দিনাজপুর
দিনাজপুর প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৪ মে ২০২৪ ১৮:৪১ পিএম
আপডেট : ০৪ মে ২০২৪ ২২:১০ পিএম
দেশের আলোচিত চাঞ্চল্যকর ধর্ষণ ও হত্যার শিকার কিশোরী ইয়াসমিনের মা শরিফা বেগমের অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। দাফনের আগে পুলিশ নিহতের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠিয়েছে।
গত ৩ মে, শুক্রবার রাতে দিনাজপুর শহরের গোলাপবাগ এলাকার নিজ বাসা থেকে শরিফা বেগমের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এরপর লাশের সুরতহাল শেষে পাঠানো হয়েছে দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিক্যাল কলেজ মর্গে। এর আগে ওইদিন দুপুরে নিজ বাসায় তার অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়। নিহতের মাথায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
শরিফা বেগমের মরদেহ মর্গে পাঠানোর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দিনাজপুরের পুলিশ সুপার শাহ ইফতেখার আহমেদ। দিনাজপুর শহরের গোলাপবাগ লেবুর মোড় এলাকায় দ্বিতীয় স্বামী ডাবলু রহমান ও এক সন্তানসহ বসবাস করতেন ইয়াসমিনের মা শরিফা বেগম। শরিফা বেগমের স্বামী ডাবলু রহমান স্ত্রীর মৃত্যুর বিষয়ে স্থানীয়দের জানান, শুক্রবার সকাল থেকে কয়েকবার পাতলা পায়খানা ও বমি হয় শরিফার। দুপুরে ওষুধ আনার আগেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন তিনি।
এদিকে লাশ গোসল করানোর পরও মরদেহের মাথা দিয়ে রক্ত পড়ায় এলাকাবাসীর মনে সন্দেহ জাগে। শরিফা বেগমের মরদেহ গোসল করানোর কাজে অংশ নেয়া হামিদা বেগম বলেন, ‘তার মাথার পেছন দিকে দিয়ে আঘাতজনিত কারণে রক্ত পড়ছিল। অনেক চেষ্টা করেও তা বন্ধ করা যায়নি। শরিফার স্বামী জানিয়েছেন, বাথরুমে পড়ে গিয়ে নাকি মাথায় আঘাত পেয়েছে, তাই রক্তক্ষরণ হচ্ছে।’
স্থানীয় কয়েকজন নারী জানান, কয়েকদিন ধরে শরিফা বেগম শারীরিকভাবে অসুস্থ ছিলেন। বৃহস্পতিবার রাতে স্বামীসহ বাথরুমে গেলে পা পিছলে পড়ে যান। এ সময় স্বামী তাকে ধরতে গেলে দুজনই মেঝেতে পড়ে যান। এতে মাথায় আঘাত পান শরিফা, তার স্বামীও বাম হাতে আঘাত পান। এ সময় তাদের ছেলে গিয়ে উদ্ধার করেন। শরিফার মাথা ও শরীরের বিভিন্ন স্থান ভালো করে দেখলেও আঘাতের কোনও চিহ্ন পাওয়া যায়নি। বাড়িতে স্বজনদের উপস্থিতিতে শুক্রবার সকালে নাস্তা ও ওষুধ খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েন শরিফা বেগম। দুপুরে ঘুমের মধ্যে তিনি মারা যান। পরে পরিবারের স্বজনরা এসে দাফনের কাজ শুরু করেন। পরে রক্ত দেখতে পেয়ে পুলিশে খবর দেওয়া হয়।
দিনাজপুরের পুলিশ সুপার শাহ ইফতেখার আহমেদ বলেন, শুক্রবার সন্ধ্যায় জানাজার আগে নিহতের মাথার পেছন থেকে রক্ত বের হতে দেখেন স্থানীয়রা। পরে খবর পেয়ে পুলিশ নিহতের মরদেহের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠায়। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট এলে তার মৃত্যুর বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যাবে। এ বিষয়ে এখনই কোনও মন্তব্য করতে চাই না।’
দিনাজপুর পৌরসভার এক নাম্বার ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জুলফিকার আলী স্বপন বলেন, আজ সকালে আমার বাসায় এসেছিলেন ডাবলু রহমান। তিনি এ বিষয়ে আমার সাহায্য চান। তাকে বলেছি, পুলিশের বিষয়ে আমার এখানে কিছু করার নেই।
১৯৯৫ সালের ২৪ আগস্ট একদল বিপথগামী পুলিশের দ্বারা ধর্ষণ ও হত্যার শিকার হন কিশোরী ইয়াসমিন। এই ঘটনায় বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে দিনাজপুর। বিক্ষোভের এক পর্যায়ের ২৭ আগস্ট পুলিশের গুলিতে ৭ জন নিহত হয়। বিষয়টি দেশজুড়ে বেশ আলোচনা তৈরি করে। পরবর্তীতে কিশোরী ইয়াসমিন ধর্ষণ ও হত্যা মামলায় দিনাজপুর কোতোয়ালি পুলিশের তৎকালীন এএসআই ময়নুল ইসলাম, কনস্টেবল আব্দুস সাত্তার ও গাড়িচালক অমৃত লালের ফাঁসি কার্যকর হয়। এ ঘটনার পর থেকে ইয়াসমিন নারী নির্যাতন প্রতিরোধের প্রতীক হয়ে ওঠেন। ২৪ আগস্টকে ঘোষণা করা হয় ইয়াসমিন ট্রাজেডি এবং নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস হিসেবে।