উপজেলা নির্বাচন: হলফনামা
মেরিনা লাভলী, রংপুর
প্রকাশ : ০৫ মে ২০২৪ ০০:৪৯ এএম
আপডেট : ০৫ মে ২০২৪ ০০:৫৮ এএম
আনোয়ারুল ইসলাম মায়া (বামে) এবং আব্দুর রাজ্জাক (ডানে)। কোলাজ প্রবা
বিড়ি শিল্পের রাজধানী খ্যাত রংপুরের কাউনিয়ায় জমে উঠেছে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। এবার চেয়ারম্যান পদে বর্তমান চেয়ারম্যান আনোয়ারুল ইসলাম মায়ার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমেছেন বর্তমান পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক। হাতে হাত রেখে গেল বার তারা নির্বাচনের বৈতরনী পার করলেও এবার তারা ভোটের মাঠে একে অপরের কঠিন প্রতিপক্ষ। এ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে তিনজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও মাঠ জরিপে মায়ার মূল প্রতিদ্বন্দ্বি রাজ্জাক।
কাউনিয়ায় প্রভাব বিস্তার নিয়ে দুই পক্ষের সংঘর্ষে আওয়ামী লীগ কর্মী সোনা মিয়া নিহত হওয়ার পর থেকে তাদের সম্পর্কের তিক্ততা প্রকট আকার ধারণ করেছে। তবে প্রচারণার মাঠে দুজনই বেশ সক্রিয়। এ নির্বাচনে শিল্পপতি মায়ার সঙ্গে লড়াই করা ব্যবসায়ী রাজ্জাককে নির্বাচনে জয়ের জন্য বেশ বেগ পেতে হবে বলে মনে করছেন সচেতন ভোটাররা। নির্বাচনী মাঠে জনপ্রিয়তা ও সম্পদে কে এগিয়ে রয়েছে এনিয়ে জোর আলোচনা চলছে সবর্ত্রই।
উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রদান করা হলফনামা সূত্রে জানা যায়, কাউনিয়া পৌরসভা এলাকার মায়াবাজার গ্রামের মাহবুবার রহমানের ছেলে আনোয়ারুল ইসলাম মায়া। তিনি এসএসসি পাশ। তার বিরুদ্ধে থাকা দুটি মামলার মধ্যে একটি বিচারাধীন এবং একটি তদন্তাধীন রয়েছে। আনোয়ারুল ইসলামের আমদানী ও সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান অপূর্ব ট্রেডার্স, মায়া বিড়ি ফ্যাক্টরি ও মায়া গুল, মায়া এগ্রো প্রসেসিং কোম্পানী লিমিটেড, মহুবর রহমান পার্টিক্যাল মিলস প্রাইভেট লিমিটেড, মহুবর রহমান কোল্ড স্টোরেজ লি., জেলেমা রহমান কোল্ড স্টোরেজ প্রাইভেট লি., মায়া পেপার এন্ড বোর্ড মিলস লিমিটেড নামে প্রতিষ্ঠান রয়েছে। তিনি বাৎসরিক কৃষিখাতে ৩ লাখ ২ হাজার ৪৬০ টাকা, ব্যবসা থেকে ২ কোটি ৭০ লাখ ৩৯ হাজার ৫৪ টাকা, সম্মানী ভাতা ৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা আয় করেন। তার অস্থাবর সম্পদের মধ্যে নিজ নামে নগদ ১ কোটি ৭৪ লাখ ৫৯ হাজার ৩৮৩ টাকা এবং স্ত্রীর নামে ১ কোটি ৮০ লাখ ৯ হাজার ২৭ টাকা।
এছাড়াও নিজ নামে বন্ড, ঋণপত্র, স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভূক্ত ও তালিকাভুক্ত নয় কোম্পানির শেয়ার রয়েছে ৪ কোটি ১৯ লাখ টাকা, স্ত্রীর নামে ৪০ লাখ টাকা। ৬০ লাখ টাকা মূল্যের তার বাস, ট্রাক, মটরগাড়ি, মটরসাইকেল রয়েছে। নিজ নামে স্বর্ণালংঙ্কার রয়েছে ১ লাখ ১’শ টাকার। এছাড়া তার শিল্পপ্রতিষ্ঠানের ব্যবসায়িক মূলধন রয়েছে নিজ নামে ১১ কোটি ৮ লাখ ২৮ হাজার ৬১৫ টাকা এবং স্ত্রীর নামে ২ কোটি ৮ লাখ ১২ হাজার ৬০৮ টাকা। স্থাবর সম্পদের মধ্যে ১ কোটি ৭৬ লাখ ৪ হাজার ২০ টাকা মূল্যের ৫১ দশমিক ৬৭ একর কৃষি জমি, ২ কোটি ৬৭ লাখ ৮১ হাজার ৬শ টাকা মূল্যের অকৃষি জমি রয়েছে।
অপরদিকে আনোয়ারুল ইসলাম মায়ার দায়-দেনা রয়েছে মহুবর রহমান পার্টিক্যাল মিলসের নামে ৩০ কোটি ৫ লাখ ৬৯ হাজার ১৭১ টাকা, মায়া এগ্রো প্রসেসিং কোম্পানির নামে ৮ কোটি ৪১ লাখ ৬৩ হাজার ১২৪ টাকা, মহুবর রহমান কোল্ড স্টোরেজের নামে ৫ কোটি ৭০ লাখ ৭৭ হাজার, মায়া পেপার এন্ড বোর্ড মিলসের নামে ৩৭ কোটি ৯৫ লাখ ৬৩ হাজার ৩১৪ টাকা, আইপিডিসি ফাইন্যান্স থেকে ১ কোটি ২৮ লাখ ৬০ হাজার ৩৮৬ টাকা, জেলেমা রহমান কোল্ড স্টোরেজের নামে ৫ কোটি ৬৩ লাখ ৯৩ হাজার ৫’শ টাকা।
এদিকে কাউনিয়া উপজেলার হারাগাছ পৌরসভার ঠাকুরদাস ধুমের আগার গ্রামের নবিবর রহমানের ছেলে আব্দুর রাজ্জাক। তিনি এইচএসসি পাশ। তার নামে দুটি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। তার বাৎসরিক আয় ব্যবসা থেকে ৭ লাখ ৬৭ হাজার ৩৩৩ টাকা, সম্মানীভাতা ২ লাখ ১৬ হাজার, মূলধনী আয় ১ লাখ ৯১ হাজার ৬৬৭ টাকা। আব্দুর রাজ্জাকের অস্থাবর সম্পদের মধ্যে নগদ টাকা ৮০ হাজার টাকা, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমাকৃত অর্থ ৫০ হাজার টাকা। তার ১২ লাখ ৯৩ হাজার টাকা মূল্যের একটি প্রাইভেট কার রয়েছে। সেই সঙ্গে স্ত্রীর নামে ৩ ভরি স্বর্ণালংকার রয়েছে। আব্দুর রাজ্জাকের স্থাবর সম্পদের মধ্যে নিজ নামে ৫০ দশমিক ৭০ শতাংশ কৃষি জমি, ১০২ শতাংশ অকৃষি জমি, দেড় লাখ টাকা মূল্যের একটি আধাপাকা বাড়ি রয়েছে। তার কোন দায়-দেনা নেই।
আগামী ৮ মে প্রথম ধাপে পীরগাছা ও কাউনিয়া উপজেলায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। একটি পৌরসভা, ৬টি ইউনিয়ন নিয়ে কাউনিয়া উপজেলায় দুই হিজড়াসহ মোট ভোটার ২ লাখ ৪ হাজার ৫৪৩ জন, ৯টি ইউনিয়ন নিয়ে পীরগাছা উপজেলায় তিন হিজড়াসহ ২ লাখ ৮১ হাজার ৬৯৮ জন ভোটার রয়েছে।