্দীন সোহেল অল্প বয়সেই বিপুল অর্থসম্পদ করে ফেলেছেন। সোহেলের আয় এবং সম্পদের ধারেকাছেও নেই অধিকাংশ প্রার্থী। এসএসসি পাস সোহেল পেশা হিসেবে দেখিয়েছেন আমদানি রপ্তানি এবং মৎস্য চাষ। তার নগদ অর্থের পরিমাণ ১ কোটি টাকা। এ ছাড়াও রয়েছে ৪৯ বিঘা কৃষি ও অকৃষি জমি এবং রাজশাহীর অভিজাত আবাসিক এলাকায় প্রায় সাড়ে তিন কাঠার ওপর নির্মাণাধীন ১০ তলা ভবন। আর এসব সম্পদের বাজারমূল্য দেখানো হয়েছে প্রায় ১০ কোটি টাকা। রয়েছে ৩০ লাখ টাকা মূল্যে ব্যক্তিগত গাড়ি।
এ ছাড়াও সোহেলের বার্ষিক আয় ১ কোটি টাকার ওপরে। যার মধ্যে ব্যবসা থেকে বছরে আয় প্রায় ৮৩ লাখ টাকা এবং মৎস্য খাত থেকে আয় দেখানো হয়েছে প্রায় সাড়ে ১৯ লাখ টাকা। এর বাইরে সাড়ে ৪ লাখ টাকার ওপরে আয় করেন কৃষি খাত থেকে। তবে সোহেল দেনা দেখিয়েছেন ১ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। যার মধ্যে ৯৮ লাখ টাকা ব্যবাসয়িক দেনার সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য দেওয়া নেই। এ বিষয়ে কথা বলতে বেলাল উদ্দিন সোহেলের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও রিসিভ করেননি তিনি। তবে বেলালের এমন উত্থান নিয়ে এলাকাবাসী ও স্থানীয় রাজনীতিবিদদের মধ্যে প্রশ্ন রয়েছে।
এদিকে আয় ও সম্পদের দিক থেকে আলোচনায় পিছিয়ে নেই গোদাগাড়ী উপজেলার বর্তমান চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম। পাঁচ বছর আগে তার হলফনামায় কোটির অঙ্কে কোনো হিসাব না থাকলেও কর্তমান হলফনামা বলেছে গত পাঁচ বছরে তিনি কয়েক কোটি টাকার অর্থ ও সম্পদ গড়েছেন। এমএসসি পাস জাহাঙ্গীর বার্ষিক আয় দেখিয়েছেন ১৪ লক্ষাধিক টাকা। তার কাছে নগদ অর্থ রয়েছে ১০ লাখ টাকা এবং অন্যান্য ব্যবসায়িক পরিসম্পদ রয়েছে ৪ কোটি ৩৪ লক্ষাধিক টাকা। রয়েছে ১ হাজার ৫০০ শতকের মতো কৃষিজমি। গবাদিপশু পালনে বিনিয়োগ রয়েছে ১ কোটি ১০ লক্ষাধিক টাকা এবং মৎস্যখামারে বিনিয়োগ রয়েছে ২০ লক্ষাধিক টাকা। পাশাপাশি স্ত্রী-সন্তানের নামেও করেছেন কৃষি ও অকৃষি জমি, মার্কেটসহ অ্যাপার্টমেন্ট। এ ছাড়াও স্ত্রীর নামে ব্যবসায়িক সম্পদ রয়েছে ৬৪ লাখ ৫৪ হাজার টাকা। অথচ পাঁচ বছর আগে জাহাঙ্গীরের হলফনামা পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ওই সময় তার সম্পদ বলতে ছিল ৫০ লক্ষাধিক টাকার কৃষি, অকৃষি জমিসহ একটি মার্কেট। বার্ষিক আয় ছিল ১৯ লক্ষাধিক টাকা। বর্তমানে জাহাঙ্গীরের বিভিন্ন ব্যাংকে দেনা রয়েছে প্রায় ৮ কোটি টাকা।