কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার) প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৫ মে ২০২৪ ১৮:৫০ পিএম
আপডেট : ০৫ মে ২০২৪ ২২:১৩ পিএম
অন্তঃসত্ত্বা শিল্পীর মরদেহ উদ্ধার করে মৌলভীবাজার জেলা হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছে পুলিশ। প্রবা ফটো
বিয়েবহির্ভূত সম্পর্কের সন্দেহে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে প্রবাসফেরত তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে গলা কেটে হত্যা করেছেন এক ব্যক্তি। এরপর রক্তমাখা দা নিয়ে নিজেই থানায় গিয়ে আত্মসমর্পণ করেন। পরে তাকে নিয়ে ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় অভিযুক্তকে হেফাজতে নেওয়ার পাশাপাশি জিজ্ঞাসাবাদের জন্য অভিযুক্তের বাবা-মাকে থানায় নিয়েছে পুলিশ।
রবিবার (৫ মে) বেলা ১১টার দিকে কমলগঞ্জ উপজেলার বাঘমারা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
হত্যার শিকার ওই নারীর নাম শিল্পী বেগম। শ্রীমঙ্গল উপজেলার ভাড়াউড়া রোডের মুক্তার মিয়ার মেয়ে তিনি। শনিবার রাতেই সৌদি আরব থেকে দেশে ফেরেন। আর পেশায় রঙমিস্ত্রি অভিযুক্ত স্বামী সফর আলী কমলগঞ্জ উপজেলার বাঘমারা গ্রামের কুদ্দুছ আলীর ছেলে।
কমলগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল আলম প্রতিদিনের বাংলাদেশকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
পুলিশ ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সফর আলী নারায়ণগঞ্জ শহরে থেকে রঙমিস্ত্রির কাজ করেন। ২০১৮ সালের মাঝামাঝি সময় প্রেম করে বিয়ে করেন শিল্পী বেগমকে। তাদের সংসারে পাঁচ বছরের এক পুত্রসন্তান রয়েছে। প্রায় পাঁচ মাস ধরে নানান বিষয় নিয়ে বনিবনা হচ্ছিল না তাদের মধ্যে। এমন পরিস্থিতিতে গত রোজার চার দিন আগে হেলাল নামে শ্রীমঙ্গলের এক দালালের মারফতে এজেন্সির মাধ্যমে স্বামীর অনুমতি ছাড়াই সৌদি আরব যান শিল্পী। দালাল হেলাল সম্পর্কে শিল্পীর চাচা।
বিষয়টি জানার পর স্ত্রীকে দেশে ফিরিয়ে আনতে দালালকে চাপ দিতে শুরু করেন সফর আলী। চাপে একপর্যায়ে দালাল টিকিটের টাকা পরিশোধ করে শিল্পীকে দেশে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করেন। শনিবার রাতে দেশে ফিরে রবিবার সকালে স্বামীর বাড়িতে ওঠেন শিল্পী। তখন সফর আলী জানতে পারেন শিল্পী তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা।
আটকের আগে সফরের মা সরুফা বেগম জানান, এ নিয়ে পার্শ্ববর্তী ইউপি সদস্য সোলেমান হোসেনের কাছে সফর আলী অভিযোগ নিয়ে গেলে তিনি সফর আলীর ওয়ার্ডের সদস্য আব্দুল মতিনকে বিষয়টি জানানোর পরামর্শ দিয়ে বলেন পরে বসে বিষয়টি দেখবেন। এরপর বিষয়টি নিয়ে ইউপি সদস্য আব্দুল মতিনের কাছে যাননি সফর আলী।
সরুফা বেগমের দাবি— এ নিয়ে অন্য এক সালিশ বিচারকের সঙ্গে কথা হলে ওই ব্যক্তি সফর আলীকে বলেন, ‘বউ কথা না হুনলে যাহ জব (জবাই) করিলা।’ তবে ওই সালিশ বিচারকের নাম বলেননি সফরের মা।
এরপর বাড়ি এসেই শিল্পীকে মারধর শুরু করেন সফর। মারধরের একপর্যায়ে দা দিয়ে গলা কেটে তাকে হত্যা করেন। এরপর রক্তমাখা দা হাতে নিয়ে নিজেই থানায় গিয়ে হাজির হন সফর।
থানায় পুলিশকে স্ত্রী হত্যার ঘটনার কথা জানিয়ে সফর দাবি করেন— দালাল হেলালের সঙ্গে ‘বিয়েবহির্ভূত সম্পর্কের’ ফলে শিল্পী অন্তঃসত্ত্বা হয়েছেন। তাই তাকে মেরে ফেলেছেন।
পরে কমলগঞ্জ থানার ওসি সাইফুল আলম ও ওসি (তদন্ত) আব্দুর রাজ্জাকের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে যায়। খবর পেয়ে সহকারী পুলিশ সুপার (শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ সার্কেল) আনিছুর রহমানও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
নিহত শিল্পীর ছোট বোন স্বপ্না বেগম প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘সকাল সাড়ে ১০টার দিকে আপা ফোনে নির্যাতনের কথা জানায়। এরপরই খবর মিলে তাকে খুন করা হয়েছে।’ এ সময় পাশেই বিলাপ করছিলেন শিল্পীর মা মিলন বেগম। এতে বাড়িতে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়।
এ ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন জানিয়ে কমলগঞ্জ থানার ওসি সাইফুল আলম বলেন, ‘লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মৌলভীবাজার জেলা হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। শিল্পীকে গলা কেটে হত্যা করা হলেও তার শরীরে আঘাতের চিহ্নও রয়েছে। তাই জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সফর আলীর বাবা কদ্দুস মিয়া ও মা সরুফা বেগমকে থানায় নিয়ে আসা হয়েছে।’
সহকারী পুলিশ সুপার আনিছুর রহমান বলেন, ‘আসামি পুলিশের হেফাজতে রয়েছে। ঘটনা তদন্তের জন্য পরিবারের অন্য সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদ করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’