বিস্ফোরণে বুশরার মৃত্যু
বগুড়া অফিস
প্রকাশ : ০৫ মে ২০২৪ ১৮:৩৫ পিএম
আপডেট : ০৬ মে ২০২৪ ০৮:৪৮ এএম
তাসনিম বুশরা। ছবি : সংগৃহীত
‘মেয়ের মৃত্যুর সংবাদে বুশরার মা বারবার জ্ঞান হারাচ্ছেন। একমাত্র সন্তানকে হারিয়ে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন। কোনো সান্ত্বনাতেই শোক কমছে না। পরে বাধ্য হয়ে ঘুমের ওষুধ দিয়ে ঘুম পাড়ানোর চেষ্টা করা হয় তাকে।’ কান্নাজড়িত কণ্ঠে কথাগুলো বলছিলেন নিহত বুশরার বড় ফুফু হোসনে আরা।
তিনি বলেন, ‘আমাদের মেয়ে বুশরা ক্লাস সেভেনে পড়লেও উচ্চতায় বেশ লম্বা ছিল। তাই একমাত্র সন্তানকে তারা পুলিশ বানাবে বলে স্বপ্ন দেখতেন। কিন্তু বুশরার মৃত্যুতে আমাদের সব শেষ হয়ে গেল। বাবা-মায়ের স্বপ্ন আর পূরণ হলো না। আমাদের কষ্টের কথা কাউকে বলতে পারছি না।’
২৮ এপ্রিল রাতে বগুড়া শহরের মালতিনগরের মোল্লাপাড়ায় একটি বসতবাড়িতে বিস্ফোরণের ঘটনায় গুরুতর আহত বুশরা শনিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে ঢাকার শেখ হাসিনা বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। এ সময় বুশরার সঙ্গে আরও তিনজন আহত হন। পরে এ ঘটনায় পুলিশ রেজাউলকে আসামি করে বিস্ফোরক আইনে মামলা করে এবং তাকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায়।
রবিবার (৫ মে) দুপুরে মালতীনগর বুশরাদের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, সেখানে কান্নার আহাজারি চলছে। বুশরার মায়ের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করলে তিনি বুশরা বুশরা বলে চিৎকার করে বারবার জ্ঞান হারাচ্ছেন।
তাসনিম বুশরা মালতীনগর উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণিতে পড়াশোনা করত। মালতীনগর হাই স্কুলে গিয়ে দেখা যায়, বুশরার শ্রেণিকক্ষে তার বসার বেঞ্চে কেউ বসেনি। তার সহপাঠী ও শিক্ষকরা বুশরার অকালে চলে যাওয়া মেনে নিতে পারছে না।
সহপাঠী অন্তরা আকতার বলেন, ‘‘বুশরার মন খারাপ থাকলেও কখনও বুঝতে দিত না। সব সময় হাসিখুশি থাকত সে। টিফিনে সবার সঙ্গে গল্প করে মাতিয়ে রাখত। বুশরার মৃত্যুতে আজ আমাদের সব ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। সর্বশেষ বুশরা আমাকে বলেছিল, ‘কাল স্কুলে তাড়াতাড়ি আসিস’। আমাকে তাড়াতাড়ি আসতে বলে সে আজ তাড়াতাড়ি না ফেরার দেশে চলে গেল।’’
সিনিয়র সহকারী শিক্ষক ছাবিয়া সুলতানা বলেন, ‘বুশরা অত্যন্ত ভদ্র আর মেধাবী শিক্ষার্থী ছিল। প্রতিদিন একই বেঞ্চে বসত। সে আহত হওয়ার খবর পেয়েই সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে ছুটে যাই। বুশরা আজ আমাদের মাঝে নেই। আজ ক্লাসে যেতেই কান্না লাগছে। আজ ক্লাসই করতে পারিনি। ওর বেঞ্চের দিকে তাকালেই বুক হু হু করে উঠছে।’
শফিকুল ইসলাম ফেরদৌস নামে এক প্রতিবেশী বলেন, ‘বুশরা যেদিন আহত হয় সেদিন হাসপাতালে তার বাবাকে বলছিল, চিন্তা করো না, কালেমা পাঠ করো আর আল্লাহর ওপর ভরসা রাখো। কিন্তু মেয়েটা আজ এভাবে অকালে চলে গেল। এর আগেই আতশবাজি বানানোর কাজে লিপ্ত থাকায় তিনজন মারা গেছে। এই আতশবাজি বানানো যদি বন্ধ না করা যায় আরও অনেক বুশরাকে আমাদের হারাতে হবে।’
জেলা পুলিশের মিডিয়া মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শরাফত ইসলাম বলেন, ‘বিস্ফোরণের পরে পুলিশ ওই বাড়ি থেকে সুতলি দিয়ে পেঁচানো ২৪০ পিস বিস্ফোরক দ্রব্য, বিস্ফোরক দ্রব্য তৈরির কাজে ব্যবহৃত ৪০ পিস ছোট ছোট কাগজ, পেঁচানো সুতলির পোঁটলা, একটি ভাঙা টিনের কৌটা এবং এক মাথা পোড়া একটি গ্যাস সিলিন্ডারের রেগুলেটর উদ্ধার করেছে। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে বিস্ফোরক আইনে মামলা করলে বাড়ির মালিক রেজাউলকে গ্রেপ্তার করা হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘এ ঘটনার পরের দিন সোমবার রাত সোয়া ৮টার দিকে ঢাকা থেকে বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটের আট সদস্যের একটি টিম আসে। তারা বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করে নিয়ে যায়।’