সুবল বড়ুয়া, চট্টগ্রাম
প্রকাশ : ০৫ মে ২০২৪ ১৪:৪৭ পিএম
আপডেট : ০৫ মে ২০২৪ ১৪:৫৭ পিএম
মুজিবুর রহমান ও আইনুল কবির। ছবি কোলাজ : প্রবা
চট্টগ্রামের আনোয়ারা ও বাঁশখালী উপজেলার সংযোগস্থলে তৈলারদ্বীপ সেতু। ৫২১ মিটার দীর্ঘ সাঙ্গু নদের ওপর গড়ে ওঠা এই তৈলারদ্বীপ সেতু পারাপারে সরকার নির্ধারিত দেড় থেকে দ্বিগুণেরও বেশি টোল আদায় করা হচ্ছিল। গাড়িচালক ও যাত্রীদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বাড়তি টোল আদায় বন্ধে উদ্যোগ নেন বাঁশখালীর সংসদ সদস্য মুজিবুর রহমান সিআইপি। বাড়তি টোল আদায় বন্ধের এই উদ্যোগ নিয়েই সেতু ইজারাদারের পক্ষের লোকজনের রোষানলে পড়েছেন মুজিবুর রহমান। এ সংক্রান্ত একটি অডিও ক্লিপ এই প্রতিবেদকের হাতে এসেছে।
অডিও ক্লিপে বলতে শোনা যায়- ‘এমপির কাজ কি এসব। আরও অনেক এমপি ছিল। নদভী ছিল, মোস্তাফিজ মিয়া ছিল, চকরিয়ার এমপি ছিল। সবাই তো এই রোড দিয়ে যায়। আনোয়ারার এমপিও যায়। কারোর তো আওয়াজ নাই। শুধু কি এই এমপি (মুজিবুর রহমান) আছে? বলদের কেতাপুরি। বলদকে বলো আমার সঙ্গে খেলা খেলতে। দেখি কী রকম খেলোয়াড় সে।’ এ সময় বাঁশখালী উপজেলার লোকজনকে নিয়ে আরও অশালীন কিছু মন্তব্য করতে শোনা যায়।
জানা যায়, ভাইরাল হওয়া অডিও ক্লিপটি তৈলারদ্বীপ সেতুর ইজারাদার জহির উদ্দিনের মামা আইনুল কবিরের। আইনুল, চন্দনাইশ পৌরসভা এলডিপির সভাপতি। মূলত জহির উদ্দিনের মালিকানাধীন জেএ ট্রেডিং নামের এই লাইন্সেসে তিন অর্থবছরের (২০২৩-২০২৬ সাল) জন্য প্রায় ৩২ কোটি টাকায় তৈলারদ্বীপ সেতু ইজারা নিয়েছেন এলডিপি নেতা আইনুল কবির।
ভাইরাল হওয়া অডিও ক্লিপে বাঁশখালীর সংসদ সদস্যকে নিয়ে বিরূপ মন্তব্যের বিষয়ে বক্তব্য জানতে একাধিকবার ফোন করা হলে তিনি রিসিভ করেননি।
জানা যায়, চট্টগ্রামের বাঁশখালী-আনোয়ারার সংযোগস্থল তৈলারদ্বীপ সেতু পারাপারে ১৩ ধরনের গাড়ি থেকে টোল আদায়ের সরকারি হার নির্ধারণ করা রয়েছে। তবে ইজারাদার তা মানছে না। মাইক্রোবাস, প্রাইভেট কার, মিনি পিকআপ, মিডিয়াম ট্রাক ও হেভিওয়েট ট্রাকশ্রেণির যানবাহন থেকে নির্ধারিত টোলের চেয়ে দেড় থেকে দুই বাড়তি টোল আদায় করা হয়।
এমনকি সড়ক ও জনপথ দক্ষিণ বিভাগের সঙ্গে ইজারাদার প্রতিষ্ঠানের চুক্তির শর্তাবলিতে নির্ধারিত হারে টোল আদায়ের রসিদ ছাপানোর কথা বলা হলেও বাড়তি টাকা লিখে রসিদ ছাপানো হয়েছে। ট্রেইলার-জাতীয় যানবাহন প্রতিবার সেতু পারাপারে ৩০০ টাকা নির্ধারণ থাকলেও ৫০০ টাকা নেওয়া হচ্ছে। একইভাবে হেভিওয়েট ট্রাক পারাপারে ১৮০ টাকার স্থলে নেওয়া হচ্ছে ৩০০ টাকা। মাঝারি ট্রাকে ১৫০ টাকার স্থলে নেওয়া হচ্ছে ৩০০ টাকা। মাইক্রোবাসে ৬০ টাকার স্থলে ৮০ টাকা, প্রাইভেট কার ৪০ টাকার স্থলে ৫০ টাকা আদায় করা হচ্ছে। এসব নিয়ে ওই সড়কে চলাচল করা গাড়ি মালিক, চালক এবং যাত্রীদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। এই গলাকাটা টোল আদায় বন্ধে অনেক গাড়ির মালিক ও চালক বাঁশখালীর এমপি মুজিবুর রহমানের দ্বারস্থ হন।
তবে বাঁশখালীর এমপি মুজিবুর রহমান সিআইপি বলেন, ‘ভালো কাজ করতে গেলে অনেকে অনেক কথা বলবে। ইজারাদারকে সরকার নির্ধারিত টোলের বেশি না নিতে বলায় আমার ওপর ক্ষিপ্ত হয়েছে। তারা জুলুম করে বাড়তি টোল আদায় করছে। এই সেতুর টোল আমাদের জন্য অভিশাপ। সাঙ্গু নদের ওপর বান্দরবান, দোহাজারী, খোদারহাটে আরও তিনটি সেতু থাকলেও তৈলারদ্বীপ ছাড়া বাকিগুলো থেকে টোল নেওয়া হয় না। অথচ দোহাজারী সেতু তৈলারদ্বীপের চেয়ে বড়। এই সেতুর টোল বাঁশখালীর মানুষের ওপর আর্থিক চাপ সৃষ্টি করছে। এই তৈলারদ্বীপ সেতুর টোল মওকুফ হলে লবণ, মৎস্য ও কৃষি আয়ে ভারসাম্য ফিরবে। মানুষের যাতায়াত খরচ কমবে। বিষয়টির প্রতি মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করব।’