× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

দীঘি শুকিয়ে বন উজাড় করে ‘উন্নয়ন’

এম আর ইসলাম রতন, নওগাঁ

প্রকাশ : ০৭ মে ২০২৪ ১২:১৮ পিএম

নওগাঁর আলতাদীঘি জাতীয় উদ্যানের অস্তিত্ব এখন সংকটের মুখে। কয়েক বছরের ব্যবধানে সবুজে ঘেরা বন এখন প্রায় বিরানভূমি। প্রবা ফটো

নওগাঁর আলতাদীঘি জাতীয় উদ্যানের অস্তিত্ব এখন সংকটের মুখে। কয়েক বছরের ব্যবধানে সবুজে ঘেরা বন এখন প্রায় বিরানভূমি। প্রবা ফটো

নওগাঁর আলতাদীঘি জাতীয় উদ্যানের অস্তিত্ব এখন সংকটের মুখে। অপরিকল্পিত প্রকল্পের কারণে উজাড় হচ্ছে এ উদ্যানে বেড়ে ওঠা বন। বিলুপ্ত হচ্ছে বনের সৌন্দর্য। ফলে জীববৈচিত্র্যও পড়েছে হুমকিতে। এমন প্রেক্ষাপটে সম্প্রতি আলতাদীঘির পুনঃখনন নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে কয়েকটি আলোকচিত্র ভাইরাল হওয়ার পর ক্ষোভ দেখা দিয়েছে সারা দেশজুড়ে।

পরিবেশবিদদের অভিযোগ, উন্নয়নের নামে এই উদ্যানের প্রায় তিন হাজার মূল্যবান গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। শালবনটিতে গত এক বছরে আগুন লেগেছে আটবার! শুধু পরিবেশবিদরা নন, সামাজিক বনায়নের অংশীজনরাও বন বিভাগের বিরুদ্ধে অভিযোগ করছেন, অপরিকল্পিতভাবে শালবনটিকে ধ্বংসের পথে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে।

অপরিকল্পিত প্রকল্প বাস্তবায়নের কথা স্বীকার করে ধামইরহাটের বনবিট কর্মকর্তা আনিসুর রহমান প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘বন বাঁচাতে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।’ 

এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক মো. গোলাম মওলা বলেন, ‘বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

জাতীয় উদ্যান আলতাদীঘির সামাজিক বনায়নের ওপর নির্ভরশীল অংশীজনদের মধ্যে আব্বাস মন্ডল, নুর ইসলাম, খয়বর আলী, আসমা বেওয়া এবং জহুরা বিবি অভিযোগ করেছেন, ‘অপরিকল্পিতভাবে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চালানোর কারণে আজ নয়নাভিরাম আলতাদীঘির সৌন্দর্য ও পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে।’ 

যা ঘটেছে আলতাদীঘিতে

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অফুরান ক্ষেত্র এই আলতাদীঘি শালবন। এখানকার বড় বড় গাছ, লতাগুল্ম, পাখি আর বনের মধ্যকার উইপোকার ঢিবি যে কাউকে বিস্মিত ও আকৃষ্ট করে। ২০১১ সালে এই বনকে জাতীয় উদ্যান ঘোষণা করা হয়। এরপর গত বছরের নভেম্বর মাসে ক্লাইমেট চেঞ্জ ট্রাস্ট ফান্ডের অর্থায়নে আলতাদীঘি জাতীয় উদ্যানের জীববৈচিত্র্য পুনরুদ্ধার ও সংরক্ষণ প্রকল্পের আওতায় প্রায় ৬ কোটি ৩৯ টাকা ব্যয়ে এবং সামাজিক বন বিভাগ, রাজশাহীর তত্ত্বাবধানে দীঘিটির পুনঃখনন কাজ শুরু করা হয়। 

প্রকল্পের পরিকল্পনায় বলা হয়েছিল, দীঘির চারপাশের পাড় উঁচু ও প্রশস্ত করা হবে। দীঘিটিকে সাড়ে ৪ ফুট গভীর করে খনন করা হবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজও শুরু হয়। এ সময় দীঘিটির চারপাশের কয়েক হাজার গাছ কেটে ফেলা হয়। রহস্যজনকভাবে এখানে আগুনও লাগে কয়েকবার। ফলে আগুনে পুড়ে যায় বন ও বন্য প্রাণী থেকে শুরু করে পাখি ও পোকামাকড়ের বাস্তুসংস্থান। বনের মধ্যে আগে যেখানে সরু মাটির পথ ছিল, সেখানে পথ পাকা করে ফেলায় বনের গহিনে মানুষজনের আনাগোনাও বাড়তে থাকে। ফলে পশু-পাখির অভয়ারণ্য হিসেবে এ উদ্যানের যে সুনাম ছিল, তাও বিপন্ন হয়ে পড়েছে। 

সামাজিকমাধ্যমে প্রতিক্রিয়া

সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে বিষয়টি ভাইরাল হয়ে। ড. এমআর করিম রেজা নামের একটি আইডি থেকে আলতাদীঘি উদ্যানের উন্নয়নের নামে অবাধে বৃক্ষনিধনে ক্ষোভ প্রকাশ হয়। এতে প্রকল্প হাতে নেওয়ার আগে ও পরের দুটি আলোকচিত্রও যুক্ত করা হয়। ড. এমআর করিম রেজা তার স্ট্যাটাসে লেখেন, ‘নওগাঁ জেলার ধামইরহাট উপজেলায় অবস্থিত আলতাদীঘি জাতীয় উদ্যান। উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত এই জাতীয় উদ্যান গড়ে উঠেছে প্রায় ১.১ কিমি দীর্ঘ ও ৫০০ মিটার প্রস্থের ৪৩ একর আয়তনের এক বিশাল দীঘিকে কেন্দ্র করে, যা আলতাদীঘি নামে পরিচিত। শালবন ও নানা ধরনের উদ্ভিদ রয়েছে উদ্যানের বনভূমিতে। মেছোবাঘ, গন্ধগোকুল, শিয়াল, অজগর, বানরসহ বিভিন্ন ধরনের প্রাণী পোকামাকড় রয়েছে উদ্যানে।’ 

সংস্কারের নামে এই দীঘির আশেপাশে এক কিমি অংশের সব ধরনের গাছ কেটে ফেলা হয়েছে!

ইহাই # উন্নয়ন।’

ড. করিমের এই স্ট্যাটাসের নিচে অসংখ্য মানুষ মন্তব্য করেছেন, প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। নাছির মাহমুদ শাওন নামে এক ব্যক্তি মন্তব্য করেছেন, ‘গরম জীবনেও কমবে না, যতই এসি, আইপিএস লাগাই না কেন, প্রকৃতিকে হত্যা করে চরম ভুল করছি আমরা। তার ফল ভোগ করতে হবে। আপনি যত বড় কোটিপতি হোন না কেন, যত বড় শহরে বসবাস করেন না কেন, প্রতিশোধ সে নেবেই। উদাহরণ আমেরিকার শহরগুলোর টর্নেডো, দাবানল, বিভিন্ন দেশের ভূমিকম্প এবং রিসেন্টলি দুবাই শহরের বন্যা জলাবদ্ধতা তার প্রমাণ ... তাই বলব গাছ, প্রকৃতি, বন্য প্রাণীদের ভালোবাসতে হবে।’

এস কে শাহীন লিখেছেন, ‘এখন এখানে বিশাল অট্টালিকা তৈরি করা হবে। ব্যবসার জন্য কয়েকটা হোটেল আর ফুসকা চটপটির দোকানের হাট বসানো হবে। মানুষকে বলা হবে এটা একটা প্রাকৃতিক সম্পদ। সেই ইনকাম হবে।’

গৃহবধূ মোসা. ফাতেমা তুজ জোহরা মন্তব্য করেছেন, ‘কিছুদিন আগে গেছিলাম। ভেবেছিলাম দীঘিতে অনেক পানি থাকবে। কিন্তু খরা পড়া খোলা মাঠ ছাড়া কিছু পাইনি। জায়গার আশপাশের গাছপালা কেটে জায়গাটার সৌন্দর্যই শেষ। আর হয়তো যাব না।’

ফয়সাল কবির লিখেছেন, ‘দেশের অধিকাংশ মানুষকে বিচ্ছিন্নতাবাদের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। তারা মূলত গাছ কাটছে না তারা আমাদের গলা কাটছে। আমাদের ইকোসিস্টেম ধ্বংস করছে। ইকোসিস্টেমের কোনো একটি অংশ ধ্বংস হয়ে গেলে পুরো সিস্টেম আস্তে আস্তে ভেঙে পড়ে। সারা বাংলাদেশে গাছ কাটার এক মহা উৎসব লাগিয়েছে এই সরকার।’

প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে অনেকেই লিখেছেন, ‘অপরিকল্পিত প্রকল্প বাস্তবায়নের বিরূপ প্রভাব পড়ছে শালবনে। এভাবে বন উজাড় হলে নেমে আসবে প্রাকৃতিক বিপর্যয়।’ দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার তাগিদ দেন তারা। 

বন ও বৃক্ষ রক্ষার দাবিতে মানববন্ধন

এমন প্রেক্ষাপটে সম্প্রতি আলতাদীঘির উন্নয়নের নামে জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের বিরুদ্ধে এবং প্রাকৃতিকভাবে গড়ে ওঠা বনাঞ্চলটি রক্ষার দাবিতে ও নওগাঁর নদী খাল বিল দখল দূষণ এবং পরিবেশ রক্ষার লক্ষ্যে নওগাঁ শহরের মুক্তির মোড়ে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), গ্রিন ভয়েজ ও একুশের পরিষদ নওগাঁর উদ্যোগে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়। 

বাপার সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আলতাদীঘি শালবনে গত এক বছরে আটবার আগুন লেগেছে। উন্নয়নের নামে প্রায় ৩ হাজার গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। কীভাবে আগুন লেগেছে বা লাগানো হয়েছে, তার সঠিক কোনো তথ্য আমরা জানি না। এগুলো তদন্ত করা প্রয়োজন।’

নওগাঁ জেলা বাপার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মুকুল চন্দ্র কবিরাজ বলেন, ‘আজ প্রকৃতির বিরূপ প্রভাব পড়েছে, যা আমাদেরই সৃষ্টি। যেসব বন, নদী ও জলাভূমি প্রাকৃতিকভাবেই গড়ে উঠেছে, সেসব সংরক্ষণ করা প্রয়োজন হয়ে দাঁড়িয়েছে। শুধু মানববন্ধন করলেই হবে না, কর্মসূচির দাবি বাস্তবায়নও করতে হবে। পরিবেশ রক্ষায় যতদূর যাওয়ার দরকার হবে, আমরা ততদূরই যেতে চাই।’

একুশে পরিষদ নওগাঁর সভাপতি ও পরিবেশবিদ অ্যাডভোকেট ডিএম আব্দুল বারী জানিয়েছেন, ‘উন্নয়নের নামে জাতীয় উদ্যান আলতাদীঘির অবাধ বৃক্ষনিধন বন্ধ করতে হবে। বিকল্প চিন্তাধারা করতে হবে।’ 

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা