ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৪ মে ২০২৪ ১৭:০১ পিএম
গ্রিল চুরির পর ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে স্মৃতিস্তম্ভটি। প্রবা ফটো
পাকিস্তানি সেনাদের পুঁতে রাখা মাইন বিস্ফোরণে শহীদ হয়েছিলেন ভারতীয় মিত্রবাহিনীর একজন ক্যাপ্টেনসহ পাঁচ সেনাসদস্য। তাদের স্মরণে দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে নির্মিত হয়েছে স্মৃতিস্তম্ভ। স্তম্ভটি ঘিরে চারপাশে দেওয়া হয়েছিল তিন ফিট উচ্চতার প্রাচীর। আর সেই প্রাচীরে ছিল লোহার গ্রিল। সম্প্রতি স্মৃতিস্তম্ভটির প্রাচীরে থাকা লোহার গ্রিল চুরি হয়ে গেছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, অযত্ন-অবহেলা ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ফুলবাড়ী সরকারি কলেজের পেছনে ছোট যমুনার তীরে নির্মিত স্মৃতিস্তম্ভটি থেকে এ চুরির ঘটনা ঘটেছে।
স্থানীয়রা জানান, গত ২৯ এপ্রিল রাতের আঁধারে কে বা কারা স্মৃতিস্তম্ভের প্রাচীর ও ইটের পিলার ভেঙে লোহার গ্রিল চুরি করে। এতে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে স্মৃতিস্তম্ভটি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৯ সালে অধ্যাপক নজমুল হক ফুলবাড়ী সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ থাকাকালীন অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে থাকা স্মৃতিস্তম্ভটি সংস্কার করে ইটের দেয়াল ও পিলারসহ লোহার গ্রিল দিয়ে সংরক্ষণ করেন। পরে স্থানীয়ভাবে গড়ে ওঠা সামাজিক সংগঠন ‘আমরা করব জয়’-এর সদস্যরা সেটি সংস্কার করেন। পরে সচেতনতামূলক ও স্মৃতিস্তম্ভের তাৎপর্য তুলে ধরে সাইনবোর্ড টানিয়ে দেয়। গত বছরের ১০ ডিসেম্বর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে মুক্তিযোদ্ধাসহ বিভিন্ন সংগঠন।
আমরা করব জয় সংগঠনের সভাপতি প্লাবন শুভ বলেন, স্মৃতিস্তম্ভের লোহার গ্রিল চুরি গেছে। ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক ও লজ্জার বিষয়। গত বছর আশপাশের এলাকা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে ১০ ডিসেম্বর ১৯৭১-এর শহীদ ভারতীয় মিত্রবাহিনীর স্মৃতিস্তম্ভে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ও আমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করা হয়। আমরা এমন জাতি, যারা দেশের জন্য আত্মত্যাগ করে গেল তাদের স্মৃতিস্তম্ভের লোহাও চুরি করি। এটি জাতির জন্য লজ্জার বিষয়।
উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার এছার উদ্দিন বলেন, এটি একটি নিন্দনীয় ঘটনা। শহীদদের স্মৃতিস্তম্ভের লোহার গ্রিল চুরির ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের অবশ্যই আইনের আওতায় আনতে হবে। ফুলবাড়ী সরকারি কলেজের উপাধ্যক্ষ মো. আহসান হাবীব ডিজু বলেন, ‘কে বা কারা গত সোমবার রাতে স্মৃতিস্তম্ভের লোহার গ্রিল চুরি করে নিয়ে গেছে। এ ব্যাপারে থানায় অভিযোগ দেওয়ার প্রস্তুতি চলছে। স্মৃতিস্তম্ভটি পুনরায় সংস্কার করে সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হবে।’
ফুলবাড়ী থানার ওসি মোস্তাফিজার রহমান বলেন, ‘বিষয়টি জানা নেই। কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মীর মো. আল কামাহ্ তমাল বলেন, ‘এমন কোনো তথ্য জানা নেই। তবে অধ্যক্ষের সঙ্গে কথা বলে থানায় জিডি করা হবে।’
মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ১৯৭১ সালে ৪ ডিসেম্বর হানাদারমুক্ত হওয়ার পর ফুলবাড়ীর নিয়ন্ত্রণ নেন বীর মুক্তিযোদ্ধাসহ ভারতীয় মিত্রবাহিনীর সেনাসদস্যরা। ১০ ডিসেম্বর ভারতীয় সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন অশোক কুমার ক্ষেরের নেতৃত্বে পাঁচজন সদস্য জিপ গাড়িতে টহল দেওয়ার সময় পাকিস্তানি খানসেনাদের পুঁতে রাখা মাইন বিস্ফোরণে গাড়িটি ওড়ে যায়। এতে মিত্রবাহিনীর ওই ক্যাপ্টেনসহ পাঁচ সেনাসদস্য ঘটনাস্থলেই নিহত হন। ফুলবাড়ী সরকারি কলেজের পূর্বপ্রান্তে ছোট যমুনা নদীর পশ্চিমতীরে তাদের শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়।
পরে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতায় সেখানে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়। দীর্ঘদিন পর হলেও কলেজের তৎকালীন অধ্যক্ষ নজমুল হকের প্রচেষ্টায় স্মৃতিস্তম্ভটি সংস্কার করে ইট দিয়ে প্রাচীর নির্মাণ করা হয়। দেওয়া হয় লোহার অ্যাঙ্গেলের গ্রিল। এরপর থেকে বিভিন্ন সংগঠন ও ব্যক্তিবিশেষের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করা হয়।