কাওছার আহমদ, সিলেট
প্রকাশ : ০৬ মে ২০২৪ ১৬:০১ পিএম
আপডেট : ০৬ মে ২০২৪ ১৬:১৮ পিএম
সুরমা নদী। ছবি : সংগৃহীত
সিলেটে সুরমা নদীর শুধু চরাঞ্চলের ১৫ কিলোমিটার খননকাজ ১৫ মাসেও শেষ হয়নি। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আগামী জুন পর্যন্ত তারা খননকাজ চালাবেন। এ সময়ের মধ্যে যতটুকু খনন করা যাবে, ততটুকু করেই প্রকল্পটি বন্ধ হয়ে যাবে। গত বছরের জানুয়ারিতে শুরু হওয়ার পর এ পর্যন্ত এ প্রকল্পের আওতায় ৬০ শতাংশের মতো খনন হয়েছে।
এদিকে আরেকটি বর্ষা মৌসুমের পদধ্বনি শোনা যাচ্ছে। এবারের বর্ষায় সিলেট ও সিলেটের উজানে ভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এমন হলে সিলেট আবারও বন্যায় তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
২০২২ সালের ভয়াবহ বন্যায় পুরো সিলেট তলিয়ে যাওয়ার পর দাবি ওঠে সিলেটের সুরমা নদী খননের। অব্যাহত দাবির মুখে ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে ৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে স্বল্পপরিসরে সিলেট নগরীর কুশিঘাট থেকে বিশ্বনাথের দশগ্রাম পর্যন্ত বিস্তৃত সুরমা নদীর ১৫ কিলোমিটারজুড়ে খননকাজ শুরু হয়।
ভারী বর্ষণে ডুবে গেছে নিম্নাঞ্চল
এদিকে গত এক সপ্তাহে সিলেটে ভারী বর্ষণ হয়েছে। সঙ্গে ছিল বজ্রগর্জন ও প্রবল ঝোড়ো হাওয়া। এতে সিলেটের নদ-নদীর পানি আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে নিম্নাঞ্চল ডুবেছে। সর্বশেষ গত শনিবার রাতভর বৃষ্টি হয়েছে।
সিলেট আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহ মো. সজিব হোসাইন জানান, গত শনিবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে গতকাল রবিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত সিলেটে ৩৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গ্রীষ্মকালে সিলেটে সুরমা নদী কানাইঘাট পয়েন্টে বিপদসীমা ১০ দশমিক ৮ সেন্টিমিটার। আর বর্ষা মৌসুমে বিপদসীমা ১৩ দশমিক ৭৫ মিটার। অথচ এই মৌসুমে গত শুক্রবারের হিসাবে ১১ দশমিক ১১ সেন্টিমিটারে পৌঁছেছে পানির স্তর। যা এই মৌসুমে সাধারণত হওয়ার কথা নয়।
প্রায় ২৪৯ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের সুরমা দেশের দীর্ঘতম নদী। ভারতের বরাক নদ থেকে সিলেটের জকিগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোণা ও কিশোরগঞ্জের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে মেঘনায় মিলিত হয়েছে এ নদী। পানিহীন ও মৃতপ্রায় এ নদীর শুধু সিলেট সদর উপজেলার আলমপুর থেকে দশগ্রাম পর্যন্ত খননকাজ চলছে।
খননের সুফল পাবে না সিলেটবাসী
পরিবেশকর্মীরা বলছেন, পাউবোর গাফিলতির কারণে নদীখননের পুরো টাকাই জলে যাচ্ছে। ১৫ মাসেও খননকাজ শেষ না হওয়ায় এর কোনো সুফল পাবে না সিলেটবাসী। কারণ আসন্ন বর্ষায় পানির সঙ্গে আবার পলি এসে জমবে নদীতে। ফলে আবার শুরু থেকে খননকাজ করতে হবে।
এদিকে পাউবো কর্মকর্তারা বলছেন, নদীতে প্লাস্টিক, পলিথিনসহ আবর্জনার স্তূপ জমে থাকায় বারবার খননযন্ত্র নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তাই খননকাজে দেরি হচ্ছে। আগামী জুনে প্রকল্পের পুরো কাজ সম্পন্নের আশা তাদের।
জানা যায়, ২০২২ সালের ভয়াবহ বন্যায় তলিয়ে যায় সিলেট নগরসহ জেলার প্রায় ৭০ শতাংশ এলাকা। ওই বন্যার সময় সিলেট বিভাগে ৮২ জনের প্রাণহাণির ঘটনা ঘটে। কেবল সিলেট জেলাতেই মারা যায় ৫১ জন। ক্ষয়ক্ষতি হয় অসংখ্য বাড়িঘর ও গবাদিপশুর। ক্ষতি হয় প্রায় সব সড়কের।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন, সিলেটের সাধারণ সম্পাদক আবদুল করিম কিম বলেন, ‘গত বছরের ২১ জানুয়ারি সুরমা নদীর খননকাজের উদ্বোধন করেছিলেন তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন এমপি। সে সময় তিনি বর্ষার আগেই খননকাজ শেষ হওয়ার আশ্বাস দেন। কিন্তু সেই বর্ষা শেষে হয়ে আরেক বর্ষা আসছে। অথচ কাজের অগ্রগতি খুব কমই হয়েছে। ধীরগতিতে এ খননকাজ চলছে।’ তিনি বলেন, ‘কেবল ১৫ কিলোমিটার নয়। পুরো সুরমা নদী খনন করতে হবে। না হলে সিলেটে বন্যা জলাবদ্ধতা কমবে না। কারণ পলি জমে পুরো নদী ভরাট হয়ে গেছে। উৎসমুখসহ নদীজুড়ে অসংখ্য চর পড়েছে। ফলে বর্ষায় বৃষ্টির পানি নদী দিয়ে নামতে পারে না। শহরে ঢুকে পড়ে।’
বন্যা ও জলাবদ্ধতার আশঙ্কা
খননকাজ যথাসময়ে শেষ না হওয়ায় আগামী বর্ষায় সিলেটে বন্যা ও জলাবদ্ধতার আশঙ্কা প্রকাশ করে বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোকাদ্দেস বাবুল বলেন, ‘সিলেটবাসী আশা করেছিল সুরমা নদী খননের মাধ্যমে নাব্যতা ফেরানো হবে। কিন্তু নদী খননের কাজ লক্ষ্যমাত্রা থেকে বহুদূরে। এবারও বন্যার কবলে পড়তে পারে সিলেট।’
এ ব্যাপারে সিলেট জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী মো. সেলিম জাহাঙ্গীর বলেন, ‘সিলেটে পানি উন্নয়ন বোর্ডের তদারকিতে সুরমা নদীতে খনন কার্যক্রম চলছে। প্রকল্পের প্রায় ৬০ শতাংশ হয়েছে। ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার মডেলিংয়ের নির্দেশনায় ২০২৩ সালের প্রথম দিকে সিলেটে সুরমা নদীতে খনন কার্যক্রম শুরু হয়। সিলেট সদর উপজেলার কুশিঘাট থেকে বিশ্বনাথ উপজেলার মাহতাবপুর এলাকার দশগ্রাম পর্যন্ত বিভিন্ন চর এলাকা চিহ্নিত করে খননকাজ চলছে। চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত এ কার্যক্রম চলবে। এ প্রকল্পের সবকিছু ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার মডেলিং দেখাশোনা করছে।