× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

ঠাকুরগাঁওয়ে ৪ হাজার গাছ কাটছে বন বিভাগ!

রহিম শুভ, ঠাকুরগাঁও

প্রকাশ : ০৫ মে ২০২৪ ১৪:৪১ পিএম

ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার পাড়িয়া ও ধানতলা ইউনিয়নের ৭৪ কিলোমিটার রাস্তার পাশে বিশাল আকৃতির গাছগুলোর গায়ে সিরিয়াল নম্বর দেওয়া হয়েছে কাটার জন্য। শনিবার দুপুরে। প্রবা ফটো

ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার পাড়িয়া ও ধানতলা ইউনিয়নের ৭৪ কিলোমিটার রাস্তার পাশে বিশাল আকৃতির গাছগুলোর গায়ে সিরিয়াল নম্বর দেওয়া হয়েছে কাটার জন্য। শনিবার দুপুরে। প্রবা ফটো

সারা দেশের মানুষ যখন তাপদাহে বিপর্যস্ত, দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রতিদিনই প্রার্থনা হচ্ছে বৃষ্টির জন্য, জেলা শহর ঠাকুরগাঁওয়ে তখন উল্টো পথে হাঁটছে প্রশাসন। জেলার ধনতলা ও পাড়িয়া ইউনিয়নের ৩৭ কিলোমিটার দীর্ঘ রাস্তার দুপাশ থেকে দরপত্রের মাধ্যমে ৪ হাজার গাছ কাটতে শুরু করেছে স্থানীয় বন বিভাগ। তীব্র তাপপ্রবাহের মধ্যেই জেলা বন বিভাগের এমন অপ্রত্যাশিত তৎপরতায় ক্ষোভ দেখা দিয়েছে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে। 

প্রসঙ্গত গত বছরও ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার বড়বাড়ী, আমজানখোর ও চাড়োল ইউনিয়নের  প্রায় ৪০ কিলোমিটার রাস্তায় বেড়ে ওঠা ৫ হাজার গাছ কেটে ফেলা হয়। এরপর সেখানকার মাত্র ৮ কিলোমিটার রাস্তায় নতুন গাছ লাগানো হয়েছে। বাকি ৩২ কিলোমিটার রাস্তায় গাছ লাগানোর কোনো অগ্রগতি দেখা যায়নি। 

জেলা বন বিভাগ বলছে, নিয়ম অনুযায়ী আয়তনের তুলনায় ২৫ ভাগ বনভূমি থাকার কথা থাকলেও ঠাকুরগাঁওয়ে রয়েছে দুই ভাগের কম বনভূমি। এমন সংকটজনক সময়ে এসব গাছপালা কেটে ফেলা হলে পরিবেশের আরও অবনতি ঘটবে। কিন্তু সবকিছু জানার পরও গত এপ্রিল মাসে ৮ ইউনিয়নে রাস্তায় থাকা অবশিষ্ট গাছ কেটে ফেলার লক্ষ্যে দরপত্র দিয়েছে বন বিভাগ। দুটি ইউনিয়নে গাছ কাটা শুরুও হয়েছে। 

ইতোমধ্যেই কাটা পড়েছে ৫ শতাধিক গাছ

সরেজমিনে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলায় দেখা যায়, দরপত্র পাওয়া দিনাজপুরের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ করা শ্রমিকরা রাস্তার গাছ কাটছেন। 

গাছ কাটায় নিয়োজিত শ্রমিক নাইম ইসলাম বলেন, ‘বেশ কয়েক দিন ধরে আমরা ১১ জন গাছ কাটছি। দরপত্রের কার্যাদেশ অনুযায়ী ৪ হাজার গাছ কাটব আমরা। এই পর্যন্ত ৫ শতাধিক গাছ কাটা হয়েছে।’ 

বন বিভাগের আহ্বান করা দরপত্র অনুযায়ী, বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার পাড়িয়া ইউনিয়নের লোহাগাড়া থেকে তিলকরা সরাকন্দি পর্যন্ত ৫ কিলোমিটার ও ধনতলা ইউনিয়নের পাঁচপীর থেকে ফুটানী হাট পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার, তিলময় বাবুর বাড়ি থেকে এনামুল চেয়ারম্যানের বাড়ি হয়ে বাহার জিলা পর্যন্ত ৫ কিলোমিটার ও সিন্দুরপিণ্ডি থেকে খোঁচাবাড়ী হয়ে তীরনই নদীর শেষ সীমানা, দলুয়া থেকে পান্তা ভিটা পর্যন্ত ১৫ কিলোমিটারসহ ৩৭ কিলোমিটার রাস্তার পাশের বড় বড় গাছের কাণ্ডে কেটে ফেলার লক্ষ্যে সিরিয়াল নম্বর দেওয়া হয়েছে। এসব গাছে পাখির বাসাও দেখা গেছে। 

সাধারণ মানুষজনের প্রতিক্রিয়া

এ প্রসঙ্গে পাড়িয়া ইউনিয়নের কৃষক সুদেব বর্মণ বলেন, ‘আমরা সারা দিন মাঠে কাজ করি। এই খরার মৌসুমে রাস্তার গাছগুলোর ছায়ায় একটু আরাম করে শরীর ঠান্ডা করি। কিন্তু শুনছি, এই গাছগুলো কেটে ফেলা হবে। তখন জিরানোর মতো আর কোনো জায়গা থাকবে না আমাদের।’

মশালডাঙ্গী গ্রামের কৃষ্ণ রায় মাঠে কাজ করে গাছের ছায়ায় বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। তিনি জানান, রাস্তার ধারে থাকা গাছগুলোর ছায়ায় কৃষক ও শ্রমজীবী মানুষজন কাজের ফাঁকে বিশ্রাম নেয়। এ তীব্র তাপদাহের মধ্যে রাস্তার দুপাশের বিশাল বিশাল গাছগুলো কাটা হলে মরুভূমিতে পরিণত হবে এলাকাটি। তাই এলাকাবাসীর দাবি, অন্তত এই সময়ে যেন কোনো গাছ কাটা না হয়। 

পথচারী আব্দুস সালাম জানান, এখন গাছ কাটলে প্রচণ্ড রোদে মানুষসহ প্রাণিকুলের অবস্থাও খারাপ হতে পারে।

পাড়িয়া ইউনিয়নের সপ্তম শ্রেণিতে পড়ুয়া স্কুলছাত্র আকাশ বলে, ‘গরমের কারণে অনেক দিন আমাদের স্কুল বন্ধ রয়েছে। এখন আবার স্কুল খোলা। বাড়ি থেকে স্কুল সাত কিলোমিটার দূরে। গাছগুলোর জন্য মাথার ওপর ছাতা না থাকলেও আরামে স্কুলে যাতায়াত করতাম আমরা।’ 

সনগাঁও গ্রামের শিক্ষক আব্দুল মান্নান বলেন, ‘রাস্তার পাশের গাছগুলো এখন যেমন মানুষের জন্য, তেমনই পশুপাখিদের জন্যও প্রয়োজন। অনেক পাখি গাছগুলোতে বাসা বানিয়ে ডিমও দিয়েছে। প্রচণ্ড তাপদাহের সময় এই পাখিগুলো কোথায় যাবে, তা কী আর কেউ ভাবছেন?’ 

পাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য আইয়ুব আলী বলেন, ‘দরপত্র হয়েছে, ঠিকাদার গাছ কাটবে। এতে বাধা দেওয়ার সুযোগ নেই। তবে গ্রামবাসীর দাবি, গরমের দিনগুলো পার করে গাছ কাটা হোক। এটা নিয়ে উপজেলা প্রশাসন এবং বন বিভাগকে প্রয়োজনে লিখিত আকারে জানাব আমরা।’

কর্মকর্তাদের ভাষ্য 

ঠাকুরগাঁও বন বিভাগের বন কর্মকর্তা শফিউল আলম মণ্ডল বলেন, ‘গাছগুলো কাটার উপযোগী এবং যারা লাগিয়েছেন তাদের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে দরপত্র আহ্বান করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কাটার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।’ 

বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আফছানা কাওছার বলেন, ‘পরিস্থিতি বিবেচনায় গাছগুলো কাটা বন্ধ রাখার জন্য ঠিকাদার ও বন বিভাগকে জানিয়েছি। তাপদাহ কমে গেলে দরপত্র অনুযায়ী ঠিকাদার কাটবেন।’ 

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা