× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

মেপে পানি পান করতে হয় যে উপজেলার বাসিন্দাদের

রাসেল মাহমুদ, বরগুনা

প্রকাশ : ০৪ মে ২০২৪ ১৬:৪৭ পিএম

আপডেট : ০৪ মে ২০২৪ ১৬:৪৯ পিএম

জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব এবং লবণাক্ততা বৃদ্ধিসহ বরগুনার পাথরঘাটায় চলছে সুপেয় পানির তীব্র সংকট। প্রবা ফটো

জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব এবং লবণাক্ততা বৃদ্ধিসহ বরগুনার পাথরঘাটায় চলছে সুপেয় পানির তীব্র সংকট। প্রবা ফটো

বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের তীরবর্তী ৩৮৭ বর্গকিলোমিটার আয়তনবিশিষ্ট বিশাল জলরাশি। যার তিন দিকেই রয়েছে বড় নদী। চারদিকে অথই জলরাশি। তবুও সুপেয় পানির তীব্র সংকটে ভুগছেন উপজেলার প্রায় তিন লাখ মানুষ। 

চলমান তীব্র দাবদাহ, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব এবং লবণাক্ততা বৃদ্ধিসহ বরগুনার পাথরঘাটায় চলছে সুপেয় পানির তীব্র সংকট। প্রতিদিন পানির চাহিদা বাড়লেও বাড়ছে না সুপেয় পানির পরিমাণ। পানির উৎস পুকুর, দিঘি, জলাশয়, নদনদী, খাল-বিল শুকিয়ে হ্রাস পাচ্ছে নিরাপদ পানির চাহিদা। ফলে বাধ্য হয়ে স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে অনেকেই অতিমাত্রায় লবণ ও কাদাযুক্ত পুকুরের পানি পান করে আক্রান্ত হচ্ছেন ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন জটিল রোগে।

সাগর মোহনায় পাথরঘাটা উপজেলার চারদিক ঘিরে বিভিন্ন নদনদীসহ পানির পর্যাপ্ত উৎস থাকলেও সুপেয় পানির নেই তেমন কোনো ব্যবস্থা। এ উপজেলার প্রায় ২৫ থেকে ৩০টি এলাকায় রয়েছে সুপেয় পানির তীব্র সংকট। এ ছাড়া এ উপজেলায় প্রায় ১৫ থেকে ২০টি এলাকায় রয়েছে মাঝারি ধরনের পানির সংকট। স্বাভাবিকভাবে পানিতে লবণের মাত্রা ৬০০ পিপিএম (প্রতি মিলিয়ন অংশ) পর্যন্ত থাকলে সে পানি খাবার উপযোগী ধরা হয়। তবে পাথরঘাটার ভূগর্ভস্থ পানিতে লবণের মাত্রা রয়েছে প্রায় ৩ হাজার পিপিএম পর্যন্ত। এতে বিশুদ্ধ ও সুপেয় পানি পেতে গভীর নলকূপ বসালেও লবণাক্ততার কারণে নলকূপগুলো কোনো কাজেই আসছে না। এ ছাড়া অনেক এলাকায় নলকূপ  

বসালেও কাদাযুক্ত পানি ওঠায় সে পানি কোনো কাজে ব্যবহারে করা যায় না। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে পাথরঘাটা উপজেলায় ৮৬টি টিউবওয়েল, ৬৮টি সোলার পিএসএফসহ ৪৫২০টি পানির ট্যাংক ২০২৫ সালের মধ্যে বিতরণ করা হবে। এ ছাড়াও ৪৮টি পুকুর খনন করা হয়েছে, তবুও পানির তীব্র সংকট উপজেলাজুড়ে।

সরেজমিনে দেখা যায়, বৈশাখের কাঠফাটা রোদে পর্যাপ্ত বিশুদ্ধ পানির নলকূপ বা ভিন্ন কোনো ব্যবস্থা না থাকায় পানি সংগ্রহ করতে বেগ পেতে হচ্ছে স্থানীয় বাসিন্দাদের। পৌরসভার ব্যবস্থাপনায় ও বেসরকারি সংগঠনের উদ্যোগে কিছু পানির ফিল্টারের ব্যবস্থা করলেও তা চাহিদার তুলনায় অনেক কম। এতে এক এলাকা থেকে আরেক এলাকায় হেঁটে হেঁটে বিশুদ্ধ খাবার পানি সংগ্রহ করেছেন অনেকে। সকাল থেকে সন্ধ্যা সব সময়ই দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে পানি নিতে ভিড় লেগে থাকে প্রত্যেকটি পানির ফিল্টারে। একদিকে চাহিদার তুলনায় পানির ফিল্টার কম, অপরদিকে কাছাকাছি পানির ব্যবস্থা না থাকায় বাড়িতে নিয়ে মেপে পানি পান করতে হয় এসব এলাকার বাসিন্দাদের।

পাথরঘাটার পদ্মা নামক এলাকায় সিসিডিবির নির্মিত একটি মাত্র ফিল্টারের পানিতে চাহিদা মেটে ওই এলাকার কয়েক হাজার মানুষের। ফিল্টার থেকে পানি নিতে আসা রাব্বি বলেন, আমাদের এলাকায় নলকূপ বসানো যায় না। যদি কেউ বসায় তাহলে তা দিয়ে লবণ পানি ওঠে, খাওয়া যায় না। এই পদ্মা এলাকার বাইর চরে অনেকগুলো পরিবারের পানির জন্য মাত্র একটি ফিল্টার। এর সঙ্গে সংযোগ দেওয়া পুকুরটিও ছোট হওয়ায় শুকনো মৌসুমে পানি শুকিয়ে গেলে আর পানি পাওয়া যায় না।

পদ্মা গ্রামের বাসিন্দা নুর আলম বলেন, আমাদের এলাকায় কোনো টিউবওয়েল বসানো যায় না। তারপরও যা আছে তা দিয়ে লবণ পানি ওঠে। দীর্ঘদিন বৃষ্টির পানিও ধরে রাখা যায় না, পানি নষ্ট হয়ে যায়। এসব পানি খেলে বিভিন্ন রোগ দেখা দেয়। বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধরা ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে পড়ে। 

রূহিতা গ্রামের দুলাল বলেন, আমরা ৩০ ফুটের নিচে টিউবওয়েল বসাতে পারি না। এর নিচে বসাতে গেলে পাথর আটকে যায়। এ কারণে টিউবওয়েল বসালেও ভালো পানি পাওয়া যায় না। বাধ্য হয়ে পুকুর কেটে, বৃষ্টির পানি ড্রাম ও কলসিতে ভরে রেখে আমরা ব্যবহার করি। এ ছাড়া বিভিন্ন এনজিও থেকে যেসব পানির ফিল্টার দেওয়া হয় তা কিছুদিন পরে নষ্ট হয়ে যায়। পরে আর কেউ তা ঠিক করতেও আসে না। পানির ভোগান্তি আমাদের থেকেই যায়।

স্থানীয় গবেষক শফিকুল ইসলাম খোকন বলেন, উপকূলের মানুষের পানির দুঃখ বারো মাস। প্রকৃতিগতভাবেই এখানে পানি আছে ঠিকই কিন্তু সুপেয় পানি নেই, তাই বিকল্প পদ্ধতি গ্রহণ করতে হবে। সরকারি এবং বেসরকারিভাবে পানি সংরক্ষণের জন্য ট্যাংক দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি বিশেষ করে যেহেতু বিষখালী এবং বলেশ্বর নদ রয়েছে তাই পুকুর, খাল ও নদী থেকে ভূ-উপরস্থ পানি পরিশোধনাগারের মাধ্যমে রিফাইন করে সরবরাহ করলে এ সংকট স্থায়ীভাবে দূর করা সম্ভব। এ ক্ষেত্রে সরকারের নতুন নতুন পরিকল্পনা নেওয়া উচিত।

বরগুনা জেলা জনস্বাস্থ্য নির্বাহী প্রকৌশলী রাইসুল ইসলাম বলেন, বরগুনার ৬টি উপজেলার মধ্যে পাথরঘাটার ভৌগোলিক অবস্থা ভিন্ন। এখানকার বিভিন্ন ইউনিয়নসহ পাথরঘাটা সদরেও গভীর নলকূপ বসানো যায় না। আমরা পরীক্ষামূলক কিছু নলকূপ বসিয়েছি তবে দেখা গেছে ১২শ থেকে ১৩শ ফুট গভীরে যাওয়ার পরেও পানির ভালো স্তর পাওয়া যায়নি। এ কারণে এসব উপকূলীয় এলাকায় বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করে ব্যবহার করার ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। তবে এগুলো পর্যাপ্ত না হওয়ায় পুকুর খনন করে পানি বিশুদ্ধ করে ব্যবহারের পাশাপাশি সারফেস ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট ব্যবস্থা করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হচ্ছে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে পাথরঘাটায় সুপেয় পানির দীর্ঘদিনের সমস্যা দূর করা সম্ভব হবে।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা